কাজিরবাজার ডেস্ক :
আজ ১৫ রমজানুল মোবারক। সিয়াম সাধনার মাসের পক্ষকাল শেষ হয়ে যাচ্ছে। এ মাস ভাল বিষয়সমূহে অনুশীলন ও অভ্যস্ত হয়ে ওঠার, যা নিজের জন্য ও অন্যের জন্য উপকার নিয়ে আসবে। ইসলাম নির্দেশিত ভাল বিষয়গুলো আমরা রপ্ত করি না বলে বিশ্ব আজ করোনায় বিপর্যস্ত। ইসলাম বিজ্ঞানময় ধর্ম। পরিচ্ছন্ন ধর্ম। মানুষের সব আরোগ্য নিহিত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার মধ্যে। আজ প্রসঙ্গত আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখব পাক পবিত্রতার বিষয়ে। পবিত্রতা একজন মানুষের জন্য উত্তম ও উৎকৃষ্ট অবস্থা আর অপবিত্রতা নিকৃষ্ট ও ঘৃণিত অবস্থা। মানুষের কর্তব্য ও বৈশিষ্ট্যই হলো সর্বদা নিকৃষ্টতা পরিহার করে সাধ্যমতো উত্তম ও উৎকৃষ্ট অবস্থায় থাকা। যারা ভালভাবে পবিত্রতা অর্জন করেন, পবিত্র থাকেন আল্লাহ তাদের প্রশংসা করেন। পরিষ্কার, পরিপাটি, নির্মল অবস্থাকে বলে পরিচ্ছন্নতা। আর বিশেষ পদ্ধতিতে অর্জিত দেহ, মন, পোশাক ও স্থান বা পরিবেশের পরিচ্ছন্নতা ও নির্মলতাকে বলে তাহারাত বা পবিত্রতা।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত সালাত আদায় করার জন্য শরীর, পোশাক ও স্থান তথা পরিবেশ পবিত্র হওয়া অপরিহার্য। পরিচ্ছন্নতা বা পবিত্রতা ইমানের অঙ্গ। আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতাকে ভালবাসেন।
আমরা নানা রকম কাজ করি- আমাদের হাত, পা, শরীর ও কাপড় চোপড় ময়লা হয়, ধুলাবালি লাগে। ঘামে শরীর ভিজে যায়, দুর্গন্ধ হয়। আমরা মুখ দিয়ে খাবার খাই, দাঁতে ময়লা লাগে। দাঁত, মুখ পরিষ্কার না করলে মুখ থেকে দুর্গন্ধ আসে। অকালে দাঁত পড়ে যায়। দাঁত পরিষ্কার রাখার জন্য ওজু করার আগে দাঁত মাজতে হয়, মেসওয়াক করতে হয়।’
অনেকের নখ, চুল বড় হয়। দেখতে খারাপ লাগে। নখ বড় হলে নখে নানা রকম ময়লা জমে, তা খাবারের সঙ্গে পেটে যায় এবং পেটের অসুখ হয়। নখ কেটে ছোট ও পরিষ্কার রাখতে হবে। জুমার দিন নখ কর্তন করা মুস্তাহাব। হামিদ ইবনে আবদুর রহমান স্বীয় পিতা হতে বর্ণনা করেন যে, হুজুরে পাক (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন নখ কাটে, সে সুস্থ থাকে। অসুস্থ থাকলে সুস্থ হয়। বৃহস্পতিবার আছরের পরেও নখ কর্তন করার প্রতি ধর্মীয় পর্যায়ে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে।
হুজুর পাক (স.) এরশাদ করেছেন, হে আয়েশা! তুমি নখ কাটবারকালে প্রথমে মধ্যমা, তারপর কনিষ্ঠা, তারপর অনামিকা এবং সর্বশেষ তর্জনীর নখ কাটবে। নখ কাঁচি অথবা চাকু দ্বারা কাটবে। দাঁত দ্বারা নখ কাটা মাকরূহ। বর্ণিত আছে, হুজুরে পাক (স.) নখ কাটার পর উহা মাটি চাপা দিয়ে রাখার হুকুম দিয়েছেন। নখ কাটার পর আঙ্গুলের মাথা ধুয়ে ফেলবে।-(গুনিয়াতুত ত্বালেবীন)।
