আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠল মধ্যপ্রাচ্য। ইরাকের বাগদাদ বিমানবন্দরে এক হামলায় নিহত হয়েছেন ইরানের কুদস ফোর্সের প্রধান কাসেম সোলাইমানি। ৬২ বছর বয়সী জেনারেল সোলাইমানি সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত সমরবিদ হিসেবে বিবেচিত ছিলেন। তিনি সিআইএ-মোসাদের হিটলিস্টে ছিলেন। গত শুক্রবার ভোরে যখন মার্কিন বাহিনী হামলা চালায় তখন ইরাকের বাগদাদ বিমানবন্দরের ‘কার্গো এরিয়া’য় একটি গাড়িতে অবস্থান করছিলেন সোলাইমানি। একই গাড়িতে ছিলেন ইরাকি মিলিশিয়া কমান্ডার আবু মাহদি আল মুহান্দিসও। তাঁদের নিরাপত্তার জন্য আরেকটি গাড়িতে ছিলেন ইরাকের আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যরা। সেখানে হেলিকপ্টার থেকে হামলা চালায় মার্কিন সেনারা। তাতে নিহত হন সোলাইমানি, মুহান্দিসসহ দুই গাড়িতে থাকা ১০ জন। ইরানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় তাঁদের মৃত্যু হয়েছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তর পেন্টাগন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্দেশে মার্কিন সেনারা সোলাইমানিকে হত্যা করেছে। আর এটি করা হয়েছে ইরাক ও মধ্যপ্রাচ্যে বসবাসরত মার্কিন নাগরিকদের সুরক্ষার স্বার্থে। সোলাইমানিকে হত্যার পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রথম জাতীয় পতাকা ব্যবহার করে একটি টুইট করেন। পরে তিনি দ্বিতীয় টুইটে মন্তব্য করেন, সোলাইমানিকে আরো আগেই হত্যা করা উচিত ছিল। তিনি দাবি করেন, ইরানিরাই সোলাইমানিকে ঘৃণা করত। তাঁর মৃত্যুর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ‘চরম প্রতিশোধ’ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইরান। ওদিকে শনিবার দিবাগত রাতে ইরাকে ইরানপন্থী শিয়া আধাসামরিক বাহিনীর একটি গাড়িবহরে মার্কিন বিমান হামলায় ছয়জন নিহত এবং আরো অন্তত তিনজন আহত হয়েছে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি কাসেম সোলাইমানির মার্কিন হামলায় নিহত হওয়া নিঃসন্দেহে এক জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। বিষয়টি সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণার শামিল বলে মনে করছেন অনেক নিরাপত্তা ও ভূ-রাজনীতি বিশ্লেষক।
সোলাইমানি হত্যার ঘটনার মধ্য দিয়ে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের কারণ নির্ধারণে নানামুখী আলোচনা স্থান পাচ্ছে আন্তর্জাতিক প্রচারমাধ্যমে। বলা হচ্ছে, সামনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। নির্বাচনের বছরে যখন যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশ করছে, তখন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যাচ্ছেন অভিশংসনের মতো এক অস্বস্তিকর প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। উপরন্তু আন্তর্জাতিক পরিসরে তাঁর হাতে তেমন কোনো অর্জন নেই। কিন্তু নির্বাচনের আগে অন্তত একটি বিজয় তাঁর চাই।
কাসেম সোলাইমানি হত্যা বিশ্বকে নতুন অস্থিরতার মধ্যে নিয়ে গেল। ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের টানাপড়েন এখন ভূ-রাজনীতির সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয়। এই হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে নতুন যে অস্থিরতা তৈরি হলো তা নিরসনে বিশ্বসম্প্রদায়কে বিশেষ ভূমিকা নিতে হবে। ইরাক ও ইরানে বাংলাদেশের অনেক নাগরিক বসবাস করেন। তাঁদের নিরাপত্তার বিষয়টিও আমাদের সরকারকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।