দেশের কৃষিক্ষেত্রে বড় ধরনের বিপ্লব ঘটে গেছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে বাংলাদেশ। নতুন নতুন জাতের ফসল এসেছে। উচ্চফলনশীল এসব ফসল কৃষকের ঘরে কিছুটা হলেও স্বস্তি এনে দিতে পেরেছে। ধানের বিকল্প কৃষিপণ্য উৎপাদন ও বিপণনে অনেক এগিয়ে গেলেও নতুন বিপদও ডেকে আনা হয়েছে। কৃষিপণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে উন্নতমানের বীজ ব্যবহারের পাশাপাশি যে কীটনাশক ও সার ব্যবহার করা হয়, তার মান নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। দীর্ঘ মেয়াদে এই কীটনাশক ও সারের ব্যবহার মাটির উর্বরতা শক্তি নষ্ট করে দিতে পারে এমন আশঙ্কা যেমন আছে, তেমনি কীটনাশকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার জনস্বাস্থ্যের জন্য যে হুমকি হয়ে দেখা দেবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। মানুষের প্রয়োজনেই দেশের কৃষি উৎপাদনব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে হয়েছে। দেশে চাষযোগ্য জমি বাড়ছে না; বরং কমছে। কিন্তু মানুষ বাড়ছে। এ অবস্থায় বিদ্যমান জমিতে উৎপাদন বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু উৎপাদন বাড়াতে গিয়ে যে ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনা হচ্ছে, সে সম্পর্কে আমরা বোধ হয় একটুও সচেতন নই। বিপরীতে আরেকটি বিষয়ও রয়েছে। বাণিজ্যের আগ্রাসী লোভও পেয়ে বসেছে। অভিযোগ রয়েছে, কোনো বাছবিচার ছাড়াই বাজারে চলে যাচ্ছে ক্ষতিকর কীটনাশক।
প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, কীটনাশক প্রস্তুত ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা নানা প্রলোভন আর উপকরণ নিয়ে পৌঁছে যাচ্ছেন কৃষকদের বাড়ি পর্যন্ত। তাঁদের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে কৃষকরা ওই সব প্রতিষ্ঠানের কীটনাশক যথেচ্ছ ব্যবহার করছে। পাশাপাশি জেলা, উপজেলা ও গ্রামপর্যায়ে ছড়িয়ে আছে ভেজাল ও নকল কীটনাশক। ভুয়া ও অখ্যাত কোম্পানির পাশাপাশি প্রভাবশালী কিছু কোম্পানিও নিম্নমানের কীটনাশক বাজারজাত করছে। কীটনাশক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের ভেতরে যেমন অসাধু চক্র রয়েছে, তেমনি রয়েছে পর্যাপ্ত মনিটরিংয়ের জন্য জনবল ঘাটতি এবং কাঠামোগত সীমাবদ্ধতাও। বিশেষ করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্লান্ট প্রটেকশন উইং প্রয়োজনের তুলনায় অনেকটাই সামর্থ্যহীন। মাটিতে কিংবা খাদ্যশস্যে কীটনাশক বা রাসায়নিক উপাদান আছে কি না তা দেখার মতো কোনো ল্যাবরেটরিও এখনো চালু হয়নি। অসাধু ব্যবসায়ীরা এই সুযোগই কাজে লাগিয়েছে।
এ অবস্থায় কৃষকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। এর পাশাপাশি অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। কীটনাশক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের মনিটরিং বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। কোনো অসাধু ব্যবসায়ী ক্ষতিকর কীটনাশক বাজারজাত করলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। ওই অসাধু ব্যবসায়ী যাতে এই ব্যবসায় কোনোভাবেই ফিরতে না পারে, সেদিকে নজর দিতে হবে। জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি কৃষকদের কাছে তুলে ধরে প্রাকৃতিক কীটনাশক পদ্ধতি তাদের কাছে নিয়ে যেতে পারলে ক্ষতিকর কীটনাশক ব্যবহার কমে আসবে।