ফজলে হাসান আবেদ’র মহৎ জীবন

17

চলে গেলেন দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের অন্যতম প্রাণপুরুষ, ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ। তিনি চলে গেলেন, কিন্তু রেখে গেলেন অনুসরণীয় এক মহৎ জীবন। ইচ্ছা করলেই জীবনটাকে অন্যভাবে কাটানোর সুযোগ ছিল তাঁর। বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের অর্থ ব্যবস্থাপনার প্রধান ছিলেন কর্মজীবনের শুরুতেই। কিন্তু সেই বিলাসী জীবন ত্যাগ করে বাংলাদেশের মানুষকে দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করার চেষ্টায় নিরন্তর সংগ্রামের একটি জীবন পার করে দিলেন তিনি। সত্তরের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের পর মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মাধ্যমে যে কার্যক্রমের সূচনা ফজলে হাসান আবেদ করেছিলেন, মুক্তিযুদ্ধে ভারত প্রত্যাগতদের সহায়তার পথ ধরে এখন তা রূপ নিয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বেসরকারি সংস্থার কর্মযজ্ঞে। কর্মগুণেই বিশ্বব্যাপী সমাদৃত তিনি। যে কয়জন বাংলাদেশি তাঁদের কর্মগুণে বিশ্বজুড়ে পরিচিত, ফজলে হাসান আবেদ তাঁদের একজন। ১৯৭২ সালে তাঁর হাত ধরে যাত্রা শুরু করা ব্র্যাক এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় এনজিও। দারিদ্র্য বিমোচনে অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১০ সালে যুক্তরাজ্যের নাইট উপাধিতে ভূষিত হন।
১৯৭১ সালের মে মাসে লন্ডনে গিয়ে সমমনা বন্ধুদের সঙ্গে মিলে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য কাজ শুরু করেন। মুক্তিযুদ্ধে সহায়তার জন্য গড়ে তোলেন ‘অ্যাকশন বাংলাদেশ’ ও ‘হেলপ বাংলাদেশ’ নামে দুটি সংগঠন। ‘অ্যাকশন বাংলাদেশ’-এর কাজ ছিল মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক সমর্থন আদায়, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে জনমত তৈরি এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বরোচিত কার্যকলাপ বন্ধে ইউরোপীয় দেশগুলোর সরকারকে সক্রিয় করে তোলা। ‘হেলপ বাংলাদেশ’-এর কাজ ছিল অর্থ সংগ্রহ করে মুক্তিবাহিনীকে সহযোগিতা করা। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত তৈরি, প্রচারপত্র বিলি, টাইমস অব লন্ডনে লেখা ও বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা, রেডিও ও টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দেওয়া, ইউরোপীয় দেশগুলোর পার্লামেন্ট সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে স্বদেশের স্বাধীনতার পক্ষে বিবিধ কর্মতৎপরতা পরিচালনা করা। পথনাটক, তহবিল সংগ্রহসহ নানা ধরনের কাজেও তিনি ও তাঁর বন্ধুরা সক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়েছিলেন। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশ। ডিসেম্বরেই তিনি ফিরে আসেন দেশে। ১৯৭২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন অ্যাসিস্ট্যান্স কমিটি (ব্র্যাক) প্রতিষ্ঠা করেন।
নির্মোহ স্যার ফজলে হাসান আবেদের লক্ষ্য ছিল দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়ানো। এটাই ছিল তাঁর জীবনের ব্রত। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার ইতিবাচক স্বপ্ন দেখতেন ফজলে হাসান আবেদ। দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে দারিদ্র্যসীমার মধ্য থেকে বের করে আনার লক্ষ্যে কাজ করেছেন। বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেখার জন্য সারা জীবন পরিশ্রম করে গেছেন তিনি। কর্মযজ্ঞই তাঁকে এ দেশের মানুষের কাছে স্মরণীয় করে রাখবে।