কাজিরবাজার ডেস্ক :
মিয়ানমারে সেনাবাহিনী বেশি দিন ক্ষমতা ধরে রাখবে না, নির্বাচন দিয়ে বিজয়ীদের হাতে নিয়মমাফিক ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে বলে গ্যারান্টি দিয়েছে দেশটির নতুন জান্তা সরকার। মিয়ানমারে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাতের পর সামরিক জান্তার প্রথম সংবাদ সম্মেলনে এ আশ্বাস দিয়েছেন রুলিং কাউন্সিলের মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জ মিন তুন।
তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য একটি নির্বাচন আয়োজন করে বিজয়ী দলের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা।
এদিনও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে নতুন নির্বাচনের নির্দিষ্ট কোনো তারিখ জানানো হয়নি। তবে অভ্যুত্থানের পরপরই এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিল তারা।
অবশ্য জ মিন তুন দাবি করেছেন, দেশটিতে জান্তা সরকার খুব বেশি দিন ক্ষমতা ধরে রাখবে না। তিনি বলেন, আমরা গ্যারান্টি দিচ্ছিৃ নির্বাচন হবে।
রাজধানী নেপিদোয় প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী এ সংবাদ সম্মেলন ফেসবুকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। কিন্তু সাধারণ মানুষজন সেটি দেখতে পাননি। কারণ দেশটিতে বিশ্বের বৃহত্তম এ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ রয়েছে।
এদিন অং সান সু চি এবং প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টকে আটকের বিষয়ে প্রশ্ন করলে বিষয়টি পুরোপুরি মিথ্যা বলে দাবি করেন জান্তা সরকারের মুখপাত্র। তার কথায়, এসব নেতা নিরাপত্তার খাতিরে নিজেদের বাড়িতেই রয়েছেন।
জ মিন তুন আরও বলেছেন, জান্তা সরকারের অধীনে মিয়ানমারের পররাষ্ট্রনীতি পরিবর্তিত হবে না। সকল ব্যবসা এবং চুক্তি আগের মতোই চলবে।
গত ১ ফেব্রুয়ারি সু চিসহ দেশটির শীর্ষ নেতাদের আটকের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের প্রতিবাদে বিক্ষোভকারীদের ওপর শক্ত ব্যবস্থা নিলে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জাতিসংঘ ‘কঠোর পরিণতি’র হুঁশিয়ারি দেওয়ার পরপরই সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানালো জান্তা সরকার।
দেশটিতে টানা ১০ দিন সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছে সাধারণ মানুষজন। এর মধ্যে বেশ কয়েকবার জনতা-পুলিশ সংঘর্ষ হয়েছে। নিরাপত্তাবাহিনী বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালালেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা ছিল রাবার বুলেট।
গত সপ্তাহে নেপিদোয় বিক্ষোভরত এক নারীর মাথায় গুলি লাগে। তার অবস্থা এখনও সংকটাপন্ন। জ মিন তুন বলেছেন, বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে এক পুলিশ কর্মকর্তা প্রাণ হারিয়েছেন।
বিক্ষোভকারীদের প্রতি হুঁশিয়ারি দিয়ে এ সেনা কর্মকর্তা বলেছেন, আমরা ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করব। এরপর আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেব।
ইতোমধ্যে সেনাশাসনবিরোধী বিক্ষোভ দমনে আইন সংশোধন করেছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। কেউ সশস্ত্র বাহিনীর কাজে বাধা দিলে ২০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে তারা। এছাড়া নতুন আইনে কেউ অভ্যুত্থানকারী নেতাদের বিরুদ্ধে ‘ঘৃণা বা অপমানসূচক’ কিছু প্রকাশ করলেই দীর্ঘমেয়াদী কারাদণ্ড বা মোটা অংকের জরিমানার মুখে পড়তে পারেন বলে ঘোষণা দিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী।
তবে এ হুঁশিয়ারিকে পাত্তা না দিয়ে মঙ্গলবারও রাস্তায় নেমেছে মিয়ানমারের সাধারণ মানুষ। এদিন বিক্ষোভকারীরা প্ল্যাকার্ড হাতে অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থনে ইয়াংগুন ও দক্ষিণাঞ্চলীয় মউলামিনের রেললাইনে অবস্থান নেয়। এতে রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
এ সময় তারা ‘আমাদের নেতাদের মুক্তি দাও’, ‘জনতার ক্ষমতা ফিরিয়ে দাও’ বলে স্লোগান দেন।
ইয়াংগুনের আরও দুটি স্থান- প্রধান বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছেও বিক্ষোভকারীরা জড়ো হন। শহরটিতে প্রায় ৩০ জন বৌদ্ধ ভিক্ষু প্রার্থনার মাধ্যমে অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন।
এছাড়া, পশ্চিম উপকূলীয় শহর থানডওয়েতে মিছিল করেছেন কয়েকশ’ বিক্ষোভকারী।