বাংলাদেশে দুর্নীতি এখন পর্যন্ত একটি বড় সমস্যা। ভোগবাদী মানসিকতা এবং নৈতিক অধঃপতন এমন সর্বগ্রাসী দুর্নীতির পেছনে দায়ী। তবে বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট দেখলে বোঝা যায় ভোগবাদী মানসিকতাই দায়ী। সরকারি ব্যবস্থাপনায় গলদ থাকাও দুর্নীতি বাড়ার একটি বড় কারণ।
দেশে দুর্নীতির এক বড় ক্ষেত্র যেন বিআরটিএ। গাড়ি রেজিস্ট্রেশন, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও ফিটনেস সনদ প্রদান—সব ক্ষেত্রেই দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া হয় এই প্রতিষ্ঠানে। প্রবাসী, পর্যটক ও কূটনীতিক, জনপ্রতিনিধি ও বিশেষ ব্যক্তিরা কারনেটসহ শুল্কমুক্ত সুবিধায় বিদেশ থেকে বিলাসী গাড়ি দেশে এনে কারসাজি করে ভুয়া কাগজপত্রে নিবন্ধন করে বিক্রি করে দিচ্ছেন। ভুয়া নিবন্ধন ছাড়াও ভুয়া নাম্বার প্লেট ব্যবহার করেও এসব গাড়ি দেশের রাস্তায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। প্রবাসী, পর্যটক ও কূটনীতিকরা তাঁদের ব্যবহারের জন্য আনা গাড়ি নির্দিষ্ট সময় পর নিজ নিজ দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার বদলে এ দেশেই বিক্রি করে দিচ্ছেন। বিক্রির ক্ষেত্রেও শুল্ক ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে। জনপ্রতিনিধিদের জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি এনেও বাণিজ্য চলছে। গাড়ি আমদানিকারক বা ব্যবহারকারীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ বা অনৈতিক সুবিধা নিয়ে রাজস্ব বিভাগের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বিআরটিএর কর্মকর্তারা এসব গাড়ি নিরাপদে রাস্তায় চলতে সহযোগিতা করছেন। গাড়ি আমদানিকারক থেকে শুরু করে বিআরটিএর কর্মকর্তা-দালালদের তৈরি করা চক্রের মাধ্যমে এই নিবন্ধনপ্রক্রিয়া চলে। এনবিআর এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল। দফায় দফায় চিঠি দেওয়ার পরও বিআরটিএ এ ধরনের বিলাসবহুল গাড়ির তালিকা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআরের কাছে দিতে চায়নি। সর্বশেষ আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললে বিআরটিএ ৮৯১টি বিলাসবহুল গাড়ির তালিকা এনবিআরকে দিয়েছে। তালিকায় ২৫৭টি গাড়ির নিবন্ধনই দেওয়া হয়েছে করদাতার পরিচিতি নম্বর ছাড়া। এসব গাড়ির দাম এক কোটি থেকে ১০ কোটি বা এর চেয়েও বেশি। নিয়মানুযায়ী আইন-কানুন মেনে যেকোনো গাড়ি নিবন্ধন করতে হলে অবশ্যই ইটিআইএন জমা দিতে হবে। রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া এবং নিজের সম্পদের হিসাব গোপন রাখার এই শাস্তিযোগ্য অপরাধে গাড়ির মালিক যেমন দায়ী, যে বা যাঁরা নিবন্ধন দিয়েছেন, তিনি বা তাঁরাও দায়ী।
চলতি বছরের শুরুতে দেশের চারটি জেলায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ কার্যালয়ে একযোগে আকস্মিক অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদক সূত্রে জানা যায়, অভিযানের সময় রেজিস্ট্রেশন সনদ, ফিটনেস সনদ ও ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার প্রতিটি ধাপে বিপুল অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে তারা। এসব অপরাধের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। বিলাসী জীবন যাপন করতে দামি গাড়ি এনে যাঁরা কর ফাঁকি দিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এটাই আমাদের প্রত্যাশা।