বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ড ॥ পলাতক আলবদর নেতা আশরাফুজ্জামান ও চৌধুরী মঈনুদ্দিনকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ

3

কাজিরবাজার ডেস্ক :
বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডে নেতৃত্বদানকারী মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত বিদেশে পলাতক দুই আল বদর নেতা আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মঈদ্দীনকে দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বিজয় দিবসের প্রাক্কালে আঠারো বুুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডের অভিযোগে ফাঁসির আসামি তারা। দেশে ফিরিয়ে আনতে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা-ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। বিদেশে অবস্থান করেও স্বাধীন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনাকারী এই দুই আল বদর নেতা। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আশরাফুজ্জামান খান অবস্থান করছে যুক্তরাষ্ট্রে এবং চৌধুরী মঈনুদ্দীন আছে যুক্তরাজ্যে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে এ খবর জানা গেছে।
পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, মুক্তিযুদ্ধের সময় বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মঈনুদ্দীনের অনুপস্থিতিতেই মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার সম্পন্ন হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। ২০১৩ সালের ৩ নবেম্বর তাদের মৃত্যুদন্ড দেয়ার রায় হয়। তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তাদের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থা-ইন্টারপোলের সহায়তা চেয়েছে পুলিশ সদর দফতর।
পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, সরকার বিদেশে পলাতক যুদ্ধাপরাধীদের ফিরিয়ে আনতে অনেক আগে থেকেই জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এজন্য বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোতেও নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের জন্য মনিটরিং শেল গঠন করা হয়। আর যারা বিদেশে পলাতক আছে তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো হচ্ছে।
জামায়াতে ইসলামী তখনকার সহযোগী সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের এই দুই কেন্দ্রীয় নেতা মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়জন শিক্ষক, ছয়জন সাংবাদিক ও তিনজন চিকিৎসকসহ ১৮ বুদ্ধিজীবীকে অপহরণের পর হত্যা মামলায় মৃত্যুদন্ড দেয়া হয় আশরাফ- মঈনুদ্দীনকে। তারা দুজনে ১৯৭১ সালের ১১ থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে কীভাবে আল বদর সদস্যদের নিয়ে বুদ্ধিজীবীদের অপহরণ ও হত্যার পর বধ্যভূমিতে লাশ গুম করেছিলেন, তা উঠে এসেছে এই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের রায়ে।
আশরাফুজ্জামান খান ছিলেন সেই হত্যাকান্ডের ‘চীফ এক্সিকিউটর’। আর চৌধুরী মঈনুদ্দীন ছিলেন সেই পরিকল্পনার ‘অপারেশন ইনচার্জ’।
জিয়া ও এরশাদের আমলে : জিয়াউর রহমান ও এইচএম এরশাদ সরকারের আমলে পুলিশ প্রহরায় মঈনুদ্দীনকে দেশে আসার সুযোগ করে দেয়া হয়। এই দুই সামরিক শাসককেও ধিক্কার জানানো হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর্যবেক্ষণে। বলা হয়েছে, এটা জাতির বড় একটি বিরাট লজ্জা (গ্রেট শেম) যে, জিয়া ও এরশাদ তাকে গ্রামের বাড়িতে যেতে দিয়েছেন। আত্মগোপনে গিয়ে বিদেশে পালিয়ে যাওয়া এই আসামিকে সে সময় পুলিশী নিরাপত্তাও দেয়া হয়। বিচারের মুখোমুখি করার পরিবর্তে তাকে রাষ্ট্রীয় মেশিনারি দিয়ে সম্মান দেয়া হলো বলে উল্লেখ করা হয় রায়ের পর্যবেক্ষণে।
পুলিশ সদর দফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের কোন বন্দী বিনিময় চুক্তি নেই। এ জন্য বুদ্ধিজীবী হত্যার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত চৌধুরী মঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামানকে ফিরিয়ে আনতে আইনী জটিলতা অন্যতম বাধা। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশ কিংবা পশ্চিমা বেশিরভাগ দেশই যে কোন বিচারে মৃত্যুদন্ডের বিরুদ্ধে একটি অবস্থানে এসে পৌঁছেছে এবং এই অবস্থানের কারণে চৌধুরী মইনুদ্দীনকে বাংলাদেশে ফেরত নেয়ার ক্ষেত্রে একটি জটিলতা তৈরি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত অভিযুক্ত আশরাফুজ্জামানের ক্ষেত্রেও আইন যুক্তরাজ্যের মতোই। বলা যায় এক রকম। যদিও যুক্তরাষ্ট্র এর ক্ষেত্রে কড়াকড়ি যুক্তরাজ্য থেকে কম। যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড। আশরাফুজ্জামানের ক্ষেত্রে অবস্থানটাও কিছুটা পরিষ্কার হতে পারে কুটনৈতিক তৎপরতায়, যেমনটায় বঙ্গবন্ধু হত্যার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামি মহিউদ্দিন আহম্মেদকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়েছিল।