কোরবানির চামড়া নিয়ে নতুন সংকট দেখা দিয়েছে। এবার মুখোমুখি চামড়ার আড়তদার ও ট্যানারি মালিকরা। গত শনিবার থেকে চামড়া কিনতে ট্যানারি মালিকদের নির্দেশ দিয়েছিল সরকার। প্রকাশিত খবর অনুযায়ী ট্যানারি মালিকরা প্রস্তুতিও নিয়েছিল চামড়া কেনার জন্য; কিন্তু আড়তদাররা হঠাৎ বিগড়ে যাওয়ায় ঘটনা অন্যদিকে মোড় নেয়। আড়তদারদের দাবি, ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে বকেয়া ৪০০ কোটি টাকা হাতে না পাওয়া পর্যন্ত তারা চামড়া বিক্রি করবে না। অন্যদিকে ট্যানারি মালিকরা বলছে, তাদের পুঁজির সংকট রয়েছে। এমন বাস্তবতায় চামড়া নিয়ে সংকট আরো ঘনীভূত হয়।
বাংলাদেশে চামড়াজাত দ্রব্য তৈরি করতে ট্যানারিগুলোতে চামড়ার যে চাহিদা, তার বড় অংশই মেটে ঈদুল আজহায় কোরবানি হওয়া পশু থেকে। কোরবানির পশুর চামড়া মূলত কেনে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা, তাদের কাছ থেকে কাঁচা চামড়া যায় আড়তগুলোতে। সেখান থেকে চামড়া কেনে ট্যানারি মালিকরা। এবার কাঁচা চামড়ার দর দেখে হতাশ মৌসুমি ব্যবসায়ীরা লাখ লাখ চামড়া সড়কে ফেলে গেলে তা নিয়ে শুরু হয় ব্যাপক আলোচনা। পরিস্থিতি দেখে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কাঁচা চামড়া রপ্তানির সুযোগ দেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পাশাপাশি শনিবার থেকে চামড়া কিনতে ট্যানারি মালিকদের প্রতি অনুরোধ জানায়, তাতে সাড়াও মেলে। ওদিকে কাঁচা চামড়া রপ্তানির সুযোগ দিলে দেশের চামড়াশিল্প ‘হুমকির মুখে পড়বে’ বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন। অন্যদিকে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করে মানুষ যে দাম পাচ্ছে, সেটা ‘যৌক্তিক না’। মানুষ যেন ন্যায্য দাম পায়, তা নিশ্চিত করতেই সরকারের এ পদক্ষেপ। রপ্তানির সুযোগ হলে আর ট্যানারিগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে না—এই আশায় কাঁচা চামড়ার পাইকারি ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায়। চামড়া রপ্তানির সুযোগ পাওয়ার জন্যই এবার এই পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে—এমন অভিযোগ ওঠার পর আড়তদারদের দাবি, ট্যানারি মালিকদের কাছে ‘জিম্মি’ হয়ে পড়ার কারণে তারা রপ্তানির বাজার খুঁজছে। ট্যানারি মালিকদের দাবি, বড় আড়তদাররা অধিক মুনাফার লোভে মাঠপর্যায়ে চামড়ার বাজারে ধস নামিয়েছে। আড়তদারদের দাবি, একমাত্র ট্যানারিওয়ালাদের বকেয়া পরিশোধ না করার কারণে এটা ঘটেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে চামড়া খাতের ইতিবাচক ভূমিকা রয়েছে। চামড়া খাত এগিয়ে গেলে এ দেশের অর্থনীতিও অনেকটা এগিয়ে যাবে। চামড়া নিয়ে যে সংকট দেখা দিয়েছে, শিল্পের স্বার্থে তা কাটিয়ে উঠতে ব্যবস্থা নিতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতির মূলে রয়েছে ব্যবসায়ীদের আস্থার সংকট। এ সংকট কাটিয়ে ওঠা গেলে ভবিষ্যতে কোনো বিপর্যয় দেখা দেবে না। দেশের শিল্প রক্ষার পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষার দিকটিও বিবেচনা করতে হবে।