কাজিরবাজার ডেস্ক :
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনে (কুসিক) উৎসবের ভোটযুদ্ধ আজ। কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের ইতিহাসে এটি তৃতীয় নির্বাচন। আজ বুধবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডের ১০৫টি কেন্দ্রেই ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে টানা ভোটগ্রহণ চলবে। ভোটগ্রহণ শেষে কেন্দ্রে কেন্দ্রে গণনার পর ফল ঘোষণা করা হবে। নতুন ইসির জন্য এ নির্বাচন একটি অগ্নিপরীক্ষা বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাই দেশের আপামর জনসাধারণ ও বিশ্ব রাজনৈতিক মোড়লদের দৃষ্টি এখন এই নির্বাচনের দিকে। ফলে কুমিল্লা সিটি নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করা ইসির জন্য একটি চ্যালেঞ্জ-ইমেজ সৃষ্টির বিষয়ও বটে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নির্বাচনকে ঘিরে যাতে কেন্দ্র দখল কিংবা পেশীশক্তির ব্যবহারসহ কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা বা সহিংসতা ঘটতে না পারে, সে জন্য ইসির নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৪ সহ¯্রাধিক সদস্যের তৎপরতা জোরদার করে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া হয়েছে পুরো নগরী। এ অবস্থায় শান্তিপূর্ণ ভোটের পরিবেশ প্রত্যাশা করছেন কুমিল্লাসহ দেশের সর্বস্তরের মানুষ।
সিটি কর্পোরেশনের ইতিহাস : প্রায় ৬০ লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত দেশের রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামের মাঝামাঝি পয়েন্টে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাদদেশে গোমতী নদীর কোলঘেঁষে অবস্থিত শিক্ষা-সংস্কৃতির পাদপীঠখ্যাত দেশের প্রাচীন জেলা কুমিল্লা। প্রায় দেড়শ’ বছর পূর্বে গড়ে তোলা হয়েছিল কুমিল্লা পৌরসভা। কালের ক্রমবিবর্তনে কুমিল্লা পৌরসভাকে ২০১১ সালে সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত করা হয়। বর্তমানে এ সিটি কর্পোরেশনের আয়তন ৫৩.৪ বর্গকিলোমিটার। ইতিপূর্বে ২০১২ সালে ও ২০১৭ সালে এ সিটির দুটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই দুটি নির্বাচনে জয় পান বিএনপি দলীয় প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু। তিনি ক্ষমতাসীন দলের একটি পক্ষের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে ওই দুটি মেয়াদ পার করেন। এবারও মেয়র পদে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী। তবে তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা অভিযোগ করে বলছেন, সিটি কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠার পর নগরবাসীর জীবনমান উন্নয়নে সরকার ও বিদেশী বিভিন্ন সংস্থা কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও কারও কারও পকেট ভারি হয়ে অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে, কিন্তু টেকসই ও কাক্সিক্ষত উন্নয়ন বলতে যা বুঝায় তা এখানে হয়নি। সাবেক মেয়র ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু বলছেন, তিনি তার নির্বাচনী ইশতেহারের ৭০ ভাগ পূরণ করেছেন।
আজ সিটি কর্পোরেশনের তৃতীয় নির্বাচন : আজ বুধবার কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের তৃতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের সূত্রমতে, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন ২৭টি ওয়ার্ডে বিভক্ত। এতে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০। নারী ভোটার ১ লাখ ১৭ হাজার ৯২ এবং পুরুষ ভোটার ১ লাখ ১২ হাজার ৮২৬ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার দুজন। মোট ১০৫টি ভোটকেন্দ্রের ৬৪০টি কক্ষে ভোট হবে। ভোটকেন্দ্রগুলোর মধ্যে ৮৯টি অতিঝুঁকিপূর্ণ, ৯টি ঝুঁকিপূর্ণ ও ৭টি সাধারণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
