কাজিরবাজার ডেস্ক :
দক্ষিণ এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানে প্রায় প্রতিদিনই করোনা শনাক্ত রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়ে যাচ্ছে আগের দিনকে। তবুও দেশ দুটি রমজান উপলক্ষে লকডাউন শিথিল করেছে। ইতোমধ্যে ভারতে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা তিন হাজারের বেশি হয়েছে। অন্যদিকে পাকিস্তানে আক্রান্ত বেড়েছে এক হাজার ১৯৩ জন। এছাড়া সৌদিতে নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১৭৯৩ জন। করোনায় এবার পেরুর কৃষিমন্ত্রী আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রে একদিনে দুই হাজার ৪৪৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৩৯ লাখ ৪০ হাজার ৮৩০ জন। মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে দুই লাখ ৭১ হাজার ৪৯৭ জনে। সুস্থ হওয়ার সংখ্যাও বেড়েছে। সুস্থ হয়ে এখন পর্যন্ত বাড়ি ফিরেছেন ১৩ লাখ ৫৬ হাজার ৯৫৭ জন।
মহামারী করোনা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে ॥ পড়ার শুরুতে দক্ষিণ এশিয়ার পরিস্থিতি ভালই ছিল। কিন্তু বাংলাদেশের পাশাপাশি এ অঞ্চলের বড় দুই দেশে এখন দ্রুত পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। ভারতে এরই মধ্যে শনাক্ত হওয়া সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা অর্ধ লক্ষ ছাড়িয়েছে। পাকিস্তানেও রোগী শনাক্ত হয়েছেন ২৪ হাজারের বেশি। বিশ্বজুড়ে শনাক্ত হওয়া করোনা সংক্রমিত রোগীর মধ্যে প্রায় এক লাখ দক্ষিণ এশিয়ার। এই রোগীদের অর্ধেকের বেশিই ভারতে শনাক্ত হয়েছেন। এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশে এখন করোনা ছড়িয়ে পড়েছে ব্যাপক হারে। লাতিন আমেরিকায়ও রোগটি ছড়াচ্ছে। ইউরোপের অবস্থা ভালর দিকে হলেও স্পেন ও ব্রিটেনে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিদিন মৃত্যুর সঙ্গে আক্রান্তের সংখ্যা পাল্লা দিয়ে বাড়ছে।
যুক্তরাষ্ট্রে আরও ২৪৪৮ মৃত্যু ॥ প্রথম দিকে মহামারীকে খুব একটা গুরুত্ব না দেয়ায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকারকে এখন কোভিড-১৯ মোকাবেলায় হিমশিম খেতে হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় যুক্তরাষ্ট্রে আরও দুই হাজার ৪৪৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। আবার একদিনেই আক্রান্ত হয়েছেন ২৮ হাজার ৪২০ জন। শুক্রবার পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ৯২ হাজার ৮৭৯ জন; আর মৃত্যু হয়েছে ৭৬ হাজার ৯৪২ জনের। সুস্থ হয়ে উঠেছেন দুই লাখ ১৭ হাজার ২৫১ জন। আর মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নয় লাখ ৯৪ হাজার ৬৮৬ জন। যাদের মধ্যে ১৬ হাজার ৯৯৫ জন আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছেন। নিউইয়র্কে সবচেয়ে বেশি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সেখানে আক্রান্ত তিন লাখ ৩৩ হাজার ৪৯১ জন এবং মারা গেছেন ২৫ হাজার ৯৫৬ জন। নিউজার্সিতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ৩৩ হাজার ৫৯ এবং মারা গেছেন আট হাজার ৫৭২ জন। ম্যাসাচুসেটসে আক্রান্ত ৭২ হাজার ২৫ জন এবং মৃত্যু চার হাজার ৪২০ জনের। ইলিনয়েসে আক্রান্ত ৬৮ হাজার ২৩২ এবং মারা গেছেন দুই হাজার ৯৭৪ জন। ক্যালিফোর্নিয়ায় আক্রান্ত ৬০ হাজার ৫৯৫ এবং মৃত্যু দুই হাজার ৪৬০ জনের।
