স্বাগত ২০২০ ইংরেজী নববর্ষ

125
বছরের শেষ দিনের শেষ সূর্যাস্ত। হাওরের ধানি জমিতে দিনের কাজ শেষে নৌকায় বাড়ি ফিরছেন দুই কৃষক। ছবিটি গোধূলী লগ্নে সদর উপজেলার বাওরকান্দি হাওর থেকে তোলা।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়েছে। আস্তে আস্তে তেজোদীপ্ত সুয্যিমামা মলিন হতে শুরু করেছে। ডিমের কুসুমের মতো গোলাকার সূর্যটা দেখে মনে হতে পারে কপাল জুড়ে লালটিপ দিয়ে সেজেছে বাংলার বধূ। সাজবেই বা না কেন- তার যে বিদায় নেয়ার পালা। আর এই সূর্যাস্ত শেষে রাতের প্রথম প্রহরেই প্রাপ্তি আর অপ্রাপ্তির হিসেব নিয়ে বিদায় নিল আরও একটি বছর। বিশ্বের বয়স বাড়ল আরও এক বছর।
অনাদিকাল থেকে সৌরজগতের নিখুঁত নিয়মে প্রতিদিন সূর্যোদয় হয়। প্রতিদিনের মতো আজও সূর্য উঠেছে। শীতের কুয়াশা সরিয়ে উঁকি দিয়েছে উজ্জ্বল রোদ। কিন্তু অন্য যে কোন দিনের চাইতে আজকের ভোরের আলোতে যেন বেশি মায়া মাখানো। যেন নতুন স্বপ্নের কথা বলছে। বলছে, সামনের দিনগুলোতে অনিশ্চয়তা কেটে গিয়ে শুভময়তা ছড়িয়ে যাবে দেশে, পৃথিবীময়। আশাজাগানিয়া সূর্যকিরণ যেন সে দ্যুতিই ছড়িয়ে দিচ্ছে প্রত্যেকের প্রাণে, মনে।
অশুভ শক্তির মিথ্যা বোধ, প্রজন্মের নষ্ট হয়ে যাওয়া মুখগুলোর ‘আস্ফালন’, আর সহিংস রাজনীতির অশুচি কাটিয়ে অস্তাচলে গেল যে সূর্যটি, আজ পূর্বদিগন্তে শাশ্বত সেই সূর্যেরই উদয় হয়েছে নতুন সৌন্দর্যের আবহ ঘটিয়ে। ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বলে নবোদয় ঘটেছে এক নতুন প্রজন্মের- যে প্রজন্মের কাছে মায়ের মতো পবিত্র তার দেশ, সূর্যের মতো সত্য তার মুক্তিযুদ্ধ আর উন্নয়নের জ্যোতির মতোই দ্যুতি ছড়ানো তার ভবিষ্যত। তাই একাত্তরের মতোই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির অবিস্মরণীয় অগ্রযাত্রা আর বিজয়ের মাসে স্বাধীনতাবিরোধী অশুভ শক্তিকে আগের মতো বারবার পরাজিত করার দৃঢ় শপথে বিদায় নিল ঘটনাবহুল ২০১৯ সাল। একইসঙ্গে বিদায় হলো এক দশকের।
তমসা কেটে পূর্ব দিগন্তে আবহমান সূর্য আবার শুরু করল নতুন যাত্রা। ‘সময় আর গ্রোত কারও জন্য অপেক্ষা করে না’- এই সত্যকে বিমূর্ত করে নতুন বছরের প্রথম সূর্যোদয়। স্বপ্ন আর দিনবদলের অপরিমেয় প্রত্যাশার আলোয় উদ্ভাসিত শুভ নববর্ষ। মহাকালের গর্ভে বিলীন হয়ে গেল আরেকটি বছর ২০১৯। শুরু হলো ২০২০ খ্রিস্টাব্দ। সুপ্রভাত বাংলাদেশ; স্বাগত ২০২০। হ্যাপি নিউইয়ার ২০২০। অভিবাদন নতুন সৌরবর্ষকে। আর এই নতুন বছরে, মুজিববর্ষে সবার অঙ্গিকার হোক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণের।
