হাদীসে চিত্রাঙ্কন ও ভাস্কর্য নির্মাণ

7

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান :

আমাদের দেশে এক শ্রেণীর পন্ডিত আছেন যারা শরী’আহ-এর উৎস হিসেবে হাদীস মানতে চান না। তাদের যুক্তির জবাব দেয়া কিংবা হাদীস বা সুন্নাহর আইনগত মর্যাদা নিয়ে এখানে আলোচনার সুযোগ নেই। তবে আমরা এটুকু বলতে পারি যে, আল-কুরআনের ঘোষণা অনুসারে রসূল (স.) এর বাণীও ওহী হিসেবে পরিগণিত; যদিও তা ওয়াহী গাইর মাতলু। শরী’আহ-এর বিধিÑবিধান নির্ধারণে হাদীসের গুরুত্ব অপরিসীম। আল-কুরআনে ইসলামী আইনের রাজপথ বিধৃত নির্ধারণে হাদীসের মাধ্যমেই আমরা ইসলামী শরী’আহ-এর পূর্ণাঙ্গ রূপ পেয়েছি। হাদীস বাদ দিয়ে নামায-রোযাসহ অবশ্য পালনীয় অনেক দৈনন্দিন ‘ইবাদাত-এর পূর্ণাঙ্গ রূপ জানা সম্ভব হবে না। আর তাই হাদীস ইসলামের দ্বিতীয় উৎস বলে পরিগণিত হয়েছে। এভারে আমরা হাদীসের আলোকে চিত্রাঙ্কন ও ভাস্কর্য নির্মাণ বিষয়ে আলোচনা করব। চিত্রাঙ্কন ও ভাস্কর্যের নিষেধাজ্ঞা সম্বলিত বেশ কয়েকটি হাদীস বিপুল সংখ্যক সনদের সূত্রে হাদীসের গ্রন্থসমূহে উল্লেখিত হয়েছে। আমরা সমন্বিতভাবে হাদীসগুলো উপস্থাপনে সচেষ্ট হব।
‘আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: জিবরীল (আ.) এক নির্দিষ্ট সময়ে রসূলুল্লাহ (স.) এর কাছে আসার প্রতিশ্রুতি দিলেন, প্রতিশ্রুত সময় এল কিন্তু তিনি আসলেন না। রসূলুল্লাহ (স.) এর হাতে একটি লাঠি ছিল, তিনি সেটি ফেলে দিয়ে বললেন, ‘আল্লাহ ও তাঁর দূতেরা তো ওয়াদার বরখেলাফ করেন না।’ তারপর তিনি এদিক সেদিক তাকালেন, হঠাৎ তাঁর খাটের নিচে একটি কুকুর ছানা পেলেন। তিনি বললেন: আয়েশা! এ কুকুর কখন ঢুকল? তিনি (আয়েশা রা.) বললেন: আল্লাহর শপথ, আমি জানি না। অতঃপর তাঁর নির্দেশ ওটি বের করে দেয়া হল। তারপর জিবলীর আ. এলেন। তখন রসূলুল্লাহ স. বললেন: ‘আপনি আমাকে ওয়াদা দিয়েছিলেন, আমি বসেও ছিলাম। এলেন না যে? ‘জবাবে জিবরীল বললেন: ‘আপনার ঘরে যে কুকুর ছিল সেটি আমাকে বারণ করেছিল। আমরা সে’ঘরে প্রবেশ করি না যাতে কুকুর বা ছবি/ভাস্কর্য থাকে।’ হাদীসটি মালিক, বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবন মাজাহ, দারকুতনী ও তাবরানীসহ অনেক হাদীসবেত্তা উল্লেখ করেছেন। শুধু সহীহ আলÑবুখারী ও সহীহ মুসলিমের অন্যূন ১২টি স্থানে বর্ণনাটি এসেছে। কমপক্ষে ৭ জন সাহাবী Ñইবন ‘উমর, ইবন আব্বাস (আবু তালহার মাধ্যমে), আবু তালহা, আবু হুরায়রা, ‘আয়েশা ও মায়মূনাহ (রা.) ও আলী (রা.) হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। সুতরাং এটি ‘খবরে ওয়াহেদ’ নয়; বরং খবরে সশহূর। সুতরাং ইসলামী বিধান আহরণের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দলীল। আমরা আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো স্পর্শ না করে শুধু মূল বিষয়বস্তুর ওপর দৃকপাত করব।