ভারতে আরও ১০৩ মৃত্যু ॥ ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৩ হাজার ৩৯০ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। একদিনেই মারা গেছেন আরও ১০৩ জন। এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫৬ হাজার ৫১৬ জনের বেশি মানুষ এবং মারা গেছে এক হাজার ৮৯৫ জন। বর্তমানে করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছে ২৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ মানুষ। রেকর্ডসংখ্যক মানুষ সুস্থও হয়েছেন। একদিনে এক হাজার ২৭৩ জন করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন। চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন মোট ১৬ হাজার ৫৪০ জন। রাজধানী নয়াদিল্লীতে নতুন করে আরও ৪৪৮ জন করোনায় আক্রান্ত হলেও কেউ মারা যায়নি। দিল্লীতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন মোট পাঁচ হাজার ৯৮০ জন এবং মারা গেছেন ৬৬ জন। ভারতে করোনায় আক্রান্তে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে দিল্লী। সেখানে ৩২ দশমিক ৩৯ শতাংশ মানুষ সুস্থ হয়ে উঠেছেন। করোনায় সবচেয়ে বিপর্যস্ত মহারাষ্ট্র। আক্রান্ত হয়েছেন ১৭ হাজার ৯৭৪ জন এবং মারা গেছেন ৬৯৪ জন। মুম্বাইয়ে আক্রান্তের সংখ্যা ১১ হাজার ২১৯ এবং মৃত্যু ৪৩৭, গুজরাটে আক্রান্তের সংখ্যা সাত হাজার ১২ এবং মৃত্যু হয়েছে ৪২৫ জনের।
পাকিস্তানে আরও ১৪ মৃত্যু ॥ পাকিস্তান সরকার জানিয়েছে, শনাক্ত হওয়া সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ২৬ হাজার ৪৩৫ ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছেন ৫৮৫ জন। শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ১৪ জন মারা গেছেন। আক্রান্ত এক হাজার ২৮৮ জন। আগের ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড সর্বোচ্চ এক হাজার ৫৯৯ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। মারাও গেছেন অর্ধশতাধিক। সাত হাজার ৫৩০ জন সুস্থ হয়েছেন। ওয়ার্ল্ডোমিটারের মতে, পাকিস্তানে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২৫ হাজার ৮৩৭। মারা গেছেন ৫৯৪ জন। সুস্থ হয়েছেন সাত হাজার ৫৩০। এ্যাক্সিভ কেস রয়েছে ১৭ হাজার ৭১৩ জনের। যাদের মধ্যে ১১১ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। শুধু শুক্রবার নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ১৯৩ জন। মারা গেছেন ৯ জন।
জাপানে মৃত্যু বেড়ে ৫৭৭ ॥ জাপান সরকার নিশ্চিত করেছে, করোনায় আক্রান্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা ১৫ হাজার ৫৯২ জন হয়েছে। মারা গেছেন ৫৮৪ জন। সুস্থ হয়েছেন পাঁচ হাজার ৯৬১ জন। এ্যাক্টিভ কেস রয়েছে আট হাজার ৯৪৭ জনের। এক লাখ ৯০ হাজার ৩০ জনের করোনা পরীক্ষা হয়েছে। ৩৮ শতাংশ মানুষ সুস্থ হয়ে উঠেছেন। মারা যাচ্ছেন মাত্র তিন শতাংশ। তিন শতাংশের অবস্থা আশঙ্কাজনক। পরীক্ষা করা মানুষদের মধ্যে আট শতাংশের রিপোর্ট পজিটিভ হচ্ছে। করোনা নিয়ে সার্বক্ষণিক তথ্য সরবরাহ করছে ওয়ার্ল্ডোমিটার ডট ইনফো। ওয়েবসাইটির মতে, জাপানে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৫ হাজার ৪৭৭ জন। মারা গেছেন ৫৭৭ জন। সুস্থ হয়েছেন চার হাজার ৯১৮ জন। নয় হাজার ৯৮২ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। যাদের মধ্যে ৩০৮ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
সৌদিতে আরও ১০ মৃত্যু ॥ সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছেন এক হাজার ৭৯৩ জন। এ নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৩৩ হাজার ৭৩১ জন। এছাড়া ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২১৯ জনে। আর ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ১০১৫ জন। জানা গেছে, আক্রান্ত অঞ্চলগুলোর মধ্যে মদিনা মুনাওয়ারায় সর্বোচ্চ ৩৯৬ জন। জেদ্দায় ৩১৫ জন, মক্কা মুকাররমায় ২৫৪ জন, রিয়াদে ১৯৪ জন ও দাম্মামে ১৭১ জন।