সেই একই সূর্য, একইভাবে উঠছে পূর্বাকাশ আলো করে। তবু তার উদয় ভিন্নতর। আজকের দিনটিও আলাদা, কারণ একটি নতুন বর্ষপরিক্রমা শুরু হলো আজ বুধবার থেকে। সোনালি স্বপ্নের হাতছানি নিয়ে উদিত হলো নতুন বছরের নতুন সূর্য। ভরা পৌষে কুয়াশার হিমেল চাদর ছিন্ন করে উদ্ভাসিত হলো সোনালি আলোর সকাল। কালপরিক্রমায় দ্বারোদঘাটন হলো প্রকৃতির নতুন নিয়মে নতুন বৎসর ২০২০’র। চেতনায় জাগ্রত আবহমান সেই মাঙ্গলিক বোধ- অতীতের জীর্ণতা অতিক্রান্ত দিন মাস পঞ্জির হিসাব থাক বিস্তৃতির কালগর্ভে, প্রত্যাশায় বুক বাঁধি নতুন দিনের সূর্যোলোকে- তবে উদ্ভাসন হোক সজীব-সবুজ নতুনতর সেই দিনের- যা মুছে দেবে অপ্রাপ্তির বেদনা; জাগাবে নতুন প্রত্যয়ে নতুন সম্ভাবনার পথে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা।
গ্রেগরিয়ান পঞ্জিকা অনুযায়ী ইংরেজী নববর্ষের প্রথমদিন আজ। আজ ২০২০ সালের প্রথম দিন। আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহদহন লাগে/ তবু শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে।’ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের এ কথার মতোই দুঃখ, কষ্ট সবকিছু কাটিয়ে নতুন জীবনের দিকে যাত্রার প্রেরণা নেবে মানুষ। নতুন বছরটি যেন প্রতিটি মানুষের মন থেকে সকল গ্লানি, অনিশ্চয়তা, হিংসা, লোভ ও পাপ দূর করে। রাজনৈতিক হানাহানি কিংবা জঙ্গি-সন্ত্রাসমুক্ত হয়ে যেন আমাদের সাম্প্রদায়িকতামুক্ত প্রিয় স্বদেশ আরও সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যেতে পারে। গত বছরের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির হিসাব খুঁজতে খুঁজতে নতুন বছরকে সামনে রেখে আবর্তিত হবে নতুন নতুন স্বপ্নের। বাংলাদেশে ইংরেজী নববর্ষ পালনের ধরন বাংলা নববর্ষ পালনের মতো ব্যাপক না হলেও এ উৎসবের আন্তর্জাতিকতার ছোঁয়া থেকে বাংলাদেশের মানুষও বিচ্ছিন্ন নয়।
বিশ্বের বয়স আরও এক বছর বাড়ল। এক বছরের ‘আনন্দ-বেদনা, আশা-নৈরাশ্য আর সাফল্য-ব্যর্থতার পটভূমির ওপর আমাদের ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের এই প্রিয় বাংলাদেশ নতুন বছরে পর্বতদৃঢ় একতায় সর্ব বিপর্যয়-দুঃসময়কে জয় করবে অজেয়-অমিত শক্তি নিয়ে’- এ সঙ্কল্পের সোনালি দিন আজ। আলোড়ন আর তোলপাড় করা ঘটনাবহুল ২০১৯-এর অনেক ঘটনার রেশ নিয়েই মানুষ এগিয়ে যাবে। ভাগ্যাকাশে আনন্দ-বেদনা প্রত্যাশা আর দুর্যোগের ঘনঘটা নিয়েই বাঙালীর বছর ফুরোল। সূচনা হলো আরও একটি বর্ষযাত্রা।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বহু ঘটনার সাক্ষী হয়ে মহাকালের অতল গর্ভে মঙ্গলবার সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে চলে গেছে বিগত বছর ২০১৯। কালের গর্ভে হারিয়ে গেল ঘটনাবহুল একটি দশক। আবহমান সূর্য একটি পুরনো বছরকে কালগ্রোতের উর্মিমালায় বিলীন করে আবার শুরু করল যাত্রা। স্বপ্ন আর দিনবদলের অপরিমেয় প্রত্যাশার রক্তিম আলোয় উদ্ভাসিত ইংরেজী নতুন বছর শুরু হলো। লাখো প্রত্যাশার ঝাঁপি খুলে এবং সরকারের কাছে মানুষের অনেক প্রত্যাশায় আজ ভোরে কুয়াশায় ঢাকা পূর্বাকাশে উদয় হয়েছে নতুন বছরের লালসূর্য।
