বাংলাদেশের নাগরিকত্বের একটি প্রমাণ জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডি। পাসপোর্ট পাওয়া, ব্যাংকে হিসাব খোলা, ব্যবসা করাসহ বহু কাজে এর প্রয়োজন। এনআইডি প্রদানের দায়িত্ব নির্বাচন অফিসের। সে ক্ষেত্রে তা দেওয়ার আগে প্রয়োজনীয় সব তথ্য যাচাই করার দায়িত্বও তাদের। অথচ তারাই অর্থের বিনিময়ে বাংলাদেশের নাগরিক নয়—এমন ব্যক্তিদের এনআইডি দিয়ে চলেছে। এটি শুধু জঘন্য অপরাধই নয়, জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও মারাত্মক হুমকি। সম্প্রতি চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে প্রচুর অর্থের বিনিময়ে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের যথেচ্ছ এনআইডি বিতরণের চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে দুদকের অনুসন্ধানে। পাশাপাশি উঠে এসেছে আরো সব গুরুতর অনিয়মের তথ্য। এ যেন জনগণের অর্থে উচ্চ বেতন দিয়ে ‘কালসাপ’ পোষার মতো অবস্থা!
দেশে এখন ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা রয়েছে। প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে মিয়ানমার যেভাবে টালবাহানা করছে, তাদের শিগগির ফেরানো যাবে বলেও মনে হয় না। অথচ রোহিঙ্গারা প্রতিনিয়ত ক্যাম্প ছেড়ে পালাচ্ছে। পালাতে সহায়তা করার জন্য গড়ে উঠেছে দালালচক্র। প্রতিদিনই তারা ছড়িয়ে পড়ছে দেশের নানা প্রান্তে। কক্সবাজারের সম্পূর্ণ বিপরীত প্রান্ত ঠাকুরগাঁও-দিনাজপুর থেকেও অনেক রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, শত শত রোহিঙ্গা এরই মধ্যে বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে। তারা বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করাসহ দেশের শ্রমবাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। দেশের বিভিন্ন জেলা বা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে পাসপোর্ট করতে গিয়ে অনেক রোহিঙ্গা ধরাও পড়েছে। আর এ ক্ষেত্রে অর্থের বিনিময়ে পাওয়া এনআইডি তাদের অনেক সহায়তা করছে। পুলিশকে ঘুষ দিয়ে তদন্ত প্রতিবেদনও তাদের অনুকূলে করিয়ে নিচ্ছে। পাসপোর্ট অফিসে রয়েছে কিছু অসৎ কর্মকর্তা ও দালালদের সিন্ডিকেট। এভাবে চলতে থাকলে সরকার এই রোহিঙ্গাদের কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে? তারা তো বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে যাবে! তাই তদন্তে উঠে আসা চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসের যাবতীয় অনিয়ম কঠোরভাবে মোকাবেলা করতে হবে। যেসব পাসপোর্ট অফিস থেকে রোহিঙ্গারা পাসপোর্ট পেয়েছে, সেখানে জড়িতদের খুঁজে বের করতে হবে। পুলিশ ভেরিফিকেশনের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদেরও তদন্তের আওতায় আনতে হবে। আমরা চাই না, কিছু অসাধু ব্যক্তির জন্য বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ুক।