পিন্টু দেবনাথ কমলগঞ্জ থেকে :
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী ন্যাশনাল টি কোম্পানীর মালিকানাধীন পাত্রখোলা চা বাগানের এক চা শ্রমিককে অন্যায়ভাবে বরখাস্ত করাকে কেন্দ্র করে সোমবার সকাল ৮টা থেকে এ চা বাগানের ১৮৬৭ জন শ্রমিক চা বাগান কারখানার ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে কর্মবিরতি পালন করে। কর্মবিরতি পালনের সময় দুই দল শ্রমিকের সংঘর্ষে এক নারী শ্রমিকসহ ২জন আহত হয়েছে। দীর্ঘ ৩ ঘন্টা আলোচনার পর আগামী ২৬ মে রোববার উপজেলা সদরে সামাজিক বৈঠকে সমস্যা সমাধানের আশ্বাসে উত্তেজনা নিরসন হলেও চা শ্রমিকরা কাজে যোগ দেয়নি। বরখাস্তকৃত চা শ্রমিক সুজন অলমিক (৩৫)। সংঘর্ষে আহতরা হলেন নারী শ্রমিক সরস্বতী মহালী (৪৫), প্রতাপ গড় (৪৩), বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি দেবাশীষ চক্রবর্তী শিপন (৪০), পঞ্চায়েত সদস্য তারা মিয়া বাচ্চু (৪৫)। আহত দুইজনকেই কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের মনু-ধলই ভ্যালির (অঞ্চলের) কার্যকরী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মল দাশ পাইনকা জানান, গত কয়েকদিন আগে পাত্রখোলা চা বাগান ব্যবস্থাপক শফিকুর রহমান চা বাগান পঞ্চাযেত সভাপতি দেবাশীষ চক্রবর্তী শিপনের প্ররোচনায় অন্যায়ভাবে শ্রমিক সুজন অলমিককে বরখাস্ত করেন। এ বিষয়ে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রাম ভজন কৈরী পাত্রখোলা চা বাগান ব্যবস্থাপককে বরখাস্ত পত্র প্রত্যাহার করে তাকে কাজে যোগদানের সুযোগ দিতে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। একই সাথে সাধারণ চা শ্রমিকরাও সুজন অলমিককে আবার কাজে ফিরিয়ে নিতে দাবি জানিয়েছিলেন। তারপরও চা বাগান ব্যবস্থাপক কোন সাড়া দেননি। ফলে আজ সোমবার সকাল ৮টা থেকে এ চা বাগানের নিবন্ধিত ১৮৬৭ জন চা শ্রমিক কাজে যোগ না দিয়ে কারখানার ফটক বন্ধ করে কর্ম বিরতি পালন শুরু করে।
সাধারণ চা শ্রমিকদের কর্ম বিরতি চলাকালে চা বাগান ব্যবস্থাপকের পক্ষের হয়ে এ চা বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি দেবাশীষ চক্রবর্তী শিপন ও তার সমর্থকরা এসে সাধারণ চা শ্রমিকদের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সংঘর্ষে সরস্বতী মহালী, প্রতাপ গড়, দেবাশীষ চক্রবর্তী শিপন ও তারা মিয়া বাচ্চু নামে চারজন আহত হয়েছেন।
চা শ্রমিক দুলাল ছত্রী জানান, এ চা বাগানের ব্যবস্থাপক নিজের বুদ্ধিতে কোন কাজ করেন না। তিনি পঞ্চায়েত সভাপতি দেবাশীষ চক্রবর্তীর কথা শুনে ইচ্ছে মাফিক সাধারণ চা শ্রমিকদের উপর ক্ষমতা দেখান। এমনিভাবে সুজন অলমিককে বরখাস্ত করা হয়েছে। তাই আজ সাধারণ চা শ্রমিকরা আন্দোলিত হয়ে কর্ম বিরতি পালন করেছে।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রামভজন কৈরী এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. রফিকুর রহমানের উপস্থিতিতে বাগান ব্যবস্থাপনা পক্ষ ও আন্দোলিত চা শ্রমিকদের সাথে দীর্ঘ সময় আলোচনা করে একটি সিদ্ধান্তে পৌছা গেছে। সিদ্ধান্ত মোতাবেক আগামী রোববার কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদে বসে এ সমস্যার সমাধান করা হবে। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল সার্কেল) আশরাফুজাজামান, কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আরিফুর রহমান, পরিদর্শক সুধীন চন্দ্র দাসসহ চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দ। এ আশ্বাসে আন্দোলিত চা শ্রমিকরা মেনে নিলেও সোমবার কোন শ্রমিক কাজে যায়নি।
চা শ্রমিকদের কর্মবিরতি পালন ও পরবর্তীতে সামাজিক সমঝোতার সত্যতা নিশ্চিত করে পাত্রখোলা চা বাগান ব্যবস্থাপক শফিকুর রহমান বলেন, আগামী রোববার উপজেলা সদরে বসেই এ সমস্যার সমাধান হবে।