কাজিরবাজার ডেস্ক :
চীনের মূল ভূখণ্ডে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত নতুন রোগীর সংখ্যা কিছুটা কমে এলেও এশিয়ার অন্যান্য দেশে পরিস্থিতি নতুন মোড় নেয়ায় তৈরি হয়েছে উদ্বেগ। প্রাণঘাতী এ ভাইরাস ইতোমধ্যে ছড়িয়েছে ২৯ দেশে। আর আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে ৭৭ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এর বিস্তার প্রতিরোধে চীনের পাশাপাশি অন্যান্য দেশ কঠোর ব্যবস্থা নিতে শুরু করলেও থামছে না মৃত্যুর মিছিল। খবর সিএনএন, সাউথ চায়না মরনিং পোস্ট, বিবিসি ও রয়র্টাসের। বিশ্বে এ ভাইরাসের সংক্রমণে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৩৬৯ জনে। যাদের মধ্যে ১৫ জন ছাড়া বাকি সবার মৃত্যু হয়েছে চীনে। দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার মূল ভূখণ্ডে ৩৯৭ জনের শরীরে ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। আগের দিন এই সংখ্যা ছিল ৮৮৯ জন। সব মিলিয়ে চীনে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৬ হাজার ২৮৮ জনে। আর ২৯ দেশ ও তিনটি অঞ্চল মিলিয়ে এ পর্যন্ত অন্তত ৭৭ হাজার ৭৬৭ জন আক্রান্ত হয়েছে।
শুক্রবার চীনে মোট ১০৯ জনের মৃত্যু হয়েছে নতুন এ করোনাভাইরাসে। এর মধ্যে হুবেই প্রদেশেই মারা গেছেন ১০৬ জন। এতে চীনের মূল ভূখণ্ডে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ২৩৪৫ জনে। মূল ভূখণ্ডের বাইরে এ পর্যন্ত ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে ইরানে চার, জাপানে তিন, হংকং ও দক্ষিণ কোরিয়ায় দুজন করে এবং ফিলিপিন্স, ফ্রান্স, তাইওয়ান ও ইতালিতে একজন করে আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছে।
মধ্য চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়। নিউমোনিয়ার মতো লক্ষণ নিয়ে নতুন এ রোগ ছড়াতে দেখে চীনা কর্তৃপক্ষ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে সতর্ক করে। এদিকে দক্ষিণ কোরিয়ায় একদিনেই আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে ৩৪৬ জনে দাঁড়িয়েছে। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর দায়েগু ও চেওংডোকে ‘স্পেশাল কেয়ার জোন’ ঘোষণা করা হয়েছে। আতঙ্কে দায়েগু শহরের সব রাস্তা ফাঁকা হয়ে গেছে। ওই শহরে একটি চার্চে প্রার্থনায় যোগ দেয়া ১৬৯ মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ার পর ওই সম্প্রদায়ের নয় হাজার সদস্য স্বেচ্ছায় নিজেদের ঘরে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকার এবং পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অন্যদিকে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছে দেশটির কওম শহর থেকে। সেখান থেকে মানুষের চলাচলের মধ্য দিয়ে ভাইরাস ছড়িয়ে গেছে তেহরান, বাবেল, আরাক, ইসফাহানসহ অন্য শহরে। সব মিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯ জনে। তাদের মধ্যে তেহরানের এক শহরের মেয়রও রয়েছেন বলে জানিয়েছে। কওম শহরে কাজ করা চীনা শ্রমিকদের কাছ থেকেই এ ভাইরাস ছড়িয়েছে বলে ধারণা করছেন ইরানের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। কেবল শুক্রবারই সেখানে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। ওই শহরে সব ধর্মীয় সমাবেশ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, স্থানীয়ভাবে বড় আকারে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে ধরে নিয়ে তারা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন তারা। সে রকম পরিস্থিতি দেখা দিলে স্কুল ও অফিস আদালত বন্ধ করে দেয়া হবে। দেশটির সেন্টার্স ফর ডিজিজেস কন্ট্রোল এ্যান্ড প্রিভেনশনের কর্মকর্তা ন্যান্সি মেসোনিয়ের বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে ১৬ জনের শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়লেও কমিউনিটিতে এ রোগ ছড়িয়ে পড়ার কোন প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি।
ইতালিতে দ্বিতীয় মৃত্যু : ইতালিতে নতুন করোনাভাইরাস জনিত রোগ কভিড-১৯ এ আক্রান্ত দ্বিতীয় আরেক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। মৃত নারী দেশটির লমবারদি অঞ্চলের বাসিন্দা ছিলেন। দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় শিল্প প্রধান এলাকায় ভাইরাসটির সংক্রমণ বিস্তার লাভ করে এ পর্যন্ত ৩০ জনকে আক্রান্ত করেছে।
শুক্রবার রাতে পার্শ্ববর্তী ভেনেতো অঞ্চলের পাদুয়া শহরের একটি হাসপাতালে কভিড-১৯ এ আক্রান্ত ৭৮ বছর বয়সী এক ব্যক্তি মারা যান। ছোট শহর ভোগে ইউগানিও-র এই বাসিন্দা দুই সপ্তাহ আগে পাদুয়ার হাসপাতালটিতে ভর্তি হয়েছিলেন। ইতালিতে নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা এটি। দেশটির শিল্প ও অর্থনৈতিক কেন্দ্র লমবারদিতে সবচেয়ে বেশি ২৭ জন নভেল করোনাভাইরাস নামের নতুন ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছে। বিশ্বের ফ্যাশন ডিজাইনের কেন্দ্রস্থল বলে পরিচিত ইতালির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মিলান লমবারদির প্রধান শহর। আক্রান্ত অপর তিনজন ভেনেতো অঞ্চলের বাসিন্দা।