কাজিরবাজার ডেস্ক :
ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র কারণে সারাদেশের নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন লাখো যাত্রী। শুক্রবার দেশের কোন নদী বন্দর থেকে কোন নৌযান ছেড়ে যায়নি। দেশের দুই ফেরিঘাট আরিচা এবং পাটুরিয়াতে আটকে আছেন অনেক যাত্রী। ফণীকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং বিআইডব্লিউটিএ, বিআইডব্লিউটিসি, চট্টগ্রাম, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দর কন্ট্রোল রুম খুলেছে।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সচিবালয়ের কন্ট্রোল রুম নম্বর হলো ৮০১/ক এবং এর টেলিফোন নম্বর ০২-৯৫৪৬০৭২। এছাড়া মতিঝিলে বিআইডব্লিউটিএ’র কন্ট্রোল রুমের টেলিফোন নম্বর ০২-৯৫১৩১৭০; বাংলামটরস্থ বিআইডব্লিউটিসি’র কন্ট্রোল রুমের টেলিফোন নম্বর ০২-৯৬৭৩৭৭৯; চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের কন্ট্রোল রুমের টেলিফোন নম্বর ০৩১-৭২৬৯১৬, ০৩১-২৫১০৮৬৬, ০৩১-২৫১৭৭১১, ০৩১-২৫১০৮৬৯; মংলা সমুদ্র বন্দরের কন্ট্রোল রুমের টেলিফোন নম্বর ০৪৬৬২-৭৫৩৬৭, মোবাইল ফোন নম্বর ০১৮৭৮-০৯৯৪৯৮,০১৭১৪-০৭৪২৯৩, ০১৭১১-১৫১৬৫১ এবং পায়রা সমুদ্র বন্দরের কন্ট্রোল রুমের মোবাইল ফোন নম্বর ০১৭১১-০১০৩৬৬, ০১৯১১-৮৮২৬৮৫। ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবেলায় জরুরী তথ্য ও নির্দেশনা আদান-প্রদানের জন্য এসব কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।
স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ থেকে জানান, ঘূর্ণিঝড় ফণীর আঘাত মোকাবেলায় দক্ষিণাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুটে ব্যাপক সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। জানমালের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে এই রুটের ফেরি সার্ভিস শুক্রবার বেলা ৩টায় বন্ধ করে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থা’র (বিআইডব্লিউটিসি) এজিএম শাহ মোঃ বরকতউল্লাহ। তিনি বলেন শুক্রবার সকাল থেকে এই রুটে ফেরিচলাচল মোটামুটি স্বাভাবিক ছিল। পরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এখানে ঝড় শুরু হওয়ার পর কিছু সময় ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল। পরে আবার সব ফেরি বন্ধ করে ৪টি ছোট ফেরি দিয়ে পারাপার চলছিল। তবে বাতাসের তীব্রতা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই ফেরি চলাচল বেলা ৩টার দিকে বন্ধ করে দেয়া হতে পারে। তিনি জানান, লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল বন্ধ থাকায় সকাল থেকে ফেরি দিয়ে মানুষ পার করতে হচ্ছে। যানবাহন পার করা হয়েছে খুবই কম। ফেরি ভিড়লের লোকজন হুমড়ি খেয়ে পড়ছে ফেরিতে। তিনি আর বলেন নদীতে ৪ নম্বর সতর্ক সঙ্কেত রয়েছে। তাই নিরাপত্তার জন্যই এখন ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হবে। এদিকে বৃহস্পতিবার রাত থেকে এই রুটে স্পিডবোট, লঞ্চসহ অন্যান্য নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে ঘাটে আটকা পড়েছে প্রায় ৩ শতাধিক যান। বর্তমানে এ রুটে একটি রো রো ফেরিসহ মোট ১৪টি ফেরি চলাচল করছিল। মাওয়া নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আরমান হোসেন জানান, জানমালের নিরাপত্তায় পুলিশ কাজ করছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাতাসের গতিও বাড়ছে। তবে ঘাটে গাড়ি আসার সংখ্যা আজ কম।
