এক টানা ক্ষমতায় থাকার সুফল পাচ্ছে জনগণ – প্রধানমন্ত্রী

8
হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফিতা কেটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে যুক্ত হওয়া চতুর্থ ড্রিমলাইনার ‘রাজহংস’ উদ্বোধন করে মোনাজাত করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একটানা ক্ষমতায় থাকার কারণেই দেশের উন্নয়ন হচ্ছে, সুফল পাচ্ছে জনগণ। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এরই মধ্যে আমাদের ১০টি প্লেন চলে এসেছে। অরুণ আলো, গাঙচিল, পালকি, হংসবলাকা, আকাশ প্রদীপ, রাঙা প্রভাত, মেঘদূত, আকাশবীণা, ময়ূরপঙ্খী ও রাজহংস। এসব নামকরণ আমি করেছি। আমরা চেয়েছি, একটা সুন্দর নামকরণ হোক।
মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের (এইচএসআইএ) ভিভিআইপি টারমাকে নতুন উড়োজাহাজ ‘রাজহংস’ উদ্বোধন শেষে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
এর আগে বিমানের বহরে যুক্ত হওয়া অত্যাধুনিক প্রযুক্তির চতুর্থ ও শেষ ড্রিমলাইনার ‘রাজহংস’ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অন্য তিনটি ড্রিমলাইনারের মতো রাজহংসের আসন সংখ্যা ২৭১টি। বিজনেস ক্লাস ২৪টি আর ২৪৭টি ইকোনমি ক্লাস। বিজনেস ক্লাসে ২৪টি আসন ১৮০ ডিগ্রি পর্যন্ত রিক্লাইন্ড সুবিধা এবং সম্পূর্ণ ফ্ল্যাটবেড হওয়ায় যাত্রীরা স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে ভ্রমণ করতে পারবেন। বিমানটিতে যাত্রীরা অন্যান্য আধুনিক সুবিধা, ইন্টারনেট ও ফোন করার সুবিধাও পাবেন।
উদ্বোধন শেষে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খবর পেয়েছি যুক্তরাষ্ট্রের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং আরো দুটি বিমান বিক্রি করবে। তাদের কাছে বিমান নির্মাণের ওয়ার্ডার দিয়ে নেয়নি। কাজেই আমরা সেই সুযোগটা নেব। আমাদের রিজার্ভ মানি যথেষ্ট ভালো অবস্থায় আছে। আমাদের যে রিজার্ভ মানি আছে, তাতে আমার মনে হয় নিজেদের টাকায় কিনতে পারব, কোনো সমস্যা হবে না।
এ সময় রিজার্ভ মানির বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, রিজার্ভ হিসাব করি আমরা এই কারণে যে, কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা কোনো দুর্বিপাক দেখা দিলে আমাদের যদি খাদ্য কিনতে হয়, তাহলে যেন তিন মাসের খাদ্য আমরা কিনতে পারি সেই পরিমাণ অর্থ আমার জমা থাকতে হবে। এর অতিরিক্ত রেখে দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। সেটি আমি উন্নয়নে কাজে লাগাতে পারি। সেই দিক থেকে আমরা খুব ভালো একটা অবস্থানে আছি। এখানে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। তাছাড়া খাদ্য উৎপাদনে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি। কাজেই খুব একটা যে আমরা বিপদে পড়ব তা নয়।
তিনি বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করার জন্য আমাদের যে পরিমাণ খাদ্যশস্য রাখা দরকার সে পরিমাণ আমরা মজুদ রেখেছি। কোনো অসুবিধা হবে না। আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা করে রেখেছি।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে নিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, বিমানের যে অবস্থা ছিল সেটি আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আমরা যখন বাহিরে যেতাম বা বিশেষ করে লন্ডনে বা আমেরিকায় যাওয়া হতো তখন বিমান ব্যবহার করতাম। তখন বিমানের যে ঝরঝরে অবস্থা ছিল, আগে প্লেনে উঠলে পানি পড়ত, টিস্যু দিয়ে পানি পড়া বন্ধ করা হতো, কোনো এন্টারটেইমেন্টের ব্যবস্থাই ছিল না। মাঝে মাঝে আমি ককপিটে যেতাম, কথা বলতাম। কারণ আমি ভাবতাম এ রকম একটা ঝরঝরে অবস্থায় প্লেন কীভাবে আমাদের পাইলটরা চালান।
আমি বলতাম যে, আমাদের পাইলটদের বিশ্বসেরা পাইলট হিসেবে তাদের স্বীকৃতি দেওয়া উচিত এই ধরনের একটা ঝরঝরে প্লেন চালানোর জন্য। মাঝে মাঝে আমরা ঠাট্টা করতাম যে, আমাদের ঢাকা শহরে এক সময় যে বাসগুলো চলতো সেগুলো খুবই বিধ্বস্ত অবস্থায় ছিল। সেগুলোকে আমরা ডাকতাম মুড়ির টিন বলে। এ রকম একটা অবস্থা ছিল আমাদের বিমানে।
শেখ হাসিনা বলেন, স্বাভাবিকভাবেই বিরোধী দলে ছিলাম তখন কিছু করার ক্ষমতা ছিল না। কিন্তু মনে মনে একটা আকাক্সক্ষা ছিল যে, যখনই সময় পাব এ অবস্থা থেকে বিমানের উত্তরণ ঘটাব।
তৎকালীন বিএনপি সরকারের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তখন যারা ক্ষমতায় ছিল তখন দেশের দিকে তাকানো, জনগণের দিকে তাকানো বা দেশের অবস্থান দেখার খুব একটা দৃষ্টি ছিল না। যেহেতু তাদের ক্ষমতা দখল ছিল অবৈধভাবে প্রেসিডেন্সির ক্ষমতা নিয়েছিল, তাই স্বাভাবিকভাবেই তাদের সেই ক্ষমতা নিষ্কণ্টক করার দিকে যতটা দৃষ্টি ছিল, ততটা দৃষ্টি দেশের উন্নয়নে ছিল না। তারা শুধু রুটিন ওয়ার্ক করে যেত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই অবস্থান থেকে উত্তোরণ ঘটানোর জন্য যখনই আমরা ক্ষমতায় এসেছি, আমরা প্রচেষ্টা চালিয়েছি। আজকে বাংলাদেশ একটা উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিশ্বে স্বীকৃতি পেয়েছে। আমাদের প্রবৃদ্ধি অর্জন অনেক বেশি। অনেক দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি। এখন বিমানে উঠলে গর্বে বুক ভরে যায়। আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সরকারি অফিসাররা যে যেখানেই যান, বাংলাদেশ বিমানেই যেতে হবে।
উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে মার্কিন উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং কোম্পানির সঙ্গে ১০টি নতুন উড়োজাহাজ কেনার চুক্তি করে বিমান। এর মধ্যে চারটি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর, দুটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ ও সবশেষ ‘রাজহংস’ আসায় চারটি বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ বিমানবহরে যোগ হলো। এর মধ্য দিয়ে সম্পাদিত চুক্তির ১০টি উড়োজাহাজের সবই বুঝে পেল বিমান। একটানা ১৬ ঘণ্টা উড়তে পারে ড্রিমলাইনার। এটি চালাতে অন্যান্য বিমানের তুলনায় ২০ শতাংশ জ্বালানি কম লাগে।