ক্যান্সার চিকিৎসা কেন্দ্র নির্মাণ হোক

9

দেশে ক্যান্সারে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির হার উদ্বেগজনক। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাই এ কথা বলছেন। প্রতিবছর প্রায় দেড় লাখ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। দেশে এ রোগের চিকিৎসার জন্য যে ব্যবস্থা রয়েছে, তা অপ্রতুল। অন্যদিকে এর চিকিৎসা করতে হয় দীর্ঘ মেয়াদে এবং তা অনেক ব্যয়বহুল। চিকিৎসার খরচ মেটাতে গিয়ে জমিজমা বিক্রি করে অনেকে নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন।
সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে এখন ক্যান্সার চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। সরকারি হাসপাতাগুলো হাসপাতাল-সুবিধা বিনা মূল্যে পাওয়া গেলেও জরুরি ওষুধ বিনা মূল্যে পাওয়া যায় না। বাজার থেকে কিনতে হয় উচ্চমূল্যে। মূলত ওষুধের উচ্চমূল্যের কারণেই সাধারণ মানুষের জন্য এ রোগের চিকিৎসা করানো অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। বেসরকারি হাসপাতালে খরচের কী অবস্থা সে কথা সবার জানা। তাই খরচ কমাতে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি সামাজিক সহযোগিতাও দরকার। আবার চিকিৎসার যেসব ব্যবস্থা রয়েছে, তার প্রায় শতভাগ রাজধানীতে। ফলে যাতায়াত বাবদও প্রচুর টাকা খরচ করতে হয়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে যাঁরা ঢাকায় চিকিৎসা নিতে আসেন, খরচের চাপে তাঁদের নাভিশ্বাস ওঠে।
যাঁদের পর্যাপ্ত অর্থ আছে তাঁরা ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য বিদেশে যান বা বেসরকারি হাসপাতালে যান। কিন্তু মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সরকারি হাসপাতালই ভরসা। ঢাকায় জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউটে একটি ৩০০ শয্যার হাসপাতাল রয়েছে। সেখানে যাঁরা চিকিৎসা পাওয়ার জন্য যান তাঁদের বেশির ভাগই নিম্ন আয়ের মানুষ। সেখানে আবার ব্যবস্থাপনাগত সমস্যা রয়েছে; সময়মতো চিকিৎসা পাওয়ার জন্য অনেক ভোগান্তি সইতে হয়। সরকারি হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা-সংকট, বেসরকারি হাসপাতালের ব্যয়-উপদ্রব এবং ওষুধের উচ্চমূল্য প্রভৃতি বিষয়ে নিবিড়ভাবে ভাবা উচিত।
এটা খুবই আশাব্যঞ্জক খবর যে সরকার বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে একনেক সভায় দেশের প্রতিটি বিভাগে সরকারি হাসপাতালে একটি করে ক্যান্সার চিকিৎসা কেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ‘বিভাগীয় শহরে সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ ক্যান্সার চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন’ শিরোনামের প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ২০২২ সালের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে। গ্রামের মানুষের জন্য চিকিৎসাসেবা সহজ করতে সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে পরিকল্পনামন্ত্রী জানিয়েছেন।
সিদ্ধান্তটি সময়োপযোগী এবং জনবান্ধব। দেশে এখন অনেক ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ রয়েছেন, ক্যান্সার নির্ণয়েও অগ্রগতি হয়েছে। এসব সুবিধা ঢাকার বাইরেও সহজলভ্য করা উচিত। তাতে রোগীদের খরচ অনেক কমবে, ভোগান্তিও কমবে। সময়োপযোগী এ সিদ্ধান্তের জন্য সরকারকে ধন্যবাদ। আমরা আশা করি, নির্মাণকাজ যথাসময়ে সম্পন্ন হবে।