চুলও ঠিক করে রাখতে হবে। মহানবী (স.) একবার একটি লোককে এলোমেলো চুল দেখে বললেন, এ ব্যক্তি কি চুল ঠিক করার কিছু পেল না? অনেকে শৌচাগার হতে এসে ভালভাবে পরিষ্কার হয় না। শরীর ময়লা, নোংরা থাকলে নানা রকম রোগ হয়। পায়খানা প্র¯্রাবের পর ভালভাবে হাত পরিষ্কার হতে হবে। দিনে একবার গোসল এবং পাঁচবার ওজু করার মাধ্যমে দেহ পরিচ্ছন্ন হয়, পবিত্র হয়, মন ভাল থাকে, ফুর্তি লাগে ও কাজকর্মে উৎসাহ আসে।
হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স) এরশাদ করেছেনÑ যখন কোন মু’মিন অথবা মুসলিম বান্দা ওজু করে এবং চেহারা ধোয়, (তার চেহারা থেকে) তার চোখের দ্বারা কৃত সব গুনাহ পানির সঙ্গে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সঙ্গে দূর হয়ে যায়। যখন সে তার হাত ধোয়, তার দু’হাতে কৃত সমস্ত গুনাহ তার হাত থেকে পানির সঙ্গে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সঙ্গে দূর হয়ে যায়। অতঃপর সে ব্যক্তি সমস্ত গুনাহ থেকে পাক হয়ে যায়-(মুসলিম)।
আমরা নানা ধরনের কাজকর্ম করি। আমাদের কাপড় চোপড় ময়লা হয়। ময়লা কাপড় চোপড় পরলে শরীর খারাপ হয়। নানারকম রোগ হয়। মন ভাল লাগে না। পোশাক পরিচ্ছন্ন রাখার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহপাক বলেন: ‘তোমার কাপড় পবিত্র পরিচ্ছন্ন রাখ’। মহানবী (স.) সবসময় পবিত্র কাপড় পরতেন। শরীর পরিষ্কার রাখার মতোই কাপড় চোপড় পরিষ্কার রাখার গুরুত্ব অপরিসীম। অপবিত্র শরীরে যেমন সালাত আদায় করা যায় না, তেমনি অপবিত্র পোশাকেও সালাত আদায় করা যায় না। কেননা হুজুর (স.) বলেছেন: পবিত্রতা অর্জন করা নামাজের চাবি।-(তিরমিযী)।
আমরা অনেক সময় ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট খেলার মাঠ ইত্যাদি নোংরা রাখি, অপরিচ্ছন্ন রাখি। যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলি, মলমূত্র ত্যাগ করি। এতে আমাদের পরিবেশ নোংরা হয়, নষ্ট হয়। নোংরা পরিবেশ রোগব্যাধির আধার। আমাদের জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠে। সালাত শুদ্ধ হওয়ার জন্য শরীর ও পোশাকের মতো জায়গা বা পরিবেশও পবিত্র হওয়া একান্ত অপরিহার্য।
পরিবেশ পরিষ্কার না থাকলে শরীর ও পোশাক পরিচ্ছন্ন রাখা যায় না। আমাদের রাস্তা-ঘাট, যানবাহন, বাস স্টেশন, রেল স্টেশন, ফেরিঘাট ইত্যাদি জনাকীর্ণ স্থানগুলো এমন নোংরা থাকে যে ভাবতেও অবাক লাগে। পরিবেশ সম্বন্ধে সচেতন হলে আমরা অনেক রোগব্যাধি থেকে রেহাই পেতে পারি। আজকে চিকিৎসা বিজ্ঞান এ বিষয়গুলো বারবার জোর দিয়ে আমাদের আঙ্গুলি ইশারা করছে।