পেরুর কৃষিমন্ত্রী করোনা আক্রান্ত ॥ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধানসহ মন্ত্রিসভার সদস্যদের মহামারী করোনায় আক্রান্তের ঘটনা বেড়েই চলেছে। সবশেষ লাতিন আমেরিকার দেশ পেরুর কৃষিমন্ত্রী জোর্গে মন্টিনিগ্রো করোনায় আক্রান্ত হলেন। করোনার উপসর্গ দেখা দিলে বুধবার করোনা পরীক্ষা করান জোর্গে। সেই পরীক্ষায় তিনি করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হলে ব্যক্তিগত চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে আইসোলেশন করে রাখা হয়েছে। আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী করোনা সংক্রান্ত বিধিনিষেধ মেনে চলে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন তিনি। প্রতিবেদন অনুযায়ী, কৃষিমন্ত্রী সম্প্রতি খাবারের বাজার এবং ব্যবসায়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকদের জন্য তৈরি কোভিড-১৯ পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। করোনা সংক্রমণে লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে পেরুর অবস্থান দ্বিতীয়। ব্রাজিলের পর দেশটিতে সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ৫৪ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছেন। জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়া হিসাব অনুযায়ী, পেরুতে করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে এক হাজার ৬২৭ জনের বেশি মানুষ মারা গেছেন। আক্রান্ত হয়েছেন ৫৮ হাজার ৫২৫ জন।
সুইডেনে মৃত্যু ৩ হাজার ছাড়াল ॥ নভেল করোনাভাইরাস অতি সংক্রামক। মানুষের সংস্পর্শে আসার মাধ্যমে এর দ্রুত ও ব্যাপক বিস্তার ঘটে। তাই বিশ্বজুড়ে প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে লকডাউন রয়েছে ৩০০ কোটিরও বেশি মানুষ। অথচ এর ব্যতিক্রম ইউরোপের সুইডেনে কখনই লকডাউন ঘোষণা করা হয়নি। এ কারণে প্রথম দিকে অনেকে করোনা প্রতিরোধে সুইডেনের সাফল্যের গুণগান শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু সেই সাফল্য প্রাণহানিতে চাপা পড়েছে। কেননা দেশটির পাবলিক হেলথ এজেন্সি বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, সুইডেনে মহামারী করোনায় প্রাণ হারানো মানুষের সংখ্যা এখন তিন হাজার ৪০ জন। প্রাদুর্ভাব শুরুর পর ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় সংক্রমণ অতটা ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়েনি। যদিও দেশটির লোকসংখ্যা কম অনেক কম তা সত্ত্বেও সুইডেনে করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ২৪ হাজার ৬২৩ জন। প্রতিনিয়ত এ সংখ্যা বাড়তে থাকায় উদ্বেগ বেড়েছে দেশটিতে।
স্পেনে আরও ২২৯ মৃত্যু ॥ চতুর্থ দফা লকডাউন বাড়ানোর পরও স্পেনে গত ২৪ ঘণ্টায় ২২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে তিন হাজার ২৬২ জন। এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন দুই লাখ ১১৭ জন। মারা গেছেন ২৬ হাজার ২৯৯ জন। এক লাখ ৬৮ হাজার ৪০৮ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। ৬৫ হাজার ৪১০ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। যাদের মধ্যে দুই হাজার ৭৫ জনের অবস্থা আশঙ্কা জনক।
একদিনের বৈশ্বিক পরিস্থিতি ॥ বিশ্বে শুক্রবার দিনের শুরুতে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২৭ হাজার ১৮৬ জন। মারা গেছেন এক হাজার ৭১ জন। এ্যাক্টিভ কেস রয়েছে ২৩ লাখ ১৩ হাজার ১৬৯ জনের। আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছেন ৪৮ হাজার ৯১৩ জন। ইউরোপের দেশ রাশিয়া এখন করোনার আঁতুরঘর হয়ে উঠেছে। সেখানে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে দশ হাজার ৬৯৯ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন আরও ৯৮ জন। ব্রাজিলে ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত ৮২৬ জন। মারা গেছেন ৭৭ জন। ইরানে একদিনে আক্রান্ত এক হাজার ৫৫৬ জন। মারা গেছেন আরও ৫৫ জন। বেলজিয়ামে আক্রান্ত ৫৯১ জন। মারা গেছেন ১০৬। হল্যান্ডে আক্রান্ত ৩২১, মারা গেছেন ৭১; মেক্সিকোতে এক হাজার ৯৮২ আক্রান্ত, মৃত ২৫৭।