ঋণ খেলাপের অপসংস্কৃতি থেকে বেরোতে পারছে না বাংলাদেশ। গত জানুয়ারিতে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, খেলাপি ঋণ আর এক টাকাও বাড়বে না। তাঁর কথার অসারতা প্রমাণ করেছে বাস্তব তথ্য। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী খেলাপি ঋণ আরো ১১.৯৯ শতাংশ বেড়েছে। গত ডিসেম্বরে দেওয়া হিসাব অনুযায়ী খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক লাখ ১৬ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা। এ হিসাব নিয়েও আপত্তি রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, এখন খেলাপি ঋণ মোট ঋণের ১২ শতাংশ। কিন্তু আইএমএফ বলছে, খেলাপি ঋণ মোট ঋণের ২৫ শতাংশ। অর্থাৎ বাস্তবে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দ্বিগুণেরও বেশি। অর্থনীতিবিদদের অভিমত, এ প্রবণতার কারণ জবাবদিহি নিশ্চিত করতে না পারা। এ প্রবণতা থামাতে হলে ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর হতেই হবে।
এ পরিপ্রেক্ষিতে ঋণ খেলাপিদের, বিশেষ করে স্বেচ্ছা ঋণ খেলাপিদের ওপর কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ করে নতুন ফাইন্যান্স কম্পানি আইন- ২০২০ তৈরি করা হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে নতুন আইনের চূড়ান্ত খসড়া তৈরি করেছে। তাতে প্রস্তাব করা হয়েছে, আর্থিক প্রতিষ্ঠানে যাঁরা স্বেচ্ছায় ঋণখেলাপি হবেন, তাঁরা কোনো রাজনৈতিক পদ পাবেন না। বিদেশ ভ্রমণ কিংবা গাড়ি-বাড়ি নিবন্ধনও করতে পারবেন না। ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু থেকে শুরু করে কম্পানি নিবন্ধনও করতে পারবেন না। এসব ক্ষেত্রে সরকার নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারবে। চূড়ান্ত খসড়াটি সবার মতামতের জন্য উন্মুক্ত করেছে মন্ত্রণালয়। এরপর ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এরপর অনুমোদনের জন্য জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা হবে। খসড়া আইনের ৩০ ধারায় বলা হয়েছে, স্বেচ্ছা ঋণখেলাপিরা কোনো রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক সম্মাননা পাবেন না; রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না; কোনো পেশাজীবী, ব্যাবসায়িক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক বা রাজনৈতিক সংগঠন পরিচালনা কমিটির পদে তাঁরা থাকতে পারবেন না। একই ধারার ৩ উপধারায় বলা হয়েছে, তাঁরা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো ধরনের ঋণ পাবেন না এবং ২ উপধারা অনুযায়ী তাঁদের দেউলিয়া ঘোষণা করতে পারবে বাংলাদেশ ব্যাংক। ঋণ খেলাপিরা এক মাসের মধ্যে বকেয়া পরিশোধ না করলে ৪ উপধারা অনুযায়ী আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারবে; প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন নিয়ে সংশ্লিষ্ট খেলাপির বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করতে পারবে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বিনিয়োগের বিষয়ে এবং পরিচালক নিয়োগের বিষয়ে বিভিন্ন ধারা রয়েছে নতুন আইনের চূড়ান্ত খসড়ায়।
অর্থনীতির ঝুঁকি কমাতে হলে ঋণ খেলাপের অপসংস্কৃতি দূর করতেই হবে। ঋণখেলাপিদের ব্যাপারে কঠোর হওয়ার বিকল্প নেই। আর্থিক খাতের সংস্কারে নতুন আইন কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আমরা আশা করি।