প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা বিভিন্ন সময়েই সামনে এসেছে। আর এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এমন ঘটনা কতটা উদ্বেগজনক ও ভীতিপ্রদ বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের গুজব ঠেকাতে গুচ্ছ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। তথ্য মতে, এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের সঙ্গে বিটিআরসি’র যোগাযোগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউবসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্নফাঁসের গুজব সৃষ্টিকারীদের পেজ দ্রম্নত বন্ধের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিটিআরসি প্রয়োজনীয় যোগাযোগ রাখবে বলেও জানা যাচ্ছে। আর এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে কেন্দ্র সচিব ছাড়া পরীক্ষা কেন্দ্রে অন্য কেউ মোবাইল ফোন বা অননুমোদিত ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করতে পারবেন না। কেন্দ্র সচিবের মোবাইলটিও ছবি তোলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধাবিহীন হবে। অন্যদিকে, ট্রেজারি-থানা থেকে প্রশ্নপত্র গ্রহণ ও পরিবহণ কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা, শিক্ষক, কর্মচারীরা কোনো ফোন ব্যবহার করতে পারবেন না এবং প্রশ্নপত্র বহন কাজে কালো কাচযুক্ত মাইক্রোবাস বা এমন কোনো যানবাহন ব্যবহার করা যাবে না।
আমরা বলতে চাই, প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে যে গুচ্ছ পরিকল্পনার বিষয় জানা যাচ্ছে, তার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। এ কথাও বলার অপেক্ষা রাখে না যে, পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস নিঃসন্দেহে গুরুতর অপরাধ। অন্যদিকে, প্রশ্নফাঁসের গুজব যেন কেউ ছড়াতে না পারে সেদিকেও কঠোর হতে হবে। উলেস্নখ্য, বিভিন্ন সময়ে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা থেকে শুরু করে, বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষাতেও প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে বার বার। এছাড়া নানা সময়ে প্রশ্নপত্র ফাঁসে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি থেকে শুরু করে, শিক্ষক ও ব্যাংক কর্মকর্তার মতো সমাজের অগ্রবর্তী শ্রেণিরও যুক্ত হয়ে পড়ার বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি কতটা দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে, সেটি ভাবনার অবকাশ রাখে।
আমরা মনে করি, প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা কিংবা প্রশ্নফাঁসের গুজব শুধু ভীতিপ্রদই নয়, বরং সমাজের আশঙ্কাজনক অবক্ষয়েরও নির্দেশক। প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অর্থ হলো, এই চক্র একদিকে যেমন জাতির মেধাবী সন্তানদের বঞ্চিত করে, অন্যদিকে হাতিয়ে নেয় কোটি কোটি টাকা। সঙ্গত কারণেই দেশকে, সমাজকে, এই দুষ্টচক্রের হাত থেকে বাঁচাতে হবে। আর প্রশ্নফাঁস রোধ কিংবা এ সংক্রান্ত যে কোনো ধরনের গুজব রোধে কঠোর হওয়ারও বিকল্প নেই।
উলেস্নখ্য, শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্নফাঁস চক্রের কর্মকান্ড নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। প্রশ্নপত্র ফাঁস কিংবা পরীক্ষার্থীদের কাছে উত্তর সরবরাহে জড়িত ব্যক্তিদের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও জেলা প্রশাসন কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এছাড়া জানা গেছে, ২৬ এপ্রিল থেকে ২৩ মে দেশের সব কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে। নজরদারিতে থাকবে মোবাইল লেনদেনও। আমরা মনে করি, সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের তৎপর থাকার বিকল্প নেই। বলা দরকার, ৩০ এপ্রিল শুরু হবে চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। ২০২৩ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থী ২০ লাখ ৭২ হাজার ১৬৩ জন। এর মধ্যে ছাত্র ১০ লাখ ২১ হাজার ১৯৭ এবং ছাত্রী ১০ লাখ ৫০ হাজার ৯৬৬ জন। ফলে সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা গ্রহণ এবং প্রশ্নফাঁস রোধ ও গুজব ঠেকাতে সব ধরনের উদ্যোগ নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই।
সর্বোপরি বলতে চাই, দেশে ২০১৯ সালের আগে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ওঠা একটি সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছিল। অথচ প্রশ্নফাঁসের ঘটনা কতটা ভয়ানক হতে পারে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সঙ্গত কারণেই এবারে যখন এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের গুজব ঠেকাতে গুচ্ছ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার, তখন তার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে এবং প্রশ্নফাঁসের চেষ্টা বা কেউ গুজব ছড়াতে চেষ্টা করলে তা রোধ করতে হবে। প্রশ্নফাঁস কিংবা প্রশ্নফাঁসের গুজব ঠেকাতে যেসব পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে তার যথাযথ বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।