পাটকলগুলো আধুনিকায়ন করুন

22

বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে সারা দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিকরা আন্দোলন করে চলেছে। বলা হয়েছে, ঈদের আগেই পাটকল শ্রমিকদের বকেয়া মজুরিসহ সব পাওনা পরিশোধের সুপারিশ করেছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। কমিটির এই সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ বিষয়ে এরই মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা হয়ে গেছে। পাওনা পরিশোধের জন্য দ্রুতই সরকার অর্থ বরাদ্দ দেবে বলে মন্ত্রণালয়ের আশা। বাংলাদেশ পাটকল সংস্থার একটি উদ্ভাবন দেশের পাটশিল্পে বিপ্লব এনে দিতে পারত। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পাট থেকে পরিবেশবান্ধব পলিব্যাগ উদ্ভাবন করেছিলেন। শুধু এই পণ্য উৎপাদন করে দেশে ও বিদেশে সাড়া ফেলে দেওয়া সম্ভব ছিল। কিন্তু এই পাটপণ্য বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করতে বিজেএমসির দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। অথচ মাত্র দুই বছর আগে ২০১৭ সালে লতিফ বাওয়ানি জুট মিলে পণ্যটির পরীক্ষামূলক উৎপাদনও শুরু হয়েছিল। বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করতে অর্থ বরাদ্দ চেয়ে প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই প্রস্তাব অনুযায়ী কাজ হয়নি।
অথচ আধুনিক পণ্য উৎপাদনে গেলে দেশের পাটকলগুলো লাভজনক হতো। দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো যখন বছরের পর বছর লোকসান দিয়ে যাচ্ছে তখন বেসরকারি খাতের পাটকলগুলো লাভের মুখ দেখছে। পণ্য রপ্তানি করছে। প্রতিবেশী দেশে নতুন নতুন পাটকল গড়ে উঠছে। বাংলাদেশের পাটে সেসব পাটকলে পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি হচ্ছে। কিন্তু আমাদের দেশের পাটকলগুলো আধুনিকায়নের কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। আধুনিক বিশ্বে পাটের বহুমুখী ব্যবহার বেড়েছে। কিন্তু দেশের পাটকলগুলো সেভাবে তৈরি হতে পারেনি। এ ছাড়া প্রতিবছর পাট কেনার জন্য দেরিতে অর্থ ছাড় দেওয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ অবস্থায় পাটকলগুলোর আধুনিকায়নের কোনো বিকল্প নেই। নতুন নতুন পাটপণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করা গেলে পাটকলগুলো যে লাভবান হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু সেদিকে কোনো দৃষ্টি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আছে বলে মনে হয় না। উল্টো দেশের কিছু পাটকল বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। আর বেসরকারি খাতে পাটকল ছেড়ে দেওয়ার সুযোগ তৈরি করে দিতেই মজুরি ও ভাতা পরিশোধের ব্যাপারে ঢিলেমি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আমরা মনে করি, বেসরকারি খাতে পাটকল ছেড়ে দেওয়া কোনো সমাধান নয়। বরং নতুন পাটপণ্য উৎপাদন ও পাটকলগুলো আধুনিকায়ন করা গেলে সব পাটকল লাভের মুখ দেখত। পাটকল আধুনিকায়নের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা দরকার।