কানাইঘাট থেকে সংবাদদাতা :
কানাইঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সরকারের বিভিন্ন খাতের লক্ষ লক্ষ টাকা ভুয়া বিল ভাউচার ও সীল জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাৎের ঘটনায় হাসপাতালের অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর শামীম আহমদকে সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শাস্তিমূলক বদলী করা করার পরও কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকে কানাইঘাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অবস্থানের অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, এলাকার সচেতন মহল হাসপাতালের বিভিন্ন খাতের টাকা শামীম আহমদ কর্তৃক জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাতের অভিযোগে কয়েক মাস পূর্বে স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক ডাঃ সুলতানা রাজিয়ার বরাবরে অভিযোগ দাখিল করেন। সিলেট জেলা সিভিল সার্জন কর্তৃক উক্ত অভিযোগের তদন্তকালে হাসপাতালের লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ শামীম আহমদের বিরুদ্ধে প্রমাণিত হয়। যার কারণে গত ২৬ জানুয়ারি স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক ডাঃ সুলতানা রাজিয়া স্মারক নং- প্রঃস্বাঃসিঃ/প্রশা-৪/২০২১ এর এক আদেশে কানাইঘাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে শাস্তিমূলক ভাবে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শামীম আহমদকে বদলী করেন। বদলীর আদেশের পর শামীম আহমদ ছাতক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদান করে সেখানে ৩/৪দিন অবস্থান করে ছুটি নিয়ে কানাইঘাটে চলে আসে। এর পর থাকে কানাইঘাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অবৈধ ভাবে অবস্থান করে তাকে অফিস সহকারীর কাজ করতে দেখা যায়। এ নিয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিএইচও ডাঃ অভিজিত শর্মা স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন অফিসের কাজ করার জন্য শামীম আহমদকে জেলা সিভিল সার্জনের অনুমতিক্রমে ২ সপ্তাহের জন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়েছে। সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর সে তার কর্মস্থল ছাতক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চলে যাবে। কিন্তু তার পরও রহস্য জনক কারণে শামীম আহমদ তার কর্মস্থলে না গিয়ে হাসপাতালে অবস্থান করে অফিসিয়াল কাজ করতে থাকে। এতে করে শামীম আহমদরে বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অভিযোগ কারীরা ও হাসাপাতালের আশাপাশ এলাকার সচেতন মহলের মাঝে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। ২০/২২ দিন পূর্বে শামীম আহমদ কেন হাসপাতালে অবস্থান করছে জানতে চাইলে টিএইচও ডাঃ অভিজিত শর্মা বলেন সে চিকিৎসা জনিত ছুটিতে আছে। তাকে হাসপাতালে না আসার জন্য আমি নিষেধ করেছি। আপনারা ছাতক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিএইচওর সাথে যোগাযোগ করেন। ছাতক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিএইচওর সাথে মোবইল ফোনে কথা হলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন শামীম আহমদ কানাইঘাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে আমার এখানে যোগদান করার কিছুদিন পর ছুটি নেয়। ছুটির সময় পেরিয়ে যাবার পরও সে কর্মস্থলে না এসে নানা ধরনের ছল-ছাতুরির আশ্রয় নেয়। আমি তার সাথে বার বার যোগযোগ করার পর সে অসুস্থ দেখিয়ে চিকিৎসা জনিত ছুটি নিয়ে এখনও পর্যন্ত কর্মস্থলে যোগ দেয়নি। অভিযোগ কারীরা বলেছেন শামীম আহমদ সম্পূর্ণভাবে সুস্থ থেকে ভুয়া মেডিকেল লীভ নিয়ে কানাইঘাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন অবস্থান করে অবৈধ ভাবে হাসপাতালের অফিসিয়াল কাজকর্ম করছে। একজন সুস্থ ৩০ বছর বয়সের ব্যক্তিকে কি করে চিকিৎসকরা অসুস্থ দেখিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা পত্র দিয়েছেন সেটি খতিয়ে দেখার দাবী জানিয়েছেন সচেতন মহল। গতকাল শনিবার শামীম আহমদ হাসাপাতালে অবস্থান করে অফিসের কাজকর্ম করতে দেখেন তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অভিযোগের সাক্ষী ইকবাল আহমদ। তিনি টিএইচও ডাঃ অভিজিত শর্মার সাথে দেখা করে শামীম আহমদ কী ভাবে বদলীর পরও অদ্যবধি পর্যন্ত হাসপাতালে অবস্থান করছে জানতে চান। এসময় ডাঃ অভিজিত শর্মা তাকে বলেন কিছু অফিসিয়াল কাজ করার জন্য তাকে ডাকা হয়েছে। এখন থেকে সে আর হাসপাতালে আসবেনা বলে ইকবাল আহমদকে তিনি আশ্বস্থ করেন। ইকবাল আহমদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন দুর্নীতির দায়ে প্রায় ৩মাস পূর্বে বদলীর পরও কিভাবে এবং কার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে শামীম আহমদ হাসপাতালে অবস্থান করে অফিসের কাজকর্ম করছে। বিষয়টি তিনি তদন্ত করে দেখার জন্য উপজেলা প্রাশাসন ও জেলা সিভিল সার্জনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এদিকে হাসপাতালের লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করে বদলীর পরও হাসপাতালের কতিপয় কর্মকর্তাদের যোগসাজসে দুর্নীতিবাজ শামীম আহমদ কানাইঘাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পুনরায় যোগদান করার জন্য নানা ভাবে তদবীর চালিয়ে যাচ্ছে বলে তার বিরুদ্ধে সরকারী টাকা আত্মসাতের বাদী, অভিযোগকারীরা ও সচেতন মহল জানিয়েছেন। শামীম আহমদ তার কর্মস্থলে ছাতক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত না থেকে সম্পূর্ণ সুস্থ থাকার পরও মেডিকেল লীভ নিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে কানাইঘাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অবস্থান করে সরকারের বেতন ভাতা কিভাবে নিচ্ছে বিষয়টি দ্রুত তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জেলা সিভিল সার্জনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকার লোকজন।