চিকিৎসা একটি সার্বক্ষণিক পেশা। একজন চিকিৎসককে রোগীদের ব্যাপারে সব সময় মনোযোগী থাকতে হয়। কখনো কখনো কোনো রোগীকে দিন-রাত পর্যবেক্ষণে রাখতে হয়। চিকিৎসা পেশাকে ব্রত হিসেবে নিয়ে যাঁরা এই ক্ষেত্রে কাজ করতে আসেন, তাঁদের নিষ্ঠা নিয়ে কখনো প্রশ্ন ওঠার কথা নয়। কিন্তু সরকারি হাসপাতালের বেশির ভাগ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তাঁরা প্রাইভেট প্র্যাকটিসের ব্যাপারে এত বেশি মনোযোগী যে হাসপাতালের রোগীদের ব্যাপারে তাঁদের কোনো মনঃসংযোগ নেই। অন্যদিকে কেউ কেউ নিয়ম মেনে অফিস সময় শেষ করে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতে বাইরে চলে যান। অনেকেই একাধিক চেম্বার করেন—এমন অভিযোগ আছে। চিকিৎসকরা যে নিজেদের কর্মস্থলের চেয়ে ক্লিনিক কিংবা প্রাইভেট প্র্যাকটিসের ব্যাপারে বেশি মনোযোগী, পছন্দের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা, পছন্দের ক্লিনিক বা বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের ব্যাপারে তাঁদের বেশির ভাগের আগ্রহ হাতে গোনা কয়েকটি বাদ দিলে দেশের বেশির ভাগ সরকারি হাসপাতালে কোনো শৃঙ্খলা আছে বলে মনে হয় না। উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে এই চিত্র সবার চোখেই ধরা পড়ে। গ্রামে থাকার ব্যাপারে চিকিৎসকদের অনীহা, ঢাকা কিংবা শহরাঞ্চলে থাকার প্রবণতাও লক্ষণীয়। এ অবস্থার অবসান হওয়া দরকার। চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিসমুখী নয়, হাসপাতালমুখী হতে হবে।
একনেকের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চিকিৎসকদের বাইরে গিয়ে প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন। সরকারি হাসপাতালে বসেই যেন চিকিৎসকরা প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতে পারেন, সে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনাও দিয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকারি হাসপাতালে প্রাইভেট প্র্যাকটিসের ব্যবস্থা থাকলে হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের প্রতিও চিকিৎসকরা দৃষ্টি দিতে পারবেন। ঢাকার দুটি বড় হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিসের ব্যবস্থা আছে। তার ইতিবাচক ফলও পাওয়া গেছে। আমরা আশা করব, দেশের সব সরকারি হাসপাতালে প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।