শোকের মাস আগষ্ট

22

কাজিরবাজার ডেস্ক :
‘…ধন্য সেই পুরুষ, যার নামের ওপর রৌদ্র ঝরে চিরকাল, গান হয়ে/ নেমে আসে শ্রাবণের বৃষ্টিধারা; যাঁর নামের ওপর/ কখনো ধুলো জমতে দেয় না হাওয়া/ ধন্য সেই পুরুষ, যাঁর নামের ওপর পাখা মেলে দেয় জ্যোৎস্নার সারস/ ধন্য সেই পুরুষ, যাঁর নামের ওপর পতাকার মতো/ দুলতে থাকে স্বাধীনতা/ ধন্য সেই পুরুষ, যাঁর নামের ওপর ঝরে/ মুক্তিযোদ্ধাদের জয়ধ্বনি।’
প্রয়াত দেশের শ্রেষ্ঠ কবি শামসুর রাহমান তার ‘ধন্য সেই পুরুষ’ কবিতার মাধ্যমে স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরেছেন সুনিপুণভাবে। বাঙালী জাতির বেদনাবিধুর শোকের মাস আগষ্টের আজ ষষ্ঠ দিন।
শোকাবহ আগষ্ট এলেই ডুকরে কেঁদে ওঠে বাঙালি। বুকের ভেতর বয়ে যায় বেদনার গ্রোত। কেননা ১৯৭৫ সালের এই মাসেই নির্মমভাবে সপরিবারে হত্যা করা হয় স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। অথচ এই নেতার নির্দেশেই বাঙালি ঝাঁপিয়ে পড়েছিল একাত্তরে, দেশ স্বাধীন করতে, স্বাধিকার রক্ষায়। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে ছিনিয়ে এনেছিল মহার্ঘ স্বাধীনতা। আবার সেই স্বাধীন ভূমিতেই জাতির জনককে খুন হতে হলো কিছু ক্ষমতালোভী স্বাধীনতাবিরোধী কিছু পাপিষ্ঠের হাতে, এই আগষ্টেই।
তাই আগষ্ট মানেই শোক, আগষ্ট মানেই শোকে আপ্লুত বাঙালির কান্নাভেজা পরম বেদনায়। আগষ্ট এলেই শ্রদ্ধায় নত হয়ে আসে বাঙালির মাথা। চারদিকে কেবলই ¯্রােত নামে শোকস্তব্ধ মানুষের। মানুষ কাঁদে। বেদনায় গান গায়। নামে শোকের মিছিল। কালোয় কালোয়, শোকে শোকে বেদনাবিধুর হয়ে ওঠে গোটা দেশ, দেশের মানুষ।
পিতাহীন দেশে, সঙ্কটে উপনীত বাঙালি তাই এখনও আশ্রয় খোঁজে তারই আদর্শে, রেখে যাওয়া কন্যা শেখ হাসিনার পরম ছায়ায়, ভালোবাসায়। মুক্তি মেলে মানুষের, তারই স্বপ্নাকাশে। মানুষ যুথবদ্ধ হয়। সম্মিলিত শোক রূপ নেয় শক্তিতে। নতুন করে বেঁচে থাকার নতুন শপথ নেয় বাঙালি। কেননা জীবনের সুখ, স্বস্তি, আরাম, মোহ, অর্থকড়ি- সবকিছু ত্যাগ করার এক মহান মানুষ ছিলেন বঙ্গবন্ধু। সাধারণ গরিব-দুঃখি মানুষের কল্যাণে কীভাবে একজন মানুষ অবলীলায় বিসর্জন দিতে পারেন নিজের সব চাওয়া-পাওয়া, তাঁর কালজয়ী ইতিহাস রচে গেছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
শোকের মাস আগষ্টের নানা কর্মসূচীতে ‘মুজিবের বাংলায়, খুনীদের ঠাঁই নাই’- এ স্লোগানে মুখরিত গোটা দেশ। রক্তাক্ত, কলঙ্কিত ১৫ আগষ্ট যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই অসংখ্য কর্মসূচীর মাধ্যমে শোকাহত কৃতজ্ঞ বাঙালি জাতি পলাতক খুনীদের ফিরিয়ে এনে মৃত্যুদ- কার্যকর এবং রাজাকার-যুদ্ধাপরাধীমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণের দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠছে।
তবে এবারের শোকের মাসে জনগণের মধ্য থেকে নতুন দাবি উঠেছে- বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচারের পথ যারা রুদ্ধ করেছিল, তাদেরও বিচার করতে হবে। যুদ্ধাপরাধীদের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর খুনীদের দোসর ও মদদদাতাদেরও বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর দাবি উঠছে বিভিন্ন শোকের অনুষ্ঠানে।
সোমবার ছিল বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠপুত্র শেখ কামালের ৭০তম জন্মবার্ষিকী। তাই জাতীয় শোক দিবসের অন্যান্য কর্মসূচীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগসহ সব সহযোগী ও ভাতৃপ্রতীম সংগঠনগুলো নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে শেখ কামালের জন্মদিন পালন করে।