দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যে চরম উদ্বেগজনক, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। গত বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে আসা ঘটনাগুলো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, মানুষ নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে বাস করছে। মানুষের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিস্ময় প্রকাশ করেছেন উচ্চ আদালতও। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বরগুনায় শত শত মানুষের উপস্থিতিতে স্ত্রীর সামনে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। তাঁর সদ্য বিয়ে করা স্ত্রী হামলাকারীদের প্রতিহত করার সর্বাত্মক চেষ্টা করেও স্বামীকে রক্ষা করতে পারেননি। তিনি একজনকে আটকানোর চেষ্টা করলে দ্বিতীয়জন হামলা চালায়, দ্বিতীয়জনকে থামানোর চেষ্টা করলেও অন্যজন কোপাতে থাকে। স্ত্রীর চিৎকারে এলাকা প্রকম্পিত হলেও আশপাশের লোকজনের মধ্যে একজন ছাড়া আর কেউ ভয়ে এগিয়ে যায়নি বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে। ঘটনাস্থলটি পুলিশের সিসি ক্যামেরার আওতায় ছিল বলে জানা গেছে। ভিডিও চিত্র এবং প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রের বরাত দিয়ে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ভিডিও চিত্রে যে দুজন সন্ত্রাসীকে কুপিয়ে জখম করতে দেখা গেছে, তারা উভয়েই স্থানীয়ভাবে ছিনতাই ও মাদক কারবারসহ নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। এসব ঘটনায় একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়েছে বলেও বরগুনা থানা সূত্র গণমাধ্যমকে জানিয়েছে। বরগুনায় প্রকাশ্যে এক যুবককে তাঁর স্ত্রীর সামনে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় ১২ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে অপরাধ সাম্রাজ্যের আধিপত্য নিয়ে সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেত্রী খুন হয়েছেন। গত বুধবার সকালে এ ঘটনা ঘটেছে। পৃথক ঘটনায় গত মঙ্গলবার রাতে পিরোজপুরের স্বরূপকাঠিতে মানসিক ভারসাম্যহীন এক যুবকের ছুরিকাঘাতে সোহাগদল ইউনিয়ন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া পটুয়াখালীর বাউফলে নিখোঁজ এক কলেজছাত্রের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলায় অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য ও তাঁর ৯৫ বছর বয়সী মা বাড়িতে ঘুমন্ত অবস্থায় খুন হয়েছেন।
বরগুনায় প্রকাশ্য দিবালোকে এক যুবককে তাঁর স্ত্রীর সামনে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। বিস্ময় প্রকাশ করে আদালত বলেছেন, ‘দেশের পরিস্থিতি কোথায় গেছে! অনেকে দাঁড়িয়ে দেখলেন। কেউ প্রতিবাদ করলেন না। সমাজ কোথায় যাচ্ছে? আমরা সবাই মর্মাহত।’ শুধু যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে তা নয়, সমাজমানসেও বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। বরগুনার ঘটনায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ‘স্ত্রীর চিৎকারে এলাকা প্রকম্পিত হলেও আশপাশের লোকজনের মধ্যে একজন ছাড়া আর কেউ ভয়ে এগিয়ে যায়নি।’ অথচ একটি ভিডিও হয়েছে। ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে বলেও খবরে প্রকাশ।
বরগুনায় প্রকাশ্য দিবালোকে যুবককে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
আমরা মনে করি অবনতিশীল আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এখনই কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় এনে দ্রুত বিচারের মুখোমুখি ও দণ্ড কার্যকর করতে হবে।