ন্যায় বিচারে প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ়তা

11

বিদেশ সফর শেষে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দেশের মানুষকে সার্বিক বিষয় অবহিত করার সংস্কৃতি সমুন্নত রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলাই বাহুল্য, এমন সুযোগ হাতছাড়া করেন না সাংবাদিকরা। তারা সরকারপ্রধানের বিদেশ সফরের অভিজ্ঞতা ও অর্জনের বাইরে দেশের সাম্প্রতিক ইস্যু নিয়েও প্রশ্ন উত্থাপন করে থাকেন। যিনিই প্রশ্ন করুন না কেন, কিংবা যে জিজ্ঞাসাই উপস্থাপিত হোক না কেন প্রধানমন্ত্রী তার কোনটিই এড়িয়ে যান না। বরং তিনি বিশদভাবেই প্রেক্ষাপটসহ সব কৌতূহলের জবাব দেন। বিষয়ছুট প্রশ্নও যে আসে না, তা নয়। তিনি চাইলে সরাসরি তা নাকচ কিংবা সুকৌশলে এড়িয়ে যেতে পারেন। কিন্তু তা করেন না, সদুত্তর প্রদান করে থাকেন। তাই বিদেশ থেকে ফিরে আসার পর আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের দিকে তাকিয়ে থাকে দেশের সচেতন নাগরিক সমাজ। বুধবার গণভবনে এমনই এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী স্বভাবসুলভ দৃঢ়তা এবং ক্ষেত্রবিশেষে রসিকতার সুরে তার কাছে উত্থাপিত সব প্রশ্নেরই উত্তর দেন। তবে অস্বীকার করার কিছু নেই যে, ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরশেষে আয়োজিত এ সম্মেলনে তিনি অর্জিত সাফল্যগুলো তুলে ধরলেও বেশি প্রশ্ন এসেছে ভারতকেন্দ্রীক এবং বুয়েট-ছাত্র হত্যার প্রসঙ্গে।
দীর্ঘ প্রতীক্ষিত তিস্তা নদীর পানিবণ্টনে এখন পর্যন্ত কোন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়নি। পক্ষান্তরে ফেনী নদীর পানি দেয়া নিয়ে চুক্তি হয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে এ দুটি অসম ও দূরবর্তী বিষয়কে এক করে দেখা ও গভীরভাবে বিশ্লেষণ না করে মনগড়া ধারণা নিয়ে নেতিবাচক দিক প্রাধান্য দেয়ার প্রবণতা রয়েছে অনেকেরই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে বিষয়টি অনুমান করতে কষ্ট হয় না। ফলে সাংবাদিকরাও বিষয়টি তার সামনে উপস্থাপন করেন। শুধু নদীর পানি বিষয়েই নয়, গ্যাস নিয়েও কথা ওঠে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বহুল আলোচিত ও সাধারণের মাঝে অযথা ভুল বোঝাবুঝির এ দুটি বিষয় খুব সুন্দরভাবেই খোলাসা করে দেন। বুয়েটে পিটিয়ে ছাত্রহত্যা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য স্বচ্ছ। হত্যার দায়ে আটক বুয়েটের ছাত্রলীগ নেতাদের ব্যাপারে ক্ষমাহীনতার কঠোর মনোভাব ব্যক্ত করে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আশ্বস্ত করেছেন তিনি। অপরাধ যে করে সে অপরাধীই, সে যে দলেরই হোক না কেন যথাযোগ্য শাস্তি তার প্রাপ্য। প্রধানমন্ত্রীর এই ন্যায্য ও নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ক্ষমতাসীন দলের অনুসারীরাও স্পষ্ট বার্তা পাবে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচিত সরকারপ্রধানের এ ধরনের দৃঢ়তা আগে দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেনি।
প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন থেকে এটি অত্যন্ত পরিষ্কার যে, সরকার দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় অঙ্গীকারবদ্ধ। এখানে নিজ দলের অপরাধীর প্রতি কোন ধরনের দুর্বলতা বা অনুকম্পার সুযোগ নেই। অপরদিকে ভারত আমাদের পরম মিত্র ও প্রতিবেশী রাষ্ট্র হলেও বঙ্গবন্ধুকন্যার পক্ষে নিজ দেশের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে কোন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ একেবারেই অসম্ভব। তাই প্রতিপক্ষ বা বিরোধী শক্তির অপপ্রচার, অপযুক্তি কোন কাজে আসবে না। মানুষকে সময়িকভাবে হয়তো বিভ্রান্ত করা যায়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সততা ও দেশপ্রেমই জয়ী হয়ে থাকে।