দেশে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত শনাক্ত হওয়ার পর জনমনে যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছিল, তা সহজে দূর হবে না। যদিও গতকাল এসেছে সুখবর। নিয়মিত ব্রিফিংয়ে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট জানিয়েছে আক্রান্ত তিনজনের মধ্যে দুজন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। দেশে নতুন করে কারো মধ্যে কভিড-১৯ ধরা পড়েনি। কিন্তু করোনা ভাইরাস আক্রান্ত শনাক্ত হওয়ার পর থেকে মাস্ক ও স্যানিটাইজার নিয়ে যে অরাজকতা শুরু হয়েছিল, তা থেমে নেই। মাস্ক ও স্যানিটাইজারের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন, নিরাপদ খাদ্য কর্তপক্ষ এবং র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা শুরু করলেও হঠাৎ চাহিদা বেড়ে যাওয়ার পর থেকে এই দুই পণ্য বেশি দামে বিক্রি করছেন দোকানিরা। পাঁচ টাকার সার্জিক্যাল মাস্ক ৫০ টাকায় এবং একটু ভালো মানের মাস্ক ১৮০ টাকায় বিক্রির খবর এসেছে গণমাধ্যমে।
শুধু চিকিৎসক নয়, সবার জন্যই করোনাভাইরাস নতুন অভিজ্ঞতা। এ রোগের কোনো প্রতিষেধক এখন পর্যন্ত নেই। বিশেষজ্ঞরাও জোর দিচ্ছেন প্রতিরোধে। তাঁরা বলছেন, সবাই সচেতন থাকলে ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকার ক্ষেত্রে অনেক উপকার হতে পারে। অন্যদিকে চিকিৎসাসেবার বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সারা দেশের হাসপাতালগুলো প্রস্তুত। আসলে কতটা প্রস্তুত রাজধানী থেকে শুরু করে বিভাগ, জেলা ও তৃণমূল পর্যায়ের হাসপাতালগুলো? এখনো পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে উঠেনি মাঠপর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলো। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুসারে স্থানীয় কর্মকর্তারা সাধ্যমতো প্রস্তুতি নিয়েছেন আলাদা বেড-ইউনিট সংরক্ষণ করার জন্য। প্রস্তুত রাখা হয়েছে স্বাস্থ্যকর্মীদেরও। তবে সংকট রয়েছে চিকিৎসা উপকরণের। ঢাকার বাইরে যাদের নিবিড় পর্যবেক্ষণকেন্দ্র বা আইসিইউ দরকার হবে তাদের রাখার মতো ব্যবস্থা নেই বেশির ভাগ জেলার সরকারি হাসপাতালেই। এসব ক্ষেত্রে সেখানে বড় উপকরণ বলতে আছে শুধুই অক্সিজেন আর নেব্যুলাইজার। ভেন্টিলেটরও নেই কোথাও কোথাও। মাঠপর্যায়ের হাসপাতালগুলো শুধুই প্রাথমিক ধাপের করোনা আক্রান্ত রোগীদের সেবার উপযোগী করে সাজানো হচ্ছে। এর পাশাপাশি সরকারি ব্যবস্থাপনায় কোয়ারেন্টাইনের দরকার হলে বিভিন্ন এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেও চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে।
মেডিক্যাল কলেজগুলোতে আইসিইউ আছে। তবে সব আইসিইউ করোনার রোগীদের জন্য রাখা সম্ভব হবে না। ঢাকার বাইরে যেসব এলাকায় আইসিইউ সুবিধা নেই বা প্রয়োজনমতো পাওয়া যাবে না সেখানকার রোগীদের হয়তো দ্রুততম সময়ে ঢাকার বিশেষায়িত হাসপাতালে নিয়ে আসা হবে। বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা হিসেবে ব্যক্তিগত নিরাপত্তামূলক পোশাক, মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজারের মতো উপকরণগুলো যে যে এলাকা থেকে চাওয়া হয়েছে, সেখানে পাঠিয়ে দিতে হবে। বাড়তি প্রস্তুতি হিসেবে ঢাকার বাইরেই নয়, ঢাকায়ও সরকারিভাবে আইসিইউ ব্যবস্থাপনা আরো বাড়ানো দরকার।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এটিই আমাদের প্রত্যাশা।