মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু এখন দেশের সব মানুষের জন্য আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ ব্যাপক আকার নিয়েছে। ডেঙ্গু বাড়তে থাকায় রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে রোগীদের স্থান সংকুলান হচ্ছে না। ঢাকার সরকারি হাসপাতালগুলোতে নির্ধারিত শয্যার বাইরেও মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে রোগীদের। অনেকে রোগী নিয়ে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতাল ছুটে বেড়াচ্ছে। শুধু রাজধানী ঢাকা নয়, ভীতি ছড়ানো ডেঙ্গু এখন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ডেঙ্গু রোগের খবরে বলা হচ্ছে, এ পর্যন্ত ঢাকার বাইরে তিন শতাধিক মানুষ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছে। ঢাকার বাইরে আক্রান্ত বেশির ভাগই রাজধানী ঢাকাফেরত বলেও জানা গেছে। যে বিষয়টি ভাবনার তা হচ্ছে, রাজধানীতে ডেঙ্গু রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষার ভালো ব্যবস্থাপনা থাকলেও দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার হাসপাতালগুলোর জন্য এ রোগ অনেকটাই নতুন। তাই চিকিৎসা নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন তারা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী গত শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৬৮৩ জন। এই সংখ্যা গত এক মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য বলছে, বছরের শুরুর দিন থেকে শনিবার ২৭ জুলাই পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ১০ হাজার ৫২৮ জন ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে থেকে সাত হাজার ৮৪৯ জন চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরেছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় শুধু ঢাকার সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেই ভর্তি হয়েছে ৬৪৩ জন ডেঙ্গু রোগী। সবচেয়ে বেশি ২৩৩ জন ভর্তি হয়েছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। এ ছাড়া রাজধানীর বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে আরো ১১৪ জন ডেঙ্গু রোগী গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে অন্তত ২০ জনের মৃত্যুর খবর গণমাধ্যমে এলেও সরকারি খাতায় মৃতের সংখ্যা আগের মতো আটজনই রয়েছে। আতঙ্কের বিষয় হচ্ছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে শতাধিক শিক্ষার্থীর ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার খবর এসেছে গণমাধ্যমে। এক সহপাঠীর মৃত্যুর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে কক্সবাজারে।
বিশেষজ্ঞদের অনেকের ধারণা, আক্রান্ত সবার তথ্য সরকারের নজরদারিতে না আসায় আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা আরো অনেক বেশি। তাঁরা বলছেন, এখন আর শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক চিকিৎসাব্যবস্থায় আটকে থাকলেই চলবে না। ঢাকার বাইরেও সমানভাবে নজর দিতে হবে। সামনে ঈদের ছুটিতে ডেঙ্গু ছড়ানোর ঝুঁকি খুবই বেশি। তাই এখনই সেদিকে নজরদারি বাড়াতে হবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে। আমরা আশা করব, চিকিৎসার পাশাপাশি ডেঙ্গু প্রতিরোধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।