কাজিরবাজার ডেস্ক :
বাংলাদেশের সব সীমান্ত ঘিরে উন্নতমানের সড়ক নির্মাণ করার উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। পর্যায়ক্রমে দেশের সব সীমান্ত ঘিরে উন্নতমানের সড়ক নির্মাণ করা হবে। তারই ধারাবাহিকতায় ‘সীমান্ত সড়ক নির্মাণ : ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনা জেলা অংশ’ নামে এক প্রকল্পসহ সাত প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এছাড়াও প্রতিবেশী দেশ নেপাল, ভুটান ও ভারতের সঙ্গে নদীপথে যোগাযোগ সহজ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অনুমোদন দেয়া প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে মোট খরচ ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৪৬০ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারী তহবিল থেকে ৪ হাজার ৩৪৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে ১১৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা খরচ করা হবে। মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রকল্পগুলো অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা তুলে ধরে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা সচিব নুরুল আমিন, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম এবং ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য শামীমা নার্গীস।
জানা গেছে, দেশের সীমান্তবর্তী জেলার সংখ্যা মোট ৩২টি। এর মধ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সীমান্তবর্তী জেলা আছে ৩০টি। সব মিলিয়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্তের দৈর্ঘ্য ৪ হাজার ১৫৬ কিলোমিটার। অন্যদিকে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত দৈর্ঘ্য দাঁড়ায় ২৭১ কিলোমিটার।
মঙ্গলবার ‘সীমান্ত সড়ক নির্মাণ: ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনা জেলা অংশ’ প্রথম সংশোধিত প্রকল্প একনেকে অনুমোদন দেয়া হয়। প্রকল্পে বলা হয়েছে সুনামগঞ্জ-নেত্রকোনা-ময়মনসিংহ- শেরপুর-জামালপুর সড়কটি ২১৪ কি. মি. একটি জেলা মহাসড়ক। প্রকল্পের আওতায় ৭৬ কি.মি. নির্মাণ প্রস্তাব করা হয়েছে। যা দুই অংশে হবে। নেত্রকোনা অংশ ৩৪ কি.মি., ময়মনসিংহ অংশে ৪২ কি.মি. সড়ক উন্নয়ন সংস্থান হবে। ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলা এবং নেত্রকোনার দুর্গাপুর ও কলমাকান্দা উপজেলায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এটি বাস্তবায়িত হলে নেত্রকোনার দুর্গাপুর ও কলমাকান্দা উপজেলা এবং ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির পাশাপাশি সীমান্ত এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। এছাড়া আন্তঃজেলা সীমান্ত সড়ক সহজ ও দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে।
সীমান্ত সড়ক নিয়ে একনেক সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণে পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশের সব সীমান্ত ঘিরে উন্নতমানের সড়ক নির্মাণ করা হবে। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ উন্নত হচ্ছে, তাই পর্যায়ক্রমে আমরা সব সীমান্ত সড়ক নির্মাণ করে ফেলব। দেশের অর্থনীতি ও নিরাপত্তাসহ নানা খাতে অবদান রাখবে এসব সীমান্ত সড়ক। মন্ত্রী আরও বলেন, আমরা আন্তঃজেলা সড়ক চার লেন করছি। গ্রামের সড়ক উন্নয়ন করছি। এখন সীমান্ত সড়ক নির্মাণ করব। এসব প্রকল্পের অন্যতম ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনা জেলার অংশ (১ম সংশোধিত)। প্রকল্পটির মেয়াদ জানুয়ারি ২০১৬ থেকে ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত। ৫৫৯ কোটি ৫৬ লাখ ৬৭ হাজার টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হবে এ প্রকল্প।
এছাড়াও সভায় মংলা বন্দরে নিরাপদ চ্যানেল তৈরি, সমুদ্রগামী জাহাজ সুষ্ঠুভাবে হ্যান্ডলিং ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় জরুরী উদ্ধার কাজ পরিচালনার জন্য ৭৬৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘মংলা বন্দরের জন্য সহায়ক জলযান সংগ্রহ’ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি সম্পূর্ণ বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে বাস্তবায়ন হবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, মংলা বন্দরের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এই বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে জলযান সংগ্রহ করা হচ্ছে। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ভারত, ভুটান বা নেপাল যেন এই বন্দর সহজেই ব্যবহার করতে পারে, সেজন্য উদ্যোগ নিতে হবে। তাছাড়া এসব দেশের সঙ্গে যেন নদীপথে বাণিজ্য বাড়ানো যায় সে কথাও বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া নদীর পাড় ঘেঁষে ড্রেজিং করলে নদীভাঙ্গনের আশঙ্কা থাকায় ড্রেজিং কার্যক্রম পাড় ঘেঁষে না করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। একইসঙ্গে পায়রা, মংলাসহ নতুন-পুরাতন বন্দরগুলোতে আধুনিক স্কান্যার বসানোর নির্দেশ দিয়েছেন বলেও জানান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
একনেক বৈঠকে অনুমোদিত প্রকল্পের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ রয়েছে ‘পাওয়ার গ্রিড নেটওয়ার্ক স্ট্রেনদেনিং প্রজেক্ট আন্ডার পিজিসিবি’ প্রকল্পে। এই প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ২ হাজার ৩০২ কোটি ৮০ লাখ টাকা। মাতুয়াইল স্যানিটারি ল্যান্ডফিল সম্প্রসারণসহ ভূমি উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৮১৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। রাজশাহী মহানগরীর জলাবদ্ধতা দূর করতে নর্দমা নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৫৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের সক্ষমতা জোরদার করতে অনুমোদিত প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ২২০ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। সিলেট, লালমনিরহাট ও বরিশাল ইনস্টিটিউট অব লাইভস্টক সায়েন্স এ্যান্ড টেকনোলজি স্থাপন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১৯১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।
পরিকল্পনামন্ত্রী ছাড়াও সভায় অংশ নেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আবদুর রাজ্জাক, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন এবং ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামানসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা একনেক সভায় অংশ নেন।