জাতির অনেক আশা-আকাক্সক্ষা পূরণ হবার বছর এটি। শুরু হলো অগ্রগমনের বছর। তাই নতুন বছরকে স্বাগতম সুখ-সমৃদ্ধি, উন্নয়ন-অগ্রগতি আর জঙ্গি-সন্ত্রাস-সাম্প্রদায়িকতামুক্ত মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যাশায়। খ্রিস্টীয় নববর্ষের প্রথমদিন আজ। প্রাচীন সূর্য মঙ্গলবার যে দিবসকে কালগ্রোতে বিলীন করে পশ্চিমে অস্ত গেল, তা আজ ফেলে আসা দিন। থার্টি ফার্স্টে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ পরমানন্দে ২০২০ সালকে বরণ করেছে।
আজ নতুন দিনের নতুন সূর্যালোকে স্নান করে সিক্ত হবে জাতি-বর্ণ-নির্বিশেষে সব শ্রেণী পেশার মানুষ। সব কালিমা ধুয়ে-মুছে নতুন কেতন ওড়াতে ওড়াতে এগিয়ে যাবে সময়, সভ্যতা, হিংসা-বিদ্বেষ-হানাহানিমুক্ত রাজনীতি, অর্থনীতি আর সংস্কৃতি। অনাবিল স্বপ্ন আর অফুরন্ত প্রাণোন্মাদনা নিয়ে নতুন সূর্যের আলোয় অগ্রসর হবে মানুষ। বিগত সময়ের সব ভুল শুধরে নেবার সময় এসেছে আজ।
স্মৃতির অতলে হারিয়ে যাওয়ার পথে ২০১৯ সালটি নতুন করে মিথ্যার কুহেলিকা ভেদ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঠিক ধারায় এবং পুনর্জাগরণের দ্বারোদঘাটন রচনা করে দিয়ে গেছে, সমগ্র জাতি জঙ্গিবাদী ও স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছে এক মহাসড়কে। সূচিত হয়েছে তার যূথবদ্ধ যাত্রা। বাংলার প্রতিটি প্রান্তরে আজ অভিন্ন আওয়াজ- ‘স্বাধীন বাংলায়, স্বাধীনতাবিরোধী, জঙ্গি-সন্ত্রাসী আর রাজাকারদের ঠাঁই নাই’। আর এ প্রচ- শপথ পূরণের প্রত্যাশা নিয়েই যাত্রা শুরু হলো নতুন একটি বছরের।
মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার পরপরই সারাবিশ্বে নতুন বছরকে স্বাগত জানানো হয়েছে নানা আনুষ্ঠানিকতায়। বর্ষবরণের আনন্দোৎসব করেছে সর্বস্তরের মানুষ। হিসাবের খাতায় ব্যর্থতার গ্লানি মুছে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে নতুন বছরে শান্তিকামী মানুষের প্রার্থনা ছিল- আর কোন সহিংসতা নয়, কোন হত্যা-খুন কিংবা হানাহানির রাজনীতি নয়। ২০২০ সাল হবে শান্তির বীজ বপনের সাল। অস্ত্র বা হানাহানির মহড়া হবে না, থেমে যাবে সব যুদ্ধ-সন্ত্রাস। সবার প্রত্যাশা অনুযায়ী টানা হ্যাটট্রিক কবার ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের সরকার নতুন বছরেও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত একটি সুখী ও সমৃদ্ধশালী উন্নত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ উপহার দেবে জাতিকে।