স্টাফ রিপোর্টার :
দাবিকৃত চাঁদা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে ‘মিথ্যা’ মামলা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মোহাম্মদ সুলেমান ও তার পরিবারকে হয়রানি করছে একটি চক্র। সংঘবদ্ধ এ চক্রের সদস্যরা কখনও নিজেদের সাংবাদিক আবার কখনও মানবাধিকার কর্মী পরিচয় দিয়ে হয়রানি করে যাচ্ছেন। এ চক্রের হাত থেকে রক্ষা পেতে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ওই প্রবাসী।
শনিবার সিলেট প্রেসক্লাবের আমিনুর রশীদ চৌধুরী মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেন তিনি। মোহাম্মদ সুলেমান নগরীর নগরীর ২৭ নং ওয়ার্ডের গোটাটিকর আবাসিক এলাকার বাসিন্দা মরহুম এডভোকেট মশাহিদ আলীর ছেলে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, তার মূল বাড়ি সিলেটের জকিগঞ্জে। দীর্ঘ ৩২ বছর ধরে তিনি সপরিবারে নিউইয়র্কে বসবাস করছেন। প্রায় ১৫ বছর আগে তিনি গোটাটিকর আবাসিক এলাকায় কিছু জমি কেনেন। এরপর সেখানে একটি বহুতল ভবন নির্মাণ করেন। ভবন নির্মাণের সময় গোটাটিকর এলাকার মৃত আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে এনামুল হক এনাম ও মৃত আব্দুস শহীদের ছেলে মাহছুমুল হক রুহেল তার কাছে চাঁদা দাবী করে। সে সময় তিনি বিষয়টি স্থানীয় কাউন্সিলরসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের অবগত করলে চাঁদাবাজ এই চক্রটির অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
তিনি আরও বলেন, বছর দেড়েক আগে আমার ভবনের কাজ সম্পন্ন হয়। তখন তিনি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করায় আমার শ্বশুর ওই ভবনের একটি ফ্লাটে অবস্থান করেন এবং ভবনটি দেখাশুনা করেন। ভবন নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পরও এনামুল হক এনাম ও মাহসুমুল হক রুহেল আমার শ্বশুরকে নানাভাবে হয়রানি করতে থাকে। তারা নিজেদের লোককে আমার ফ্লাটে ভাড়াটিয়া হিসাবে ঢুকাতে চায় এবং ফ্লাটের ভাড়া তারা নির্ধারণ করে দিতে চায়। এ বিষয়গুলো স্থানীয় কাউন্সিলরসহ এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ অবগত আছেন বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, সম্প্রতি চাঁদাবাজ এনাম ও রুহেল চক্র তাদের সহযোগী জাবেদ আহমদ ১০ হাজার টাকা ভাড়ায় একটি ফ্লাটে উঠেন। ভাড়া গ্রহণকালে জাবেদ আহমদ ভাড়াটিয়া তথ্য ফরম পূরণ করে, যেখানে তার তার নিজের নাম জাবেদ আহমদ, পিতার নাম- আলী মিয়া মোল্লা, স্থায়ী ঠিকানা- গ্রাম- দেওর, ডাকঘর- চাঁন্দপুর চা বাগান, থানা- চুনারুঘাট, জেলা- হবিগঞ্জ বলে উল্লেখও করে। সে তার ভোটার আইডি কার্ড বাড়িতে রেখে এসেছে ও পরবর্তীতে জমা দেবে বলে জানায়। পরবর্তীতে জাবেদ আহমদ নামের ওই ভাড়াটিয়া এক মাসের অগ্রীম ভাড়া জমা দিতে আসলে আমি বলি, ভোটার আইডি কার্ড না দিলে আমি তাকে ভাড়াটিয়া হিসেবে রাখবো না এবং এক সপ্তাহের মধ্যে আমি ওই ভাড়াটিয়াকে ঘর ছেড়ে দিতে বলি। সে অনুযায়ী জাবেদ তার ভাড়াটিয়া ফ্লাটে আনা ফার্নিচার অন্যত্র স্থানান্তর করে চলে যায়। সর্বশেষ গত ১৪ সেপ্টেম্বর দুপুরে এনাম ও রুহেল ফয়জুল হক একদল লোককে নিয়ে তার বাসায় এসে বলেন যে, উক্ত ভাড়াটিয়া জাবেদ নাকি তার কাছ থেকে প্রতারণা করে ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এসময় তারা নিজেদেরকে সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী বলে পরিচয় দেয়। খবর পেয়ে পুলিশও ঘটনাস্থলে আসে। এ সময় স্থানীয়রা তাদের বাসা থেকে তাড়িয়ে দেন। পরে তারা ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে বলে, তাদের চাঁদা না দিলে তারা ফয়জুল হককে দিয়ে আমার বিরুদ্ধে থানায় মামলা করাবে।’
তিনি বলেন, এ হুমকির পরদিন মোগলাবাজার থানায় একটি মামলা দায়ের করেন বালাগঞ্জ উপজেলার চাঁনপুর গ্রামের বাসিন্দা ফয়জুল হক (৩৫)। এ মামলায় তিনিসহ তার শ্বশুড় ও গোটাটিকর এলাকার তরুণ সমাজসেবী সিরাজুল ইসলাম কুনু মিয়াকে ৬ নং আসামী করা হয়। পরে আইনজীবীদের পরামর্শে গত ১৭ সেপ্টেম্বর এই মামলায় তারা তিনজন জামিন নিয়েছেন।’
তিনি বলেন, কোন তদন্ত ছাড়াই রহস্যজনকভাবে দ্রুত মামলা রেকর্ড করেন মোগলাবাজার থানা কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে তিনি গত ৩০ সেপ্টেম্বর সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের প্রবাসী কল্যাণ সেলে অভিযোগ দায়েরও করেছেন। তদন্ত সাপেক্ষে তিনি জালিয়াত-চাঁদাবাজ চক্রের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনারসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আবুল কালাম, আব্দুল মালেক, আব্দুল আলী, তারেক আহমদ, রজব আলী, সিরাজুল ইসলাম কুনু মিয়া, আবু বকর সেলিম প্রমুখ।