কাজিরবাজার ডেস্ক :
ক্যাসিনো-কাণ্ডে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে সুনামগঞ্জ-১ আসনের সরকারদলীয় সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদক বলছে, সাংসদ রতনের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিংসহ বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে।
বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত চিঠি পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) বিশেষ পুলিশ সুপার (ইমিগ্রেশন) বরাবর পাঠানো হয়েছে।
দুদক সূত্র জানায়, দুদকের এ সংক্রান্ত অনুসন্ধান দলের প্রধান ও সংস্থাটির পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন এ চিঠি পাঠিয়েছেন।
চিঠিতে বলা হয়েছে, মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে দেশে মানিলন্ডারিংসহ বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ আছে। এ বিষয়ে দুদকের অনুসন্ধানে বিষয়টির প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। বিশ্বস্ত সূত্রে দুদক জেনেছে, অভিযোগসংশ্লিষ্ট ওই সাংসদ দেশ ছেড়ে অন্য দেশে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তাই তিনি যাতে দেশ ছেড়ে যেতে না পারেন, সে বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এর আগে বুধবারও ২২ জনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দুদক। দুদক সূত্র জানায়, অনুসন্ধানে যাদের বিরুদ্ধে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যাবে, তাদের সবারই বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে।
সূত্রে জানা গেছে, এসব ব্যক্তি যেন দেশত্যাগ করে পালিয়ে যেতে না পারে সেজন্য ইতিমধ্যে দেশের সীমান্তগুলোতে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি ইমিগ্রেশন বিভাগকেও সতর্ক করা হয়েছে। ভারতগামী পাসপোর্টধারী যাত্রীদের নাম-ঠিকানা যাচাই ও পাসপোর্টের সঙ্গে তাদের ছবি মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। আর জাল পাসপোর্ট ব্যবহার করতে না পারে সেজন্য যাত্রীদের আঙুলের ছাপ নেয়ার পাশাপাশি তুলে রাখা হচ্ছে ছবি।
বুধবার বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন ভোলা-৩ আসনের সাংসদ নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, চট্টগ্রামের সাংসদ ও জাতীয় সংসদের হুইপ শামসুল হক চৌধুরী।
ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর পর চট্টগ্রামে চালানো অভিযান নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এমপি সামসুল হক। তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম আবাহনী ক্লাবে জুয়ার আসর বসিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থের মালিক হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া এমপি শাওনের বিরুদ্ধে ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে। এরপর, বাংলাদেশ ব্যাংক এমপি শাওন ও তার স্ত্রী ফারজানা চৌধুরীর ব্যাংক হিসাব স্থগিত করে।
এছাড়াও গ্রেপ্তার হওয়া কথিত যুবলীগ নেতা এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীম, মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, মোহামেডান ক্লাবের ডাইরেক্টর ইনচার্জ মো. লোকমান হোসেন ভূঁইয়া, ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, সম্রাটের সহযোগী এনামুল হক আরমান, কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের সভাপতি মোহাম্মদ শফিকুল আলম (ফিরোজ), অনলাইন ক্যাসিনোর হোতা সেলিম প্রধান এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমানের (মিজান) বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়।
আরও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয় গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এনামুল হক ও তাঁর ভাই গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক রূপন ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় যুবলীগের বহিষ্কৃত দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিছুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী সুমি রহমান, লোকমান হোসেন ভূঁইয়ার স্ত্রী নাবিলা লোকমান, গণপূর্ত অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আবদুল হাই, ওয়ার্ড কাউন্সিলর এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ এবং এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদারের বিদেশযাত্রায়।
এ ছাড়া এনামুল হকের সহযোগী ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের কর্মচারী আবুল কালাম আজাদ (আজাদ রহমান), রাজধানীর কাকরাইলের জাকির এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. জাকির হোসেন ও সেগুনবাগিচার শফিক এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. শফিকুল ইসলামের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনোকা-ে জড়িত ব্যক্তিদের সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের অনুসন্ধান দল গঠন করে। পরে আরও দুজনকে দলে যুক্ত করা হয়। অনুসন্ধান দলের সদস্যরা গণমাধ্যমে আসা বিভিন্ন ব্যক্তির নাম যাচাই-বাছাই করে একটি প্রাথমিক তালিকা তৈরি করেন। সংস্থার গোয়েন্দা শাখার পক্ষ থেকে এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হয়। পাশাপাশি র্যাব ও বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধানেরা দুদক চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করে বিপুল পরিমাণ গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করেন। সেসব তথ্য ও কাগজপত্র যাচাই–বাছাই করে গত সোমবার জি কে শামীম ও খালিদ মাহমুদ ভূঁইয়া এবং বুধবার গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এনামুল হক ও তাঁর ভাই গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক রূপন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে আলাদা আলাদা মামলা করে দুদক দল।