স্বল্পোন্নত বা উন্নয়নশীল দেশে উন্নয়ন উদ্যোগের অন্যতম লক্ষ্য দারিদ্র্য বিমোচন। আর্থিক প্রবৃদ্ধি বাড়ার সঙ্গে দরিদ্র লোকের সংখ্যাও যাতে কমে সে উদ্দেশ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি উন্নয়নপ্রক্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত করতে হয়, না হলে উন্নয়ন সুষম হয় না। ২০১০ সালের পর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার বেড়েছে। দারিদ্র্যও কমেছে। তবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও দারিদ্র্য বিমোচনে একই গতি লক্ষ করা যাচ্ছে না। বিশ্বব্যাংকের ‘বাংলাদেশ পভার্টি অ্যাসেসমেন্ট’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি যত দ্রুত হচ্ছে, দারিদ্র্য বিমোচন সেই গতিতে হচ্ছে না। এখনো প্রায় চার কোটি মানুষ দরিদ্র। অর্থাৎ প্রতি চারজনে একজন বা ২৫ শতাংশ লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে রয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের এ প্রতিবেদনের পর বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ সৃষ্টি হয়েছে। গত বছর পরিকল্পনামন্ত্রী জানিয়েছিলেন, সার্বিক দারিদ্র্যের হার ২১.৮ শতাংশে নেমেছে। ২০১৭ সালে সার্বিক দারিদ্র্যের হার ছিল ২৩.১ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১০ সালের খানা আয় ও ব্যয় জরিপ অনুযায়ী, সার্বিক দারিদ্র্যের হার ছিল ৩১.৫০ শতাংশ। বিবিএসের ২০১৬ সালের জরিপে দেখা যায়, সার্বিক দারিদ্র্য কমে ২৪.৩ শতাংশে নেমেছে। উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম বলেছিলেন, ২০১০ সালে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ১৮.৫ শতাংশে নেমেছে। অন্যদিকে বিবিএসের পরিসংখ্যান অনুসারে ২০১০ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল ১৭.৬ শতাংশ। মোটকথা, দারিদ্র্যের হার নির্ধারণে কিছু গড়বড় রয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী দ্বিমত জানিয়ে বলেন, প্রদত্ত তথ্য-উপাত্ত হালনাগাদ নয়। সর্বশেষ তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করলে দারিদ্র্য বিমোচনের চিত্র আরো ভালো হতে পারত। তাঁর এ কথা বিবেচনার দাবিদার। যা হোক, বিশ্বব্যাংক ও সরকার উভয় পক্ষের হিসাবেই কিছু গড়বড় রয়েছে। দারিদ্র্যের হার যথাযথভাবে নির্ধারিত হওয়া উচিত। কারণ তথ্য-উপাত্তের যথার্থতার ওপর যথাযথ কৌশল নির্ধারণের বিষয়টি নির্ভরশীল। দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশ যে সফলতা দেখিয়েছে, তাতে সন্দেহ নেই। বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রিপ্রধান মার্সি টেম্বনও বলেছেন, বাংলাদেশ বিগত দশকে দারিদ্র্য বিমোচনে ব্যাপক সাফল্য দেখিয়েছে। তবে যে হারে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, সে হারে দারিদ্র্য কমছে না। শহরে দারিদ্র্য কমেছে সীমিত হারে। দারিদ্র্য বিমোচনের ৯০ শতাংশই হয়েছে গ্রামে।
সরকারের উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচন কার্যক্রম প্রশংসনীয়। তবে সরকার ও অন্যান্য পক্ষ থেকে তথ্যের যথার্থতা নিশ্চিত করা উচিত। অর্জনকে পোক্ত করার প্রক্রিয়াগুলোও চালু রাখতে হবে। কেননা দারিদ্র্য কমার পরও পশ্চাদ্গতির শঙ্কা থাকে। সরকারকে এদিকে নজর রাখতে হবে।