স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে জানান, ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে বৈরী আবহাওয়ার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ আন্তর্জাতিক নদী বন্দরের কার্যক্রম। বন্দরে আটকা পড়েছে শতাধিক মালবাহী কার্গো জাহাজ। বন্ধ রাখা হয়েছে কার্গো জাহাজ থেকে পন্য খালাস। ইতোমধ্যে অভ্যন্তরীণ রুটে সকল প্রকার নৌযান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। এতে ৬টি রুটে লঞ্চ ও নৌ চলাচল বন্ধ রয়েছে। আশুগঞ্জ থেকে নবীনগর-গৌকর্ন ঘাট, সাচনা, মারকুলি, অষ্টগ্রাম, বাঙ্গালপাড়া, কামাইল চেহ নৌ রুটে বন্ধ রয়েছে লঞ্চ ও নৌ চলাচল।
আশুগঞ্জ আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন জানান, শুক্রবার রাতে আশুগঞ্জ বন্দরে ঘূর্ণিঝড় ফণী আঘাত আনতে পারে। তবে শুক্রবার সকাল থেকে বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে আশুগঞ্জ বন্দরকে ২ নম্বর সতর্কতা সঙ্কট দেখাতে বলা হয়েছে। আশুগঞ্জ নদী বন্দরের সহকারী পরিচালক আসাদুজ্জামান জানান, নৌযান চলাচল বন্ধের নির্দেশ দিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে এবং বন্দরের সকল কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে।
নিজস্ব সংবাদদাতা, লক্ষ্মীপুর থেকে জানান, মেঘনা নদীর বিভিন্ন দ্বীপ চরগুলো থেকে মানুষ, গরু ও মহিষসহ সকল ধরনের পশুগুলোকে বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসা হচ্ছে । জেলা সদর থেকে ভোলা বরিশালসহ বিভিন্ন জায়গায় যাওয়া যাত্রীবাহী লঞ্চগুলোকে ঘাটে নিরাপদ আশ্রয়ে রাখা হয়েছে। মাছ ধরার সকল নৌকাগুলোকে জেলা বিভাগ ও জেলা প্রশাসন থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার জন্য বলা হয়েছে। জেলা প্রশাসক অঞ্জন চন্দ্র পাল, রেডক্রিসেন্ট জেলা ইউনিট চেয়ারম্যান ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ শাহজাহান শুক্রবার দিনভর উপকূলীয় অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
নিজস্ব সংবাদদাতা, হাতিয়া থেকে জানান, ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে নদী উত্তাল থাকায় গত দু’দিন ধরে মূল ভূখ-ের সঙ্গে দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার সকল ধরনের নৌ যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। ফলে এ রুটের যাতায়াতকারী যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। হাতিয়ার সঙ্গে নৌরুটের যোগাযোগের মাধ্যম হলো হাতিয়া-চট্টগ্রাম জাহাজ ও হাতিয়া-চেয়ারম্যান ঘাট রুটে চলাচলকারী সীট্রাক। এর বাইরে বেসরকারীভাবে হাতিয়া-ঢাকা রুটে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল করে। প্রতিদিন এ তিনটি রুটে প্রায় সহগ্র্রাধিক যাত্রী যাতায়াত করে। এদিকে হাতিয়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুর্যোগ মোকাবেলায় সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। বিশেষ করে হাতিয়াতে ১শত ৭৬টি আশ্রয় কেন্দ্র শুক্রবার সকাল থেকে খুলে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন উপজেলা ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সাইফুর রহমান। এ বিষয়ে গত ৩দিন ধরে প্রতিদিন উপজেলা পরিষদে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠক বসছে। বৈঠকে দুর্যোগ পূর্ববতী ও পরবর্তীতে করণীয় সম্পর্কে বিভিন্ন বিভাগকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।