কানাইঘাটে ৫ দিনের ব্যবধানে আবারো হত্যাকান্ড, এবার স্বামীর হাতে স্ত্রী খুন

28

কানাইঘাট থেকে সংবাদদাতা :
কানাইঘাটে স্ত্রীর হাতে স্বামী হত্যার ৫ দিনের পর ফের স্বামীর হাতে খুন হয়েছেন জেসমীন বেগম নামে এক গৃহবধূ। এ ঘটনাটি ঘটেছে গত শুক্রবার সন্ধ্যা ৬ টার দিকে উপজেলার বানীগ্রাম ইউপির নিজ গাছবাড়ী নয়াগ্রামে। কানাইঘাট থানা পুলিশ নিহত জেসমিন বেগমের লাশ ঐ দিন রাত ১টার দিকে উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সিলেট মর্গে প্রেরন করেছে।
জানা যায় নিজ গাছবাড়ী নয়াগ্রামের আজির উদ্দিনের পুত্র অটোরিক্সা সিএনজি চালক ইসলাম উদ্দিন (৩০) তার দ্বিতীয় বিবাহের স্ত্রী জেসমিন বেগম (১৯) কে শুক্রবার কয়েক দফায় বাড়ীতে প্রচন্ড মারপিট করলে রোজা রাখা অবস্থায় সে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়ে। মারধরের ঘটনায় জেসমিন বেগম অজ্ঞান হয়ে পড়লে স্বামী ইসলাম উদ্দিন স্থানীয় গাছবাড়ী বাজারের একজন পল্লী চিকিৎসকের কাছে জেসমিন কে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে সরকারী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। ডাক্তারের কাছ থেকে স্ত্রী কে বাড়ীতে নিয়ে এসে স্বামী ইসলাম উদ্দিন সহ তার পরিবারের লোকজন বলাবলি করতে থাকে জেসমিন ঘরের তীরের সাথে গামছা পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে। পরে হত্যাকান্ডটি আত্মহত্যা হিসাবে চালিয়ে দেওয়ার জন্য জেসমিন বেগমের স্বামী ইসলাম উদ্দিন ঘরের একটি কক্ষের তীরের সাথে একটি গামছা বেধে রাখে। অবস্থা বেগতিক দেখে জেসমিনের লাশ বসত ঘরের একটি খাটে রেখে স্বামী ইসলাম উদ্দিন ও তার প্রথম স্ত্রী এবং মা সহ পরিবারের সবাই শুক্রবার রাতেই বাড়ীতে পুলিশ যাবার আগেই পালিয়ে যায়। লাশ উদ্ধারকারী থানার সেকেন্ড অফিসার স্বপন চন্দ্র সরকার জানিয়েছেন জেসমিন কে তার স্বামী ও পরিবারের লোকজন হত্যা অথবা সে আত্মহত্যা করেছে কি না ? তা ময়না তদন্তের রিপোর্টের পর জানা যাবে। তার লাশ খাটের উপরে পাওয়া গেছে। তবে তিনি নিহত জেসমিন বেগমের মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে জানান। এ ঘটনার সংবাদ পেয়ে স্থানীয় সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তারা লাশের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জমাট বাঁধা রক্তের জখম রয়েছে বলে স্বচক্ষে দেখেছেন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন নিহত জেসমিন বেগমের স্বামী ইসলাম উদ্দিনের চরিত্র ভাল নয় সে মাদক গাঁজা বিক্রি করত তার পরিবারের সবাই অত্যন্ত খারাপ প্রকৃতির লোক। ইসলামের উদ্দিনের ৩ সন্তান সহ আরেক স্ত্রী রয়েছে। অনুমানিক দুই বছর পূর্বে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বাড়ী থেকে পালিয়ে এনে স্থানীয় খাসেরমাটি গ্রামের তোতা মিয়ার একমাত্র মেয়ে জেসমিন বেগম কে বিয়ে করে অটোরিক্সা চালক ইসলাম উদ্দিন। নিহতের মামা ইসলাম আহমদ জানিয়েছেন বিয়ের পর থেকে ইসলাম উদ্দিন ও তার প্রথম স্ত্রী পরিবারের লোকজন ভাগ্নী জেসমিন কে কারণে অকারনে মারধর করত স্বামী গাঁজা সহ নেশা জাতীয় মাদকদ্রব্য বিক্রি করায় জেসমিন প্রায় সময় বাধা প্রদান করত। শুক্রবার বিকেল ৪ টার পর থেকে ইসলাম উদ্দিন কয়েক দফায় তার ভাগ্নীকে পচন্ড মারধর করে রক্তাক্ত জখম করে। মারধরের সংবাদ সে পরিবারের কাছে জানানোর সময় তার মোবাইল ফোনটি স্বামী ইসলাম উদ্দিন কেড়ে নেয়। একপর্যায়ে রাত ৭টার দিকে স্বামী ইসলাম ও তার মা এবং পরিবারের লোকজন মিলে গুরুতর আহত জেসমিন কে বসত ঘরের অন্য একটি কক্ষের তীরের সাথে গামছা পেঁচিয়ে জেসমিন আত্মহত্যা করেছে বলে এলাকার চাউর করে। তিনি জানান তার ভাগ্নি কে পিটিয়ে পরিকল্পিত ভাবে তার স্বামী ও পরিবারের লোকজন হত্যা করেছে। লাশ উদ্ধারের সময় বাড়ীতে এলাকার অসংখ্য মানুষ ভীড় করেন তারা সবাই স্বামী ইসলাম উদ্দিন ও পরিবারের লোকজন জেসমিন বেগম কে মারপিট করে গুরুতর জখম করে পরবর্তীতে তার লাশ গামছা দিয়ে পেঁচিয়ে আত্মহত্যার নাটক করে। এ ঘটনায় নিহতের স্বজনরা থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে গতকাল শনিবার পর্যন্ত এ ব্যাপারে থানায় অপ-মৃত্যু কিংবা নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে কোন অভিযোগ দায়ের করা হয়নি বলে থানার সেকেন্ড অফিসার স্বপন চন্দ্র সরকার জানিয়েছেন।