সিলেট সেনানিবাসে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী দিবস উদযাপন ॥ শান্তিরক্ষী মিশনে অংশগ্রহণের ফলে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বলতর হয়েছে

31
আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা দিবস উপলক্ষে সেনাবাহিনীর সিলেট এরিয়া ১৭ পদাতিক ডিভিশনের ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী করছেন অতিথিবৃন্দ। ছবি- রেজা রুবেল

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে কর্মরত সদস্যরা বৈশ্বিক শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যে আত্মত্যাগ করেছেন তা স্মরণীয় করে রাখতে সারাবিশ্বের মতো সিলেটে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা দিবস উদযাপিত হয়েছে। গতকাল বুধবার (২৯ মে) দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সিলেট এরিয়া ও ১৭ পদাতিক ডিভিশনের ব্যবস্থাপনায় সেনানিবাসের শহীদ মেজর কাজী মোসাদ্দেক হোসেন মাল্টিপারপাস হল- এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী ও পুলিশের যে সকল সদস্য জাতিসংঘের বিভিন্ন মিশনে দায়িত্ব পালনকালে শহীদ বা পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন তাদেরকে এবং তাদের পরিবারকে সম্মান জানানো হয়। এর আগে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ১৭ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও সিলেটের এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল এস এম শামিম উজ জামান, বিএসপি, এনডিসি, পিএসসিসহ আগত অতিথিরা।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সিলেটের ডিআইজি মো. কামরুল আহসান, বিমানবাহিনীর প্রতিনিধি ক্যাপ্টেন আবু জাহিদ, জাতিসংঘের প্রতিনিধি এ এ কামরুল এ এ কামরুল আলম অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। তারা জাতিসংঘ মিশনে নিজ নিজ বাহিনী ও প্রতিষ্ঠানের অবদানের কথা তুলে ধরেন। এসময় সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. গোলাম কিবরিয়াসহ সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, পুলিশ কর্মকর্তা, গণমাধ্যমের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ১৭ আর্টিলারি ব্রিগেড কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তায়েফ উল হক।
প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বিশ্ব শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের আত্মত্যাগ ও বীরত্বের কথা উল্লেখ করে মেজর জেনারেল শামীম উজ জামান বলেন, একত্রিশ বছর ধরে পেশাদারিত্ব, কর্তব্যনিষ্ঠা এবং অভিজ্ঞতার কারণে আজ বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা আদর্শ হিসাবে স্বীকৃত।
তিনি আরো বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর দুরদর্শীতা, সংবিধানের দিক নির্দেশনা, মহামান্য রাষ্ট্রপতির অনুপ্রেরণা এবং প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য নেতৃত্বে বিশ্ব শান্তিরক্ষী কার্যক্রমে আমাদের শান্তিরক্ষীদের অবদান উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।
জিওসি আরও বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শক্তহাতে যুদ্ধবিধ্বস্ত এই দেশের হাল ধরেন। এরই ফলশ্রুতিতে ১৯৭৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করে। ২৫ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু প্রথববার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বক্তৃতা করেন এবং বিশ^ শান্তির পক্ষে বাংলাদেশের সুদৃঢ় অবস্থানের কথা ব্যক্ত করেন। ১৯৮৮ সালে ১৫ সদস্যের প্রথম বাংলাদেশী শান্তিরক্ষী দল জাতিসংঘের সামরিক শান্তিরক্ষী অভিযানে অংশগ্রহণ করে।
প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, মিশন শুরু হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের গর্বিত শান্তিরক্ষীরা ৪টি মহাদেশের ৪০টি দেশে ৫৪টি সফল শান্তিরক্ষা অভিযান সম্পন্ন করেছে। নিজেদের নিষ্ঠা, দায়িত্ববোধ, কর্তব্যপরায়ণতা এবং শৃংখলার উচ্চমানে ইতোমধ্যে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা বিশে^র দরবারে বাংলাদেশকে নিয়ে গেছে এক অনন্য উচ্চতায়। এতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌ ও বিমান বাহিনী এবং পুলিশ বাহিনীর ১ লক্ষ ৬৩ হাজার ৮৮৭জন সদস্য অংশগ্রহণ করেছে। এর মধ্যে ১৬০৯ জন মহিলা শান্তিরক্ষ্মী মিশনে অংশগ্রহণ করে সফলতার সঙ্গে কাজ করেছেন। বর্তমানে ২১৪ মহিলা শান্তিরক্ষা মিশনে মোতায়েন রয়েছেন।
তিনি বলেন, বর্তমানে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে মোট ৮টি দেশে ৬ হাজার ৫৮২ জন সামরিক ও পুলিশ সদস্য নিয়োজিত আছেন। শান্তিরক্ষার এই সুমহান দায়িত্ব পালনকালে বিভিন্ন সময়ে সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশের সর্বমোট ১৪৬ জন সদস্য জীবনোৎসর্গ করেছেন এবং ২২৭ জন সদস্য পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন।
১৭ পদাতিক ডিভিশন প্রধান বলেন, জাতিসংঘের সাধারণ সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে আরো অধিক সংখ্যক বাংলাদেশী শান্তিরক্ষী প্রেরণ এবং গুরুত্বপূর্ণ পদসমূহে আরো অধিক সংখ্যক বাংলাদেশী নিশ্চিত করার জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের কারণে বিশ^ দরবারে দেশের ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বলতর হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রমাণ করে যে বিশ^ শান্তি রক্ষায় আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। জাতিসংঘ এবং বিশে^র অন্যান্য সংস্থায় আমাদের অবস্থান সুদৃঢ় হয়েছে শান্তিরক্ষী মিশনে কাজ করার সুবাদে। বিশে^র প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে ভূমিকা পালন করে চলেছে। তাই, আজ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ এক অনন্য নাম। বিজ্ঞপ্তি