চার দিনের নয়াদিল্লি সফর শেষে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরেছেন। নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের অধিবেশনের পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর এই সফর নিয়ে সব মহলেই ব্যাপক আগ্রহ ছিল। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফরটি দ্বিপক্ষীয় সফর ছিল না। তিনি ভারতে গিয়েছিলেন ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বৈঠকে অংশ নিতে। সেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকটি হয়েছে মূলত ভারতেরই আগ্রহে।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক দিনে দিনে নতুন মাত্রা পেয়ে একটি অসামান্য উচ্চতায় পৌঁছেছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে এখন অমীমাংসিত তেমন কোনো ইস্যু নেই। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের ভারত সফরে ফেনী নদীর পানি ভারতের ত্রিপুরায় সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে একটি চুক্তি হলেও দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে সুস্পষ্ট কোনো প্রতিশ্রুতি মেলেনি। অবশ্য ফেনী নদীর পানি ত্রিপুরায় নেওয়ার ব্যাপারে আরো আগে থেকেই দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা ছিল, এবারের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের মধ্য দিয়ে তা আনুষ্ঠানিকতা পেল। নয়াদিল্লিতে শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এটি ছাড়াও ছয়টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এ ছাড়া দুই প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করেছেন তিনটি যৌথ প্রকল্প। এর মধ্যে দুটি বাংলাদেশের খুলনা ও ঢাকায় ভারতের অর্থায়নে নির্মিত; আরেকটি বাংলাদেশ থেকে ত্রিপুরায় এলপিজি নেওয়ার প্রকল্প। রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার সঙ্গে দ্রুত মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রীও একমত হয়েছেন। চেন্নাইয়ে বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশন প্রতিষ্ঠায়ও সায় মিলেছে। বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের ক্ষেত্রে দুই দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধির বিষয়টি এবারের বৈঠকে বিশেষভাবে গুরুত্ব পেয়েছে।
দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে আনুষ্ঠানিক বৈঠক শেষে দেওয়া যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বৈঠকে উভয় নেতা দুই দেশের ‘অসাধারণ’ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে ‘সন্তোষ’ প্রকাশ করেছেন। ঐতিহাসিক ও ভ্রাতৃত্বমূলক সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা সম্পর্ক দুই দেশের সব ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় অংশীদারিত্ব গড়ে তুলেছে, যা ‘স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপকে’ ছাড়িয়ে গেছে। যদিও যে বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশে উদ্বেগ রয়েছে সেই বহুল আলোচিত আসামের নাগরিকপঞ্জির প্রসঙ্গ যৌথ বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়নি। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘২০১১ সালে দুই সরকারের সম্মতি অনুযায়ী তিস্তা নদীর পানি বণ্টনে ফ্রেমওয়ার্ক অব ইন্টেরিম অ্যাগ্রিমেন্ট আশু স্বাক্ষর ও বাস্তবায়নে’ বাংলাদেশের মানুষের অপেক্ষার কথা তুলে ধরেন। জবাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ‘সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে’ এই চুক্তি নিয়ে সমাধানে পৌঁছাতে ভারতের সব অংশীদারের সঙ্গে কাজ করছে তাঁর সরকার।
প্রধানমন্ত্রীর এই সফরের পর দুই দেশের ঐতিহাসিক বন্ধুত্ব ও সম্পর্ক আরো দৃঢ় হবে বলে আমরা মনে করি।