কাজিরবাজার ডেস্ক :
মুসল্লিদের ঘরে নামাজ পড়তে গত ৬ এপ্রিল জারি করা সরকারি নির্দেশনা এখনও বহাল থাকায় আসন্ন রমজানে তারাবি নামাজ নিয়ে নতুন কোনও নির্দেশনা আসেনি। তবে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। তারপরই তারাবির নামাজ পড়া নিয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে সরকার। সেই সিদ্ধান্ত আসবে রমজানের কয়েকদিন আগে। দেশের দায়িত্বশীল আলেমরা বলছেন, চাঁদ দেখা সাপেক্ষা রমজান মাস শুরু হবে চলতি এপ্রিলের ২৫ তারিখে। ওই সময়ের মধ্যে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে নিজ নিজ ঘরেই তারাবি নামাজ আদায় করতে হবে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব বিষয় জানা গেছে।
জানতে চাইলে শোলাকিয়া ঈদগাহের খতিব মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ বলেন, ‘দোয়া করি আল্লাহপাক রমজানের আগেই এই করোনাভাইরাসের বিপদ থেকে সারা মানবজাতিকে যেন রক্ষা করেন, পরিস্থিতি যেন স্বাভাবিক করে দেন। কারণ, সারা বছরে মাত্র একটি মাস রমজান। তবে কথা হচ্ছে, রমজানে রোজার মসজিদে জমায়েত হওয়া বা মসজিদে আসার কোনও সম্পর্ক নেই। রোজা, ইফতার, সেহেরি সব তো ঘরেই হবে। তারাবির নামাজ মৌলিকভাবে মসজিদের চেয়ে ঘরে পড়লে সওয়াব বেশি। আমরা কোরান শরীফ খতমের জন্য মসজিদে জামাতে পড়ি, সবাই তো আর হাফিজ না। তাই, রমজানের ইবাদত হিসেবে কোনও অসুবিধা হবে না। কেবল এতেকাফের সঙ্গে মসজিদের সম্পর্ক, এছাড়া কোনও কিছুর সঙ্গে মসজিদের সম্পর্ক নাই।’
ধর্মীয় দিক থেকে বিষয়টি আরও ব্যাখ্যা করে দেশের খ্যাতনামা এই ইসলামী বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘এতেকাফ হচ্ছে সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ, ফরজ না। এটা যদি মুয়াজ্জিন সাহেবও করেন তাহলেও আদায় হয়ে যাবে। আর তারাবির নামাজ মসজিদে পড়তে হবে এমন কথা নেই। আল্লাহওয়ালারা এশার নামাজ পড়ে বাসায় গিয়ে তারাবি পড়েছেন।’
বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, রাজধানীর মুহাম্মদপুর জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়ার প্রিন্সিপাল মুফতি মাহফুযূল হক বলেন, ‘আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করছি, তিনি যেন রমজানের আগেই যেন পরিবেশ ঠিক করে দেন। আমাদের আকুতি হচ্ছে, রমজানে তৃপ্তির সঙ্গে মুসলমানরা যেন তারাবি নামাজ আদায় করতে পারেন। কিন্তু যদি পরিস্থিতি যদি উন্নতি না হয়, এ অবস্থাই থাকে বা আরও অবনতি ঘটে, তাহলে সেক্ষেত্রে পরিস্থিতির আলোকে সবার জন্য যা কল্যাণকর সেটাই করতে হবে।’
উল্লেখ্য, গত শনিবার সৌদি আরবের ইসলাম বিষয়ক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ আল-শেখ জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব অব্যাহত থাকলে আসন্ন রমজানে সৌদি আরবের মসজিদে তারাবি নামাজের জামাত হবে না।
মাওলানা মাহফুযূল হক অবশ্য সৌদি আরবের সিদ্ধান্তকে তাড়াহুড়ো করে নেওয়া হয়েছে বলে মনে করেন। তিনি বলেন, ‘ঘোষণা দেওয়ার জন্য সৌদি আরব আরও অপেক্ষা করতে পারতো। আল্লাহতায়ালার কুদরত কতটা শক্তিশালী, চাইলে তিনি অল্প সময়ের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে পারেন বলে একজন মুসলমান হিসেবে মনে করি। ফলে, এত আগে থেকেই ঘোষণা দেওয়ার আগে আরও একটু অপেক্ষা করা হলে ভালো হতো। সেক্ষেত্রে আমরা আশা করবো, আমাদের সরকার যেন এত আগেই ঘোষণা না দেন। আরও একটু অপেক্ষা করেন।’
ইসলামিক ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা গেছে, রমজান মাসে তারাবির নামাজ আদায়, ইফতার, ইতেক্বাফ ও সেহেরি কিভাবে করা যাবে, এ নিয়ে আলেমদের সঙ্গে পরামর্শ সভা ডাকা হবে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই এ বিষয়টি সুরাহা হবে।
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের ইমাম মাওলানা মিজানুর রহমান সোমবার দুপুরে বলেন, ‘রমজান মাসে তারাবির নামাজসহ বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আলোচনা চলছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগেই এ নিয়ে আগামী দুয়েকদিনের মধ্যে পরামর্শ সভা হবে।’
উল্লেখ্য, গত ৬ এপ্রিল মুসল্লিদের ঘরে নামাজ পড়ার নির্দেশ দেয় সরকার। ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা জরুরি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শুধু মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন, খাদেমরা মসজিদে নামাজ আদায় করবেন। একইসঙ্গে মন্দির, গির্জা, প্যাগোডাসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে প্রার্থনা না করার নির্দেশ দেয় ধর্ম মন্ত্রণালয়।
মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ বলেন, ‘সরকার রমজান মাসে করণীয় নিয়েও নিশ্চয়ই আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানাবে। সেক্ষেত্রে আলেমদের সঙ্গে পরামর্শের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত আসবে বলে আশা করছি।’
জানতে চাইলে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ড. আনিস মাহমুদ বলেন, ‘সরকার যে নির্দেশনা দিয়েছিল তা এখনও বহাল আছে। ফলে, এখনই নতুন করে আমরা সিদ্ধান্ত নিচ্ছি না। আরও দুয়েকটা দিন পর এ ব্যাপারে কিছু বলবো। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে পাঁচজন, জুম্মার নামাজে দশজন, এই নির্দেশনা এখনও বহাল আছে। আর সামাজিক দূরত্ব রাখার বিষয়ে সরকারি নীতিমালা আছে, সেকারণে নতুন কিছু এখন করবো না। হয়তো রমজানের কিছু আগে নতুন কোনও প্রচারে আমরা যেতে পারি।’
ইফাবা সূত্র জানায়, প্রতি বছরই রমজানে কোরান খতম নিয়ে জাতীয় পরামর্শ দিয়ে আসছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। এ বছরও সে আলোকে পরামর্শ আসবে। এছাড়া রমজানের অন্যান্য অনুষঙ্গ ইফতার, সেহেরি, সেহেরি ও তারাবির নামাজ নিয়েও নির্দেশনা দেবে ইফাবা।