মেয়র পদে প্রার্থী যারা : এবার কুসিক নির্বাচনে মেয়র পদে নির্বাচন করছেন ৫ জন। মেয়র পদে প্রার্থীরা হলেন- কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত (নৌকা), টানা দুইবারের সদ্য সাবেক মেয়র ও বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ মনিরুল হক সাক্কু (টেবিল ঘড়ি), স্বেচ্ছাসেবক দল থেকে বহিষ্কৃত স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার (ঘোড়া), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী রাশেদুল ইসলাম (হাতপাখা) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান বাবুল (হরিণ)। এ ছাড়া সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৩৬ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করছেন ১০৮ জন প্রার্থী।
ইভিএমে ভোট : কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচন ব্যালটে ও দ্বিতীয় নির্বাচন আংশিক কেন্দ্র ইভিএমের মাধ্যমে হলেও এবার ১০৫টি কেন্দ্রের সব কয়টিতে ইভিএমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
হেভিওয়েট তিন প্রার্থীই জয়লাভে আশাবাদী : নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত, বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত সাবেক মেয়র স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু, স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার এতদিন ভোটের মাঠে একে অপরকে ঘায়েল করার জন্য নানামুখী বাগযুদ্ধে লিপ্ত ছিলেন। নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে এসে মঙ্গলবার তারা তিনজনই গণমাধ্যমসহ নেতাকর্মীদেরকে আজকের ভোটযুদ্ধে জয়ী হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
নিরাপত্তার চাদরে ঘেরা নগরী : বুধবার নগরীর ১০৫টি কেন্দ্রে সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণের জন্য সোমবার থেকে নগরীতে পুলিশ, র্যাব, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৪ হাজার ২৬০ জন সদস্যকে মোতায়েন করা হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্রিফিং : ভোটের আগের দিন মঙ্গলবার সকালে কুমিল্লা স্টেডিয়ামে পুলিশ, আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৪ হাজার সদস্য ব্রিফিং নেন। ব্রিফিং অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কুমিল্লার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ। এ সময় পুলিশ সুপার বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য ভোট অনুষ্ঠানে সুচারুভাবে ভোটগ্রহণের স্বার্থে প্রত্যেককে তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হবে। এ সময় তিনি তাদের নানান দিকনির্দেশনা দেন।
কেন্দ্রে কেন্দ্রে ইভিএম ও সরঞ্জামাদি প্রেরণ : মঙ্গলবার সকালে কুমিল্লা জিলা স্কুলের অডিটরিয়াম থেকে ইভিএম ও নির্বাচনী সরঞ্জামাদি নগরীর সংশ্লিষ্ট ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসারসহ কর্মকর্তাদের নিকট বুঝিয়ে দেন রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের কর্মকর্তারা। প্রিসাইডিং অফিসাররা ইভিএম মেশিনসহ সরঞ্জামাদি বুঝে নিয়ে তা কেন্দ্রের উদ্দেশে নিয়ে যান।
ছুটি : কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান জানান, বুধবার ভোট উপলক্ষে কোন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়নি। তবে যে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে, ভোটের দিন সে সব প্রতিষ্ঠানে ছুটি থাকবে। এ ছাড়া নগরীর অন্যান্য সরকারী প্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত যারা ভোটার, তারা কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারবেন।
কুমিল্লায় আসছেন নির্বাচন কমিশনের ৯ কর্মকর্তা : কুসিক নির্বাচন সার্বিকভাবে পর্যবেক্ষণ করতে ঢাকা থেকে নির্বাচন কমিশনের উপ-সচিব ও সহকারী সচিব পর্যায়ের ৯ কর্মকর্তা কুমিল্লায় আসছেন। কুসিক নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার শাহেদুন্নবী চৌধুরী মঙ্গলবার বিকেলে জনকণ্ঠকে জানান, নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ইভিএম মেশিনসহ নির্বাচনী সরঞ্জামাদি নিয়ে প্রিসাইডিং অফিসারসহ আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন ইতোমধ্যে কেন্দ্রে পৌঁছেছেন।