নির্বাচন নিয়ে বিএনপির কৌশল পরিবর্তন

30

কাজিরবাজার ডেস্ক :
নির্বাচনের বিষয়ে কৌশল পরিবর্তন করেছে বিএনপি। বর্তমান সরকারের আমলে আর কোন নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সে বিষয়ে ইউটার্ন নিয়েছে। এখন থেকে যখন যে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে তখনই দলীয় প্রার্থী দিয়ে বিজয়ের জন্য নির্বাচনী মাঠে সক্রিয় থাকবে বিএনপি। দলের হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের কাছে এ বার্তা পৌঁছানো হয়েছে।
সূত্রমতে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফল বিপর্যয়ের পর বিএনপি আর কোন নির্বাচনে অংশ না নেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ায় ইতোমধ্যেই রাজনৈতিকভাবে অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। বিশেষ করে উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় দলের শতাধিক নেতা উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়ার নিশ্চিত সুযোগ হারিয়েছে। শুধু তাই নয়, সারাদেশের প্রতিটি উপজেলায় এ নির্বাচনের সময় দলের নেতাকর্মীদের নিষ্ক্রিয় অবস্থায় ঘরে বসে থাকতে হয়েছে। এর ফলে সরকারী দলের লোকেরা উপজেলা পর্যায়ের রাজনীতিতে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছে। এর ফলে অনেক নেতাকর্মী হতাশ হয়ে রাজনীতি বিমুখ হয়ে পড়েছেন। কেউ কেউ বিএনপি ছেড়ে অন্য দলে চলে গেছেন।
জানা যায়, সম্প্রতি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা হয় দলের সিনিয়র নেতাদের। তখন থেকেই অনানুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত হয় এখন থেকে যেখানে যে নির্বাচন হবে তাতে বিএনপি অংশ নেবে। তবে শীঘ্রই দলটি আনুষ্ঠানিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে তা সবাইকে জানিয়ে দেয়া হবে। তারেক রহমানের সঙ্গে আলাপকালে বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে বিজয়ের বিষয়টিও উঠে এসেছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া বিএনপির ক’জন সিনিয়র নেতা তারেক রহমানকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন, যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফল বর্জনের পর আর কোন নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল, দলীয় ৬ এমপির সংসদে যোগদানের পর এমনিতেই আগের সিদ্ধান্ত যে ভুল ছিল তা প্রমাণিত হয়ে গেছে। তাই এখনও আর কোন নির্বাচনে অংশ নেব না বলে গো ধরে বসে থাকলে দল অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বরং এখন থেকে সকল নির্বাচনে অংশ নিলে যে ক’টিতে পাস করা যায় তাই লাভ। এ ছাড়া দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদেরও সক্রিয় করা যাবে।
এদিকে পরবর্তী সকল নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার পাশাপাশি কিভাবে নির্বাচনে দলের জন্য সুফল বয়ে আনা যায় সে কৌশলও নির্ধারণ করছে বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে নির্বাচন কমিশনকে চাপে রাখতে নানামুখী কৌশল নেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। দলীয়ভাবে নির্বাচন কমিশনে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি রাখার পাশাপাশি বিদেশী কূটনীতিক ও বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনকে চাপে রাখার চেষ্টা করা হবে। মোটামুটি সুষ্ঠু নির্বাচন হলে যে বিজয়ী হওয়া যায় সম্প্রতি বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচন থেকে সে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে বিএনপি।
২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করলেও সে নির্বাচনের পর সকল স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল বিএনপি। এর ফলে দেড় শতাধিক উপজেলা চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন স্তরে বিএনপির অনেক তৃণমূল নেতা নির্বাচিত হয়েছিলেন। আর তাদের কেন্দ্র করে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা নিজ নিজ এলাকায় সক্রিয় ছিল। কিন্তু এবার সে পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। দলীয় কোন কর্মকা- না থাকার পাশাপাশি নিজ নিজ এলাকায় স্থানীয় সরকারেও নিজেদের লোক না থাকায় তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা চরম হতাশ হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপি নির্বাচনমুখী দল। তবে আমরা এখনও সব নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সিদ্ধান্ত নেইনি। তবে যখনই সিদ্ধান্ত হবে সবাইকে জানিয়ে দেয়া হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান বলেন, বিএনপিতো সকল নির্বাচনে অংশ নিতেই চায়। কিন্তু নির্বাচনের পরিবেশ ঠিক না থাকলে কি করে নির্বাচনে অংশ নেবে? একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেভাবে করা হয়েছে এটাকে কি নির্বাচন বলে? আর এ কারণেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর আর কোন নির্বাচনে অংশ না নেয়ার কথা বলা হয়েছিল। এখন থেকে যদি সকল নির্বাচন সুষ্ঠু হয় তাহলে বিএনপির অংশ নিতে কোন অসুবিধা নেই। আমরা সবসময়ই নির্বাচনমুখী দল। নির্বাচনকে আমরা ভয় পাই না। তাই নির্বাচনের জন্য সবসময়ই বিএনপির প্রস্তুতি থাকে।