আজকের দিনের মতো ব্যাংকিং ব্যবস্থা যখন মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছেনি তখন ‘সঞ্চয় সমৃদ্ধি আনে’, ‘সুদিনের সঞ্চয় দুর্দিনের সহায়’ এমন নানা স্লোগানে একসময় সাধারণ মানুষকে সঞ্চয়ে আগ্রহী করা হতো। বেতার-টেলিভিশনে সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করতে নানা প্রচার চালানো হতো। ‘অপচয় না করে সঞ্চয় করো, সমাজ দেশকে সমৃদ্ধ করো’ এই প্রতিপাদ্য সামনে রেখে শুরু হয়েছে জাতীয় সঞ্চয় সপ্তাহ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান। তিনি বলেছেন, ‘সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ বাড়াতে বিভিন্ন কর্মসূচি নিচ্ছে সরকার। জনগণের যা সুবিধা তা-ই গ্রহণ করা হবে। আর এ খাতে যেন কোনো দুর্নীতি না হয় সে জন্য কঠোর দৃষ্টি রাখা হবে।’ যখন শেয়ারবাজারের অবস্থা খারাপ, সুদের হার নয়-ছয় কার্যকর হলে ব্যাংকে স্থায়ী আমানতেও আর আগের মতো সুবিধা মিলবে কি না তা নিয়ে সংশয়; স্বাভাবিকভাবেই সাধারণ মানুষ, অবসরভোগী মানুষ, সঞ্চয়প্রবণ নারীদের ঝোঁক সঞ্চয়পত্রে। কিন্তু সঞ্চয়পত্র কেনা কি সবার জন্য সহজ? এককথায় এর উত্তর, না। সঞ্চয়পত্র কিনতে হলে এখন লাগে ইলেকট্রনিক কর শনাক্তকরণ নম্বর বা ইটিআইএন ও নিজ ব্যাংক হিসাবের চেকের কপি। পেনশনার সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে বাড়তি কাগজ হিসেবে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের সনদ লাগে। একটু একটু করে টাকা জমিয়ে যাঁরা সঞ্চয়পত্র কিনতে চাইছেন, বিশেষ করে গৃহিণীরা কোথায় পাবেন ইটিআইএন? আবার ইটিআইএন নেওয়ার পর প্রতিবছর আয়কর রিটার্ন দাখিল করা কি তাদের জন্য সহজ কাজ? তার পরও এবারের সঞ্চয় সপ্তাহে সঞ্চয়পত্র কেনায় উৎসাহিত করতে বিভিন্ন প্রচারণামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে উঠান বৈঠক। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গিয়ে কর্মরতদের সঞ্চয়পত্র কিনতে উৎসাহিত করা হবে।
দেশে এখন পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, পরিবার সঞ্চয়পত্র, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র এবং পেনশনার সঞ্চয়পত্র—এই চার ধরনের সঞ্চয়পত্র চালু রয়েছে। নামের মধ্যেই রয়েছে পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র। পরিবার সঞ্চয়পত্র ও পেনশনার সঞ্চয়পত্রের নামের মধ্যে মেয়াদ উল্লেখ না থাকলেও এ দুটোও পাঁচ বছর মেয়াদি। আর তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র তিন মাস মেয়াদি। পরিবার সঞ্চয়পত্রের সুদ মাসিক ভিত্তিতে এবং তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ও পেনশনার সঞ্চয়পত্রের সুদ ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে তোলা যায়।
এবার যখন জাতীয় সঞ্চয় সপ্তাহ পালিত হচ্ছে, তখনকার বাস্তবতা হচ্ছে, সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে ভাটা পড়েছে। মুনাফা কমায় নিরাপদ এই বিনিয়োগ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে বিনিয়োগকারীরা। করের হার বৃদ্ধি এবং কড়াকড়ি আরোপ করায় এভাবে প্রতি মাসেই কমছে সবচেয়ে ‘নিরাপদ’ বিনিয়োগ হিসেবে পরিচিত এ খাতের বিনিয়োগ। কাজেই বিনিয়োগে অনুপ্রাণিত করতে জটিলতা দূর করার বিষয়টিও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে মাথায় রাখতে হবে।