বিজয়ের মাস

12

কাজিরবাজার ডেস্ক :
‘যারা এ বাংলার জন্য যুদ্ধ করেছিল/ জয়বাংলা বলে/ তাদেরকে এসো আমরা স্মরণ করি/ এই বিজয় দিবসে/ এই স্মরণ দিবসে।’
বছর ঘুরে আবার ফিরে এসেছে বিজয়ের মাস। আজ ১ ডিসেম্বর। আজকের দিনটিতেই সূচনা ঘটতে যাচ্ছে বাঙালীর কাক্সিক্ষত মুক্তি সংগ্রামের বিজয় অর্জনের মাস ডিসেম্বরের। পূর্তি হলো স্বাধীনতার ৪৮ বছর। ডিসেম্বর মাস রাষ্ট্র পাওয়ার মাস, কষ্ট পাওয়ার মাস। বাঙালি জাতির একটি নিজস্ব রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপরিচয়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার মাস ডিসেম্বর। পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তার এ দেশীয় দোসরদের পরাস্ত করার মাস। আবার ৩০ লাখ মানুষ হারানোর দুঃসহ কষ্টের মাস। একাত্তরে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াকু বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ এ মাসে বিজয়ের সুমহান মর্যাদায় অভিষিক্ত হয়েছিল।
এবার ভিন্ন প্রেক্ষাপটে এসেছে বিজয়ের মাস। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ভূমিধস বিজয় নিয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। মাত্র ৬টি আসন পেয়ে অস্তিত্বের সঙ্কটে স্বাধীনতাবিরোধীদের সমর্থন নিয়ে রাজনীতির মাঠে থাকা বিএনপি। আর একাত্তরের চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের দল এবং আন্তর্জাতিক আদালতে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষিত জামায়াতের কোন প্রতিনিধিকে এবারের নির্বাচনে বিজয়ী হতে দেননি দেশের স্বাধীনতাপ্রিয় বীর বাঙালি। ফলে জাতির জীবনে একটি স্বস্তিদায়ক পরিবেশেই এবার এসেছে বিজয়ের মাস ডিসেম্বর।
মুক্তিযুদ্ধের অগ্নিক্ষরা সেসব দিনে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র যুগিয়েছিল মুক্তির লড়াইয়ের অনিঃশেষ প্রেরণা। সে সময়ের গানে গানে বিধৃত আছে লাঞ্ছিত-নিপীড়িত, মুক্তিপাগল সাড়ে সাত কোটি বাঙালির প্রাণের উচ্ছ্বাস, ত্যাগ, লড়াই ও মুক্তির মন্ত্র। উনিশ শ’ একাত্তরে দীর্ঘ ন’টি মাস পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বাঙালির মৃত্যুপণ জনযুদ্ধ শেষে অর্জিত হয়েছিল প্রত্যাশিত বিজয়। লাখো শহীদের আত্মদান, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসী অবদান, ত্যাগ এবং অসংখ্য মা-বোনের মহামূল্যবান সম্ভ্রমের বিনিময়ে বাংলাদেশ নিজের স্থায়ী আসন অর্জন করে নেয় বিশ্বমানচিত্রে। তাই কৃতজ্ঞ বাঙালী জাতি এই ডিসেম্বর মাসজুড়ে স্মরণ করবে লাখো শহীদানকে। তাদের অপূর্ণ স্বপ্ন এবং প্রত্যাশা বাস্তবায়নের শপথে নতুন করে উজ্জীবিত হবে।
জীবনের গভীরতম অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে ৪৮ বছর পার করা এ দেশের মানুষের কাছে এবারের ডিসেম্বর শুধু বছর-পরিক্রমায় আরও একটি মাস নয়; এবারের ডিসেম্বর নতুন ভাবনা ও চেতনা নিয়ে সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। যে দলটি নেতৃত্ব দিয়ে এ দেশটিকে স্বাধীন করেছিল, সেই ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ মহাবিজয় নিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সারাবিশ্বকে তাক লাগিয়ে উন্নতির মহাসোপানে এগিয়ে যাচ্ছে ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। তাই এই উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারা অব্যাহত এবং স্বাধীনতাবিরোধী অন্ধকারের শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করার প্রত্যয় নিয়েই দেশবাসী মাসব্যাপী উদযাপন করবে বিজয়ের মাস ডিসেম্বর।
স্বাধীনতা প্রিয় বাঙালি জাতি আজ নতুন আশায় বুক বেঁধেছে, ৩০ লাখ প্রাণের বিনিময়ে পাওয়া স্বাধীনতাকে অর্থপূর্ণ করে তুলতে দীর্ঘ পথচলায় দুর্নীতি-অপশাসন ও স্বাধীনতা বিরোধী সাম্প্রদায়িক অপশক্তির মতো হাজারো জঞ্জালে ভরে যাওয়া স্বপ্নের জাল ঝেড়ে পরিষ্কার করার সময় এসেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় কার্যকরের মধ্যে দিয়ে জাতি অভিশাপমুক্ত হয়েছে। একাত্তরের ক্ষতগুলোকে সারিয়ে তোলা বা রোধ করার এখনই সময়। অচিরেই যুদ্ধাপরাধী ও স্বাধীনতাবিরোধীমুক্ত বাংলাদেশ দেখতেই এখন অধীর অপেক্ষা দেশের কোটি কোটি মানুষের। এ কারণেই একাদশ জাতীয় নির্বাচনেও একাত্তরের পরাজিত শত্রুদের পুনর্বার পরাজিত করে স্বাধীনতার চেতনায় বাংলাদেশ বিনির্মাণের চলমান অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছে দেশের মানুষ।
মুক্তিযোদ্ধা আর শহীদদের পরিবারগুলো রাষ্ট্রের দুয়ারে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চেয়ে ঘুরেছে ৪০ বছর ধরে। স্বাধীনতাবিরোধীসহ তাদের দোসর বড় বড় রাষ্ট্রের ক্ষমতাধরদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং ফাঁসির রায় কার্যকরের মাধ্যমে শহীদের আত্মার শান্তি ও দেশকে কলঙ্কমুক্ত করে চলেছে বর্তমান সরকার। তাই দেশের মানুষ আশায় বুক বেঁধেছে, বর্ষ-পরিক্রমায় ফিরে আসা এবারের বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে বাঙালি জাতি সাম্প্রদায়িক ও স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিকে সর্বত্র পরাজিত করে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্ন অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক শোষণমুক্ত সোনার বাংলা গড়ে তোলার নতুন লড়াইয়ের দীপ্ত শপথে বলিয়ান।
মহান বিজয়ের মাস উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। শনিবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য এবং আলোর মিছিলের মাধ্যমে মাসব্যাপী বিজয়ের মাস পালনের কর্মসূচী শুরু হয়েছে। আজ ডিসেম্বরের প্রথম দিন মুক্তিযোদ্ধা বাস্তবায়ন পরিষদ ডিসেম্বরের প্রথম দিনটি ‘মুক্তিযোদ্ধা দিবস’ হিসেবে পালন করবে। ন্যাশনাল এফ এফ ফাউন্ডেশন আজ সকালে ‘শতবর্ষে বঙ্গবন্ধু-২০২০’ উপলক্ষে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে বঙ্গবন্ধুর ছবি সংবলিত উপহারসামগ্রী বিতরণ ও বিজয় র‌্যালি বের করবে।