কোন কোন বর্ণনায় পুরো ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায়। কোথাওবা শুধু মূল বক্তব্যটুকু আছে। এ হাদীস থেকে জানা গেল ঘরে কুকুর বা ছবি/ভাস্কর্য থাকলে ফেরেশতা প্রবেশ করে না। সুতরাং ছবি টাঙানো বা ভাস্কার্য স্থাপন একটি গর্হিত কাজ। তাবে এটি কোন পর্যায়ের (হারাম না মকরূহ পর্যায়ের) গর্হিত কাজ তা এ হাদীস থেকে জানা গেল না। ঘরে কিসের ছবি থাকলে ফেরেশতা প্রবেশ করবে না তাও এ হাদীস থেকে পরিষ্কার জানা গেল না। তবে এ হাদীসেরÑই অন্য একটি ভাষ্য যা সহীহ আলÑবুখারীতে এসেছে তা হলে জানা যায় যে, প্রাণীর ছবি/ভাস্কর্য থাকলে ফেরেশতা প্রবেশ করবে না। যেসব ছবি রাখার অনুমতি আছে সেগুলো থাকলে ফেরেশতা প্রবেশে কোন অসুবিধা নেই। এ পর্যায়ে আমরা কিয়ামত দিবসে চিত্রকর ও ভাস্করদের শাস্তির উল্লেখ সম্বলিত কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করব। নবীপত্নি ‘আয়েশা (রা.) কর্তৃক ছবিসম্বলিত পর্দা ঝুলানোকে কেন্দ্র করে এ হাদীসটি বর্ণিত হলেও অনেক বর্ণনায় ঘটনার বিবরণ ছাড়া শুধু মূল বক্তব্যটুকু এসেছে। বর্ণনাগুলো আমরা সমন্বিতভাবে উপস্থাপনে সচেষ্ট হব।
[আবু আল-দুহা] মুসলিম [ইবন সুবাইহ] হতে বর্ণিত, আমরা একবার মাসরূকের সাথে য়াসার ইবন নুমাইরের বাড়ীতে ছিলাম। তিনি (মাসরূক) বাড়ীর তাকে ছবি দেখতে পেয়ে বললেন, আমি আবদুল্লাহকে [ইবন মাস’উদ] বলতে শুনেছি, তিনি নবী স. এর কাছে শুনেছেন, নিশ্চিত কিয়ামত দিবসে সব চাইতে বেশী শাস্তিপ্রাপ্ত হবে চিত্রকর/ভাস্কর্য নির্মাতারা।’
বুখারী ও মুসলিম Ñদু’জনেই হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। মুসলিমের বর্ণনা থেকে জানা যায় ছবিটি ছিল যিশুমাতা মারয়াম (আ.) এর। এ হাদীস থেকে বুঝা গেল চিত্রকর/ভাস্কর্য কিয়ামত দিবসে সবচাইতে কঠিন শাস্তিপ্রাপ্ত হবে। বিষয়টি অযৌক্তিক মনে হতে পারে। চোর, মানুষ হত্যাকারী বা এ জাতীয় অপরাধীদের চাইতে চিত্রকররা অধিকতর বেশী শাস্তির অধিকারী হবে? তবে এ হাদীসের অন্যান্য ভাষ্যের সাথে মিলিয়ে দেখলে বুঝা যায় চিত্রকর/ভাস্কর সবচাইতে কঠিন শাস্তিপ্রাপ্তদের দলভুক্ত হবে।
আবু যুর‘আ বলেন, আমি আবু হুরায়রা (রা.) এর সাথে মদীনার একটি ঘরে প্রবেশ করলাম। তিনি সেখানে দেখলেন এক চিত্রকর ঘরের ওপরের দিকে ছবি আঁকছে। তখন তিনি (আবু হুরায়রা) বললেন, আমি রসূলুল্লাহ (স.)কে বলতে শুনেছি যে, [আল্লাহ বলেন] ‘যে আমার সৃষ্টির মত সৃষ্টি করতে চায় তার চাইতে অধিক জালেম আর কে হতে পারে? তারা বীজ সৃষ্টি মত সৃষ্টি করতে চায় তার চাইতে অধিক জালেম আর কে হতে পারে? তারা বীজ সৃষ্টি করুক, ওরা পিঁপড়া সৃষ্টি করুক!’ বুখারী ও মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। মুসলিমের বর্ণনা থেকে জানা যায় বাড়িটি ছিল মদীনার তৎকালীন শাসক মারওয়ান ইবন আল-হাকামের।
চিত্রঙ্কন কিংবা ভাস্কর্য নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কারণটি এই হাদীস থেকে জানা গেল। কারণটি হল: প্রাণীর আকৃতি নির্ধারণ একমাত্র আল্লাহর কাজ। অতএব প্রাণীর ভাস্কর্য নির্মাণের মানে হল সৃষ্টিকর্মে আল্লাহর সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হওয়া। এ কালের কিছু ‘আলেম এ-হাদীসের অপব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেন, তাদের মতে প্রাণীর ছবি আঁকা তখনই হারাম হবে যদি চিত্রকর আল্লাহর সাথে সৃষ্টিকর্মে পাল্লা দেওয়ার নিয়তে তা করে থাকে। অন্যথায় প্রাণীর ছবি অঙ্কন হারাম হবে না।’ এ ধরণের বক্তব্য উদ্ধৃত হাদীসের সম্পূর্ণ বিপরীত। এ হাদীসে প্রাণীর ছবি অঙ্কনের কাজকেই আল্লাহর সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হওয়ার নামান্তর বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। মারওয়ান ইবন আল-হাকাম নিশ্চয় আল্লাহর সাথে প্রতিযোগিতার নিয়তে ছবি অঙ্কন করেননি। তবুও আবু হুরায়রা (রা.) ঐ হাদীসের চেতনা অনুসারে বলা যায় প্রাণীর ছবি অঙ্কন মাত্রই সৃষ্টির কাজে আল্লাহর সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হওয়ার শামিল।
আল-নদর ইবন আনাস ইবন মালিক হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইবন আব্বাসের কাছে বসে ছিলাম, তিনি রসূলুল্লাহ (স.) এর উদ্ধৃতি না দিয়ে ফাতওয়া দিচ্ছিলেন। এক পর্যায়ে এক লোক তাকে জিজ্ঞেস করলেন: আমি ছবি আঁকি আর ভাস্কর্য বানাই। ইবন আব্বাস বললেন, ‘কাছে এসো’। লোকটি কাছে গেলে ইবন আব্বাস বললেন, আমি রসূলুল্লাহ (স.)কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়ার ছবি/ভাস্কার্য নির্মাণ করবে কিয়ামতের দিন তাকে তাতে প্রাণ সঞ্চারের নির্দেশ দেয়া হবে। কিন্তু সে প্রাণ ফুঁকে দিতে পারবে না’।
এ হাদীসটি বুখারী, মুসলিম, নাসাঈসহ অন্য অনেক সংকলক উল্লেখ করেছেন। নাসাঈ-এর বর্ণনা হতে জানা যায় লোকটি ইরাক হতে এসেছিল। বুখারীর বর্ণনা থেকে প্রশ্নকর্তার সওয়াল ও ইবন আব্বাসের জবাবের আরো বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায়। লোকটি এসে বলল: ‘আমরা উপার্জন হয় হস্তশিল্পের মাধ্যমে; আমি এসব ছবি আঁকি। আপনি এ বিষয়ে ফাতওয়া দিন।’ ইবন আব্বাস অত্যন্ত কোমলতা ও সহৃদয়তার সাথে তার প্রশ্নের জবাব দেন। এ হাদীস থেকে জানা গেল প্রাণীর ছবি অঙ্কন কিংবা ভাস্কর্য নির্মাণ হারাম। কারণ কিয়ামতের দিন আঁকিয়ে ও ভাস্করকে স্বীয় কর্মে প্রাণ ফুঁকে দিতে বলা হবে। প্রাণ ফূঁকে দেওয়ার বিষয়টি প্রাণীর সাথে সংশ্লিষ্ট।
‘আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি একটি বালিশ কিনেছিলেন যাতে ছবি ছিল; রসূলুল্লাহ (স.) যখন সেটি দেখলেন, দরজায় দাঁড়িয়ে থাকলেন, ঘরে প্রবেশ করলেন না। তিনি [আয়েশা] তাঁর [রসূল স.] চেহারায় নারাজির ভাব দেখে বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নিকট তওবা করছি। আমি কী পাপ করেছি?’ রসূলুল্লাহ (স.) বললেন, ‘এ বালিশ কেন? আয়েশা (রা.) বললেন, ‘আমি এটি আপনার জন্য কিনেছি, যেন আপনি এর ওপর টেক দিয়ে বসতে পারেন আর মাথায় দিতে পারেন।’ রসূলুল্লাহ বললেন: ‘এইসব ছবির নির্মাতাদেরকে শাস্তি দেয়া হবে এবং তাদেরকে বলা হবে, ‘তোমাদের সৃষ্টিতে প্রাণ সঞ্চার কর।’ অতঃপর তিনি বললেন, ‘যে ঘরে ছবি থাকে সেখানে ফেরেশতা প্রবেশ করে না।’ ‘ইমরান ইবন হিত্তান হতে বর্ণিত, ‘আয়েশা রা, তার কাছে হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, রসূলুল্লাহ তাঁর ঘরে ক্রুশ চিহ্নিত কোন বস্তু ধ্বংস না করে রাখতেন না।
প্রাণীর ছবি ও ভাস্কর্য নির্মাণকারীর পরকালীন শাস্তির উল্লেখ সম্বলিত হাদীসগুলো সিহাহ সিত্তাসহ অনেক হাদীস গ্রন্থে উল্লেখিত হয়েছে। কেবল সহীহ আল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে কমপক্ষে ২০টি স্থানে এ-সংক্রান্ত বর্ণনা পাওয়া যায়। ছয়জন বিশিষ্ট সাহাবী [ইবন ‘উমর, ‘আয়েশা, ইবন আব্বাস, আবু হুরায়রা, আনাস ও আবদুল্লাহ ইবন মাস‘উদ রা.] হতে হাদীসগুলো বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং এ সংক্রান্ত হাদীসের বিশুদ্ধতা সন্দেহাতীত। এ পর্যন্ত উল্লেখিত হাদীসসমূহে চিত্রাঙ্কন ও ভাস্কর্য নির্মাণ বিষয়ে বেশ কিছু বিধান পাওয়া যায়। ইমাম নবববী (৬৭৬/১২৭৭) অনুসরণে আমরা তা উল্লেখ করছি:
‘আমাদের ইমাম ও অন্যান্য ‘আলেমগণ বলেন, প্রাণীর চিত্রাঙ্কন বা ভাস্কর্য নির্মাণ কঠিনতম হারাম, কবীরা গোনাহের অন্তর্ভুক্ত। কারণ হাদীসসমূহে উল্লেখিত কঠিন হুমকি দ্বারা ভীতি প্রদর্শিত। হীন কাজে ব্যবহার করার জন্য তৈরী করুক বা অন্য কোন কারণে তৈরী করুকÑপ্রাণীর ছবি তৈরী সর্বাবস্থায় হারাম। কারণ এটি সৃষ্টিকর্মে আল্লাহর সমকক্ষতা অর্জনের নামান্তর। কাপড়ে, বিছানায়, মুদ্রায়, পাত্রে বা প্রাচীরে যেখানেই অঙ্কন করুক না কেন, তা হারাম। আর ছবিযুক্ত কোন কিছু যদি প্রাচীর বা দেয়ালে ঝুলানো থাকে, কিংবা তা যদি হয় পরিধেয় বস্ত্র বা পাগড়ী বা অন্য কিছু Ñযা তুচ্ছ ব্যবহার বলে পরিগণিত নয়Ñ তাহলে সে ধরণের ব্যবহার ও হারাম।’ ৬ষ্ঠ হাদীস থেকে জানা যাচ্ছে যে, জড় পদার্থের ছবি অঙ্কন ও ব্যবহার হারাম হতে পারে যদি তা অন্য ধর্মের চিহ্ন বা উপাসনার বস্তু হয়।
ইবন হাজার বলেন, প্রাণীর ছবি অঙ্কন ও ব্যবহার হারাম হওয়ার ক্ষেত্রে যার স্বতন্ত্র ছায়া আছে অর্থাৎ ভাস্কর্য এবং যার স্বতন্ত্র ছায়া নেই অর্থাৎ চিত্রকর্ম সবই সমান। মোদ্দাকথা প্রাণীর ছবি অঙ্কন কিংবা ভাস্কর্য নির্মাণ এবং এগুলোর সম্মানজনক ব্যবহার হারাম। এটি চার ইমামসহ পূর্বসূরি আলেমগণের ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের অভিমত। তাঁদের এ অভিমত মনগড়া নয়; উপর্যুক্ত হাদীসগুলোতে আমরা তাঁদের অভিমতের প্রতিধ্বনি দেখতে পেয়েছি।
এখানে ভিন্ন একটি বিষয়ে পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই; অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে, প্রাণীর ছবি অঙ্কন কিংবা ভাস্কার্য নির্মাণ এমন কি অপরাধ যে এর জন্য আখেরাতে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে? হাদীসের আলোকে আমরা এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করব।
২য় হাদীস থেকে জানা যাচ্ছে যে, চিত্রকর বা ভাস্কর কিয়ামত দিবসে কঠিনতম শাস্তি ভোগ করবে। এহেন কঠোর শাস্তির ঘোষণা কাফেরদের জন্য প্রযোজ্য হয়। যেমন, ফিরআউনের অনুসারীদের ক্ষেত্রে কঠিনতম শাস্তির ঘোষণা দেয়া হয়েছে।১৭ ফিলআউন ছিল খোদাদ্রোহী শাসক যে নিজেকে খোদা দাবী করত। প্রশ্ন হল ভাস্কর্য নির্মাণে কি চুরি, ব্যভিচার কিংবা হত্যার চাইতে মারাত্নক কিংবা এগুলোর সমপর্যায়ের অপরাধ? এটা এমন কি অপরাধের কাজ যে তার জন্য ফিরআউনের অনুসারীদের মত শাস্তি দেয়া হবে? এ প্রশ্নের জবাবে ‘আলেমগণ বিভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন:
আলÑতাবারী বলেন, যেসব দেবÑদেবীর পূজা করা হয় কেউ যদি জেনেশুনে তাদের প্রতিকৃতি নির্মাণ করে তাহলে সে মুসলমান থাকলে পারে না। ফলে সে ফিরআউনের অনুসারীদের ন্যায় কঠিনতম শাস্তির মুখোমুখি হবে। অবশ্য কেউ যদি দেবÑদেবী ছাড়া অন্য কোন প্রাণীর ভাস্কর্য নির্মাণ করে তবে সেও গোনাহগার হবে এবং শাস্তিপ্রাপ্ত হবে। কেউ কেউ বলেন, কোন ব্যক্তি যদি আল্লাহর সাথে পাল্লা দেয়ার উদ্দেশ্যে ছবি/প্রতিকৃতি নির্মাতারা তুলনামুলক কম শাস্তি ভোগ করবে।
এসব ব্যাখ্যার পরও প্রশ্ন থেকে যায়: যে ব্যক্তি পূজাÑঅর্চনার উদ্দেশ্য ছাড়া কিংবা সৃষ্টিকর্মে আল্লাহর সমকক্ষ হওয়ার ইচ্ছা ছাড়া নিছক শিল্প চর্চার জন্য প্রাণীর ছবি/ভাস্কর্য নির্মাণ করে সেও কি গোনাহগার হবে? আখেরাতে শাস্তিপ্রাপ্ত হবে? হাদীসের বক্তব্যসূত্রে বলা যায়, হাঁ, সেও গোনাহগার হবে। ইরাক হতে যে লোকটি ইবন আব্বাসের কাছে এসেছিলেন তিনি মুসলিম ছিলেন; তিনি নিশ্চয় মূর্তি নির্মাণ করতেন না কিংবা সৃষ্টিকর্মে আল্লাহর সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হওয়ার মানসে ছবি আঁকতেন না, তবুও ইবন আব্বাস তাকে