রাজধানীর বাতাস দূষিত হওয়ার কারণ কী এবং তা রোধে পরিবেশ অধিদপ্তর কী পদক্ষেপ নিয়েছে, তা জানাতে হাইকোর্ট থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে যেসব পরিবহন নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি কালো ধোঁয়া ছড়াচ্ছে, সেসব যানবাহন জব্দ করতেও নির্দেশনা এসেছে। উচ্চ আদালতের এই নির্দেশনা তখনই এলো, যখন বিশ্বের দূষিত বায়ুর শহরগুলোর মধ্যে ঢাকা শুধু অন্যতমই নয়, রীতিমতো শীর্ষে অবস্থান করছে। এয়ার ভিজ্যুয়ালের প্রতিবেদন অনুযায়ী গত রবিবারও বিশ্বের দূষিত বায়ুর শহরগুলোর তালিকায় শীর্ষে ছিল ঢাকা। এর আগে গত ২৬ ও ২৭ নভেম্বর, ১৭ ডিসেম্বর এবং ৭ জানুয়ারি বায়ুদূষণে ঢাকা ছিল শীর্ষে। শুধু ঢাকা নয়, সারা দেশেই হচ্ছে পরিবেশদূষণ। বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী স্বাস্থ্য সাময়িকী ‘দ্য ল্যানসেট’ ২০১৭ সালে এক প্রতিবেদনে জানায়, পরিবেশদূষণের কারণে ঘটা মৃত্যুর দিক থেকে বাংলাদেশ শীর্ষে। আর রাজধানী ঢাকা তো অনেক বছর ধরেই পৃথিবীর নিকৃষ্টতম শহরগুলোর একটি। এর অন্যতম কারণ পরিবেশদূষণ। অনিয়ন্ত্রিত যানবাহন, বাড়ি ও কলকারখানার গলাগলি ভাব, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা, নাগরিক অসচেতনতা, এসবই পরিবেশদূষণের কারণ। ওদিকে দেশের ইটভাটাগুলোর তিনটির একটি অবৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছে। এগুলোর পরিবেশগত ছাড়পত্র যেমন নেই, তেমনি পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তিও গ্রহণ করেনি। সারা দেশে এমন ইটভাটা তিন হাজারের বেশি। এসব ইটভাটা মারাত্মক বায়ুদূষণের বড় উৎস। বায়ুদূষণের উৎসসংক্রান্ত পরিবেশ অধিদপ্তরের গত মার্চের প্রতিবেদন বলছে, সারা দেশে গত পাঁচ বছরে ইটভাটার সংখ্যা প্রায় ৫৯ শতাংশ বেড়েছে। শেষ পর্যন্ত দূষণ রোধের নির্দেশনা এলো উচ্চ আদালত থেকে। হাইকোর্টের দেওয়া ৯ দফা নির্দেশনায় সড়ক পরিবহন আইনের বিধান অনুযায়ী পরিবহনের ‘ইকোনমিক লাইফ’ নির্ধারণ করতে বলা হয়েছে। যেসব পরিবহনের ইকোনমিক লাইফের মেয়াদ শেষ হয়েছে, সেসব পরিবহন চলাচলে নিষিদ্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়া চলমান টায়ার পোড়ানো ও ব্যাটারি রিসাইকিলিং বন্ধ করতে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই আদেশ বাস্তবায়ন করে পরিবেশ অধিদপ্তরকে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। ঢাকার পাশের চার জেলায় যেসব অবৈধ ইটভাটা এখনো বন্ধ করা হয়নি, সেগুলো বন্ধ করে দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সিটি করপোরেশনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সিটি করপোরেশনের যেসব ধুলাবালিপ্রবণ এলাকায় এখনো পানি ছিটানো হয়নি, সেসব এলাকায় নিয়মিত পানি ছিটাতেও বলা হয়েছে।
আদালতের এই নির্দেশনা অত্যন্ত সময়োপযোগী। আমরা আশা করব সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষ পরিবেশদূষণ রোধে হাইকোর্টের নির্দেশনা মেনে কাজ করবে। নেবে কার্যকর ব্যবস্থা।