কাজিরবাজার ডেস্ক :
বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে এখন অস্ট্রেলিয়া দল বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ হলেই যেন আশীর্বাদ মিলে! আজ বাংলাদেশ সময় বেলা সাড়ে তিনটায় শুরু হতে যাওয়া নটিংহ্যামের ট্রেন্টব্রিজে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচটিতেও কী তা লুকিয়ে আছে? এবার আশীর্বাদ মানে আর বৃষ্টিতে ম্যাচ পরিত্যক্ত নয়, জয় হয়ে ধরা দিতে হবে।
আগের বিশ্বকাপ, ২০১৫ সালের অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপ থেকেই ওয়ানডেতে বদলে যাওয়া বাংলাদেশকে মিলেছে। সেই বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেছে বাংলাদেশ। তা সম্ভব হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটি বৃষ্টিতে না হওয়ায়। বাংলাদেশ যে ১ পয়েন্ট পেয়েছিল, হারেনি, এরপর দল আরও উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। তাতে করে আফগানিস্তানকে হারানোর পর স্কটল্যান্ড ও ইংল্যান্ডকেও হারিয়ে দিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলে বাংলাদেশ।
দুই বছর পর ইংল্যান্ড এ্যান্ড ওয়েলসে হওয়া চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেতো অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটি বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হওয়াতেই সেমিফাইনালে খেলতে পারে বাংলাদেশ। ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের গ্রুপে ছিল বাংলাদেশ। কঠিন গ্রুপ। সেমিফাইনালে খেলা কী এত সহজ! তাই ধরা হয়েছিল। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ হয়ে সামনে পড়লেই যে আশীর্বাদ মিলে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হারের পর মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়া বাংলাদেশ দল যখন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামে তখন ১৮২ রানেই গুটিয়ে যায়। নিশ্চিত হারের মুখে পড়ে যায়। অস্ট্রেলিয়া ১৬ ওভারে ১ উইকেটে ৮৩ রান করে ফেলে। এমন অবস্থায় বৃষ্টি আসলে আর খেলা হয়নি। ২০ ওভার না হওয়ায় খেলা বৃষ্টি আইনেও ফয়সালা হতে পারেনি। তাতে করে বৃষ্টিতে খেলা পরিত্যক্ত হয়। বাংলাদেশ নিশ্চিত হারা ম্যাচ থেকে ১ পয়েন্ট পেয়ে যায়। এই যে মোমেন্টাম মিলে, এরপর নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে দেয় বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড ম্যাচ বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়। নিউজিল্যান্ড একটি ম্যাচেও জিততে পারেনি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার শেষ ম্যাচটিতেও বৃষ্টি হানা দেয়। বৃষ্টি আইনে জিতে ইংল্যান্ড। তাতে করে মাত্র ৩ পয়েন্ট নিয়েই সেমিফাইনালে খেলা নিশ্চিত হয় বাংলাদেশের।
অস্ট্রেলিয়া সামনে পড়লেই যেহেতু আশীর্বাদ বাংলাদেশের কপালে ঘুরপাক খায়, তাহলে এবারও কী তাই হবে? এবার বৃষ্টিতে খেলা পরিত্যক্ত না হয়ে যেন খেলা হয়। তা সবারই চাওয়া। আর খেলা হলে যেন বাংলাদেশ জিতে। সেই প্রত্যাশাই করা হচ্ছে। যেহেতু ইংল্যান্ডের মাটিতে খেলা, তাই সেই আশা টাইগারদেরও আছে। ইংল্যান্ডের মাটিতেই যে অস্ট্রেলিয়াকে হারানো গেছে।
বাংলাদেশ নিজেদের ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২১টি ম্যাচ খেলেছে। দুটি ম্যাচ হয়নি। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে বৃষ্টিতে বলই মাঠে গড়ায়নি। ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বৃষ্টিতে ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়। বাকি ১৯ ম্যাচের মধ্যে ১৮টিতেই হারে বাংলাদেশ। শুধু একটি ম্যাচ জিতে। সেটি ২০০৫ সালে। কার্ডিফের সেই ম্যাচটি আজও স্মৃতির পাতায় জ্বলজ্বল করে। এই একটি ম্যাচেই যে অস্ট্রেলিয়াকে হারানো গেছে। আজও কী তাহলে কার্ডিফের সুখস্মৃতি নটিংহ্যামে ফিরবে?
বিশ্বকাপ আলোকিত করে রেখেছেন বিশ্বসেরা ওয়ানডে অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। তিনি টানা চার ম্যাচেই ৫০ উর্ধ রান করেছেন। টানা দুই ম্যাচে সেঞ্চুরিও করেছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অপরাজিত ১২৪ রান করে দলকেও জিতিয়েছেন। ম্যাচসেরাও হয়েছেন। টুর্নামেন্ট সেরা হওয়ার মতো নৈপুণ্য দেখাচ্ছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ পেসারদের নিয়ে যে আতঙ্ক ছিল তা তুড়ি মেড়ে উড়িয়ে দিয়েছেন। এখন আজ অস্ট্রেলিয়ার পেসারদেরও পাত্তা না দেয়ার মতো কথাই বলেছেন সাকিব। তার সাহস আছে। আত্মবিশ্বাস আছে। মানসিক ভিতও অনেক মজবুত। তিনি যা বলেন, বুঝেই বলেন। তা কাজেও লাগে। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াকে টেস্টে হারানোর কথা সাকিবের কণ্ঠেই সর্বপ্রথম শোনা গিয়েছিল। ধীরে ধীরে তা দলের ক্রিকেটারদের মধ্যে এমনভাবে বিস্তার ঘটেছে, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াকে টেস্টে হারিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপে কখনই অস্ট্রেলিয়াকে না হারানো গেলেও এবার হারানোর প্রত্যয় আছে। ৩২২ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৫১ বল বাকি থাকতে ৭ উইকেটে হারিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। এ জয়ে ক্রিকেটারদের মধ্যে যে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছে তাতে অসিদেরও বধ করতে পারে বাংলাদেশ। ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে হয়নি। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপেও হয়নি। তাই বলে যে এবার হবে না তা কে বলতে পারে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেও এর আগে কখনই বিশ্বকাপে জিতেনি বাংলাদেশ। এবার জিতেছে। অসিদেরও এবার হারিয়ে দিতে পারে বাংলাদেশ।
সাকিব আত্মবিশ্বাসী। নটিংহ্যামে বল মুভ করে প্রচুর। তাতে অস্ট্রেলিয়ান পেসার মিচেল স্টার্ক, পেট কামিন্সদের নিয়ে আছে ভয়। কিন্তু সাকিব তা পাত্তা দিতে রাজি নন। তার ব্যাখ্যা, ‘আমরা অস্ট্রেলীয় দলের বোলারদের গতি নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নই। কারণ আমরা ইংল্যান্ডের ফাস্ট বোলারদের খেলেছি, খেলেছি ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফাস্ট বোলারদের। দুই দলেরই ১৪০ কিলোমিটারের চেয়েও বেশি গতিতে বোলিং করা ফাস্ট বোলার আছে। এ বোলারদের মুখোমুখি হওয়ার পর আমরা যদি মৌলিক বিষয়গুলো ঠিক রাখতে পারি তাহলেই হবে। আমি মনে করি, আমরা যথেষ্ট ভাল দল। এ ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার সক্ষমতা আমাদের আছে।’
সাকিবের সঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচে অসাধারণ ব্যাটিং করেছেন লিটন কুমার দাস। তিনি বিশ্বকাপে প্রথমবার ব্যাট হাতে নেমে অপরাজিত ৯৪ রানের ইনিংস খেলেছেন। কি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ব্যাটিং করেছেন। দাপট দেখিয়েছেন। তিনিও সাকিবের সঙ্গে একমত, ‘এশিয়ান দলের বিপক্ষে সবাই শর্ট বল করার চেষ্টা করে। ১০ শর্ট বলের আমরা ৫টায় সফল হই, ৫টায় হই না। এশিয়ার বাইরের দলগুলো স্বাভাবিকভাবে এটা আমাদের বিপক্ষে চেষ্টা করবে। ওদের গতিময় বোলার আছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচে যেভাবে সামলে খেলেছি, পরের ম্যাচেও (অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে) একইভাবে খেলতে হবে।’
ব্যাটিংয়ে ডেভিড ওয়ার্নার, এ্যারন ফিঞ্চ, উসমান খাজা, স্টিভেন স্মিথ, গ্লেন ম্যাক্সওয়েলরা যেমন অস্ট্রেলিয়ার ভরসা, তেমনি তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, সাকিব, মুশফিকুর রহীম, লিটন কুমার দাস, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতরা বাংলাদেশের ভরসা। এখন বল হাতে মুস্তাফিজুর রহমান, মাশরাফি বিন মর্তুজা, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, সাকিব ও মেহেদী হাসান মিরাজ মিলে অসি ব্যাটসম্যানদের একটু চাপে রাখতে পারলেই হলো। স্টার্ক, কামিন্সরা যতই চাপ তৈরি করার চেষ্টা করুক বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরাতো দেখিয়ে দিয়েছেন, কোন চাপই এখন আর বাধা নয়। সব বাধা অতিক্রম করে এখন কার্ডিফের সুখস্মৃতি নটিংহ্যামে ফিরে আসলেই হলো।