হাসান মাসুদ
ঘরের বারান্দায় কাঠের বাক্স থেকে একজোড়া কবুতর ফরফর করে উড়ে এলো উঠোনের জামগাছতলায়। দুটো খড় ঠোঁটে নিয়ে উড়তে চাচ্ছে কিন্তু পারছে না। পড়ে যাচ্ছে বারবার। একটু দূরে মোশাররফ অবাক হয়ে দেখছিল। পারছেনা কেন? কি হয়েছে? একটু ভেবে মোশাররফ কাছে যায় কবুতরের। একটাকে খপ করে ধরে ফেলে। সাধারণ খপ করে ধরার সময় পাখি উড়াল দেয়। কিন্তু এখন উড়াল দিলনা কেন? পালকের ভেতর হাত দিয়ে বুঝতে পারল বেশ গরম কবুতরের শরীর। একেবারে গা পুড়ে যাচ্ছে। ইশ! এতো জ্বর…
কবুতরটাকে নিয়ে মোশাররফ একদৌঁড়ে গেল ঘরে। বলল, মা- মা
কবুতরের শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। এখন কি হবে মা? কিভাবে জ্বর হলো? কেন জ্বর হলো মা?
মোশাররফের মা পাটায় মরিচ বাটছিল। মোশাররফের কথাগুলো খেয়ালে নেয়নি। তাই কোন জবাবও দিলনা। মোশাররফ কবুতরটিকে
মাথায় হাত ভুলিয়ে দিচ্ছে। পাশে গøাসভর্তি পানি থেকে একচুল করে আঙুলের ডগায় নিয়ে কবুতরের মাথায় দিচ্ছে আর ঠোঁটে দিচ্ছে। মাঝে মাঝে মন খারাপের মত ইনিয়েবিনিয়ে কথা-কান্না করছে। তবুও মা কোন সাড়াশব্দ করলোনা। মায়ের গুরুত্বহীনতার দুঃখ মোশাররফকে আরও পেয়ে বসলো। শেষমেষ মন খারাপ করে ওখান থেকে চলে গেল।
পরদিন সকালে মোশাররফ কবুতরটিকে তার বাবাকে দেখাল। বাবা তেমন কোন সায় দিলনা। বড় ভাই মামুনকে দেখাল, সেও অপ্রিয় অগ্রহ দেখাল। মেঝ ভাবী আমিনা মোশাররফকে বেশ বুঝতে চেষ্টা করে, কিন্তু তারও অনাগ্রহ দেখে মোশাররফ একেবারেই ভেঙে পড়ল। গেল কয়েকদিন যাবত মোশাররফ ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করছেনা। সব সময় কেবল কবুতরটিকে নিয়ে বসে থাকে। মাথার ওপর জলপট্টি দেয় আর ভাবতে থাকে। ক্ষণে ক্ষণে কান্নাও করে। এভাবে মোশাররফের শরীর অসুস্থ হয়ে আসে। বিছানায় শুয়ে থাকে। বিছানায় শুয়ে থেকেই কবুতরের সেবা শুশ্রূষা করে।
একদিন সকাল বেলায় বিছানার উপর একটা বিষয় লক্ষ্য করে মোশাররফের মা। মোশাররফ ঘুমিয়ে আছে ঠিকই কিন্তু কবুতরটি নেই।
কোথায় গেল কবুতরটা? এখানেই তো ছিল! ছেলেটা ঘুম থেকে জেগে যদি কবুতর না দেখে তাহলে ভীষণ কান্না করবে। বাইরে খোঁজ নিতে গিয়ে দেখে কবুতরটা উঠোনের পূবের কোণ থেকে খড় খোঁটে আনছে। উড়াল দিচ্ছে। মা চমকিত আনন্দে দৌঁড়ে গিয়ে মোশাররফকে ঘুম থেকে জাগায়। কবুতরের শরীর সুস্থতার কথা জানায়। মোশাররফ শুনে খুশিতে আপ্লুত হয়ে যায়। দৌঁড়ে বাইরে আসে। দেখে কবুতরটা খড় ঠোঁটে উড়ে যাচ্ছে। মোশাররফ প্রাণ খুলে হাসতে থাকে। আর সেই হাসির রেসগুলো সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়ে।