চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া দেশে অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি নিষিদ্ধ। এ ব্যাপারে আদালতের স্পষ্ট নির্দেশনাও রয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে, এই নিষেধাজ্ঞা মানছে না অনেক বিক্রেতা। আদালতের নির্দেশ অমান্য করে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি করা হচ্ছে। আরো উদ্বেগজনক খবর হচ্ছে, মিথ্যা ঘোষণায় নিম্নমানের ও মেয়াদোত্তীর্ণ অ্যান্টিবায়োটিক আমদানি করা হচ্ছে। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী এই অপরাধমূলক কাজটি করছেন। শহরের পাড়া-মহলা ও উপজেলা পর্যায়ের ওষুধের দোকানে তুলনামূলক কম দামে এসব ওষুধ বিক্রি হচ্ছে। অবৈধ এ কারবারের মাধ্যমে অসাধু ব্যবসায়ীরা মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিলেও প্রতারিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। গত অর্থবছরে নিম্নমানের ও মেয়াদোত্তীর্ণ অ্যান্টিবায়োটিকের ১১টি চালান আটক করেছেন শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে উলেখ করা হয়েছে—কোরিয়া, তাইওয়ান, চীন, ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে মিথ্যা ঘোষণায় মেয়াদোত্তীর্ণ ও নিম্নমানের ওষুধ বেশি আমদানি করা হচ্ছে। দেশের অসাধু ব্যবসায়ীরা একাধিক বিদেশি চক্রের সহযোগিতা নিয়ে অবৈধ ওষুধের এ কারবার করছেন সুকৌশলে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নজরদারিতে চালান ধরা পড়লেও প্রকৃত আমদানিকারকদের সন্ধান পাওয়া যায়নি। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে আরো উলেখ করা হয়েছে, অসাধু ব্যবসায়ীরা মেয়াদোত্তীর্ণ বা নিম্নমানের অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি করার জন্য নামিদামি দোকানে যান না। তাঁরা শহরের পাড়া-মহলা ও উপজেলা পর্যায়ের দোকানে সরবরাহ করেন। তাঁরা নিজস্ব লোক দোকানে দোকানে পাঠিয়ে আগ্রহী দোকান মালিকদের সঙ্গে চুক্তি করে রাখেন। এরপর সময়মতো পণ্য সরবরাহ করা হয়। আমদানি করা নিম্নমানের ও মেয়াদোত্তীর্ণ অ্যান্টিবায়োটিকের মূল্য পরিশোধ করা হয় ব্যাংকিং চ্যানেলে।
জীবন রক্ষায় অনিবার্য ওষুধ যে বাংলাদেশে সব ক্ষেত্রে নিরাপদ নয়, তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। ওষুধ প্রস্তুত, আমদানি ও বিপণনের ব্যবসাটি অন্য আর দশটি ব্যবসার মতো নয়। ওষুধ একটি সেবাপণ্য। কাজেই এই পণ্য প্রস্তুত, আমদানি ও বিপণনে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। দেশের ভেতরে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী যেমন নকল ও ভেজাল ওষুধ বানিয়ে বাজারে ছাড়ছেন, তেমনি আরেকটি চক্র চোরাই পথে বিভিন্ন দেশ থেকে নিয়ে আসছে অনুমোদনহীন নানা ওষুধ। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে ওষুধ নিয়ে দেশের মানুষের জীবন বিপন্ন হচ্ছে। ভেজাল ও নকল ওষুধ প্রতিরোধে সরকারকে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। ওষুধ প্রশাসনের নজরদারি বাড়াতে হবে। মেয়াদোত্তীর্ণ অ্যান্টিবায়োটিক আমদানিকারকদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট সবাই কার্যকর ভূমিকা রাখবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।