কাজিরবাজার ডেস্ক :
হাকিমপুরী, শাহজাদী ও রতন জর্দাসহ দেশের ২২টি জর্দা গুল ও খয়েরে বিষাক্ত হেভি কেমিক্যাল লিড, ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়াম পেয়েছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ)। এসব মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। নিয়মিত সেবনে ক্যান্সারসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারে বলে জানিয়েছে এই কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৃহস্পতিবার বিএফএসএর পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য বিষয়টি জানানো হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান সৈয়দা সারওয়ার জাহান, সদস্য মাহাবুব কবীর, মঞ্জুর মোর্শেদ আহমেদসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
বিএফএসএর চেয়ারম্যান সৈয়দা সারওয়ার জাহান বলেন, আমরা ২৩টি প্রতিষ্ঠানের জর্দা ও গুল টেস্ট করিয়েছি। যাতে হেভি কেমিক্যাল লিডের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। প্রাথমিক পর্যায়ে এসব কোম্পানির অনুসন্ধান করব। পরবর্তী পর্যায়ে এদেও নোটিস করব। প্রয়োজনে আইনী প্রক্রিয়ায় কারখানা সিলগালা করে দেব। তিনি বলেন, খাদ্যে হেভি কেমিক্যাল নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও গুল ও জর্দায় তা পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, ২২টি জর্দা গুল ও খয়েরে নমুনা নিয়ে আমরা ল্যাবটেস্ট করেছি। যার প্রত্যেকটিতে বিষাক্ত হেভি কেমিক্যাল লিড, ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়াম পাওয়া গেছে। যা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। আমরা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছি। প্রথমে তাদেও ডেকেছি। সমস্যার কথা জানিয়ে সংশোধন করতে বলা হবে। এরপর যদি তারা সংশোধন না হন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। প্রয়োজনে প্রতিষ্ঠান সিলগালা করা হবে।
তিনি বলেন, বাজাওে যেসব জর্দা গুল ও খয়ের বিক্রি হচ্ছে তার সবগুলোই ক্ষতিকর। এগুলো খেলে মানুষ বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ে। কারণ এসব পণ্য মানুষ সরাসরি খায়। ফলে পাকস্থলি আক্রান্ত হয়। এতে করে ক্যান্সারসহ বিভিন্ন জটিল রোগে ভোগে। এজন্য মানুষকে সচেতন হতে হবে। একই সঙ্গে এসব ক্ষতিকর পণ্য সেবন থেকে বিরত থাকতে হবে। মানুষের সচেতনতা বাড়াতে প্রচারসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। কারণ এসব পণ্যের চাহিদা না কমালে বন্ধ করা সম্ভব হবে না।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, খাদ্যে হেভি কেমিক্যাল লিড নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও জর্দা, খয়ের ও গুলে এসব পদার্থের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এর মধ্যে খয়েওে বেশি পরিমাণ হেভি কেমিক্যাল লিড পাওয়া গেছে। গাছের ছাল দিয়ে খয়ের তৈরি করা হলেও ভয়ঙ্কর তথ্য হলো তা তৈরি হচ্ছে সম্পূর্ণ কেমিক্যাল দিয়ে। কারণ বিভিন্ন জেলায় আমাদের কর্মকর্তারা যেসব অভিযান পরিচালনা করেছে তার সবগুলো খয়েরের কারখানায় কাঠের ফার্নিচারে বার্নিসে ব্যবহৃত পদার্থ পাওয়া যায়। অর্থাৎ বার্নিসের উপাদান দিয়ে তৈরি হচ্ছে খয়ের।
দেশের বাজারে বিক্রি হওয়া ২২টি জর্দা, খয়ের ও গুল সংগ্রহ করে ল্যাবে পরীক্ষ করা হয়। এর মধ্যে ১৩ প্রতিষ্ঠানের জর্দা, ৬ প্রতিষ্ঠানের খয়ের ও তিন প্রতিষ্ঠানের গুলের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। যার সবগুলোতে হেভি কেমিক্যাল লিড, ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়াম-এর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। নমুনা পরীক্ষা করা পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে, গিলা খয়ের, তীর মার্কা খয়ের, মালাই খয়ের, অন্তরা খয়ের, কালো পাথর বাল্ক খয়ের, সাদা বাল্ক খয়ের, ইগল গুল, মোস্তফা গুল, শাহজাদা গুল, রতন জর্দা, হকিমপুরী জর্দা, গুরুদেব জর্দা, শাহজাদী জর্দা (নির্মলের), মহিউদ্দিন জর্দা, হাকিমপুরী জর্দা, ঢাকা জর্দা, মকিমপুর জর্দা, শাহী হীরা জর্দা, জাফরানী জর্দা শাহজাদী জর্দা (আলম), বউ শাহজাদী জর্দা এবং চাঁদপুরী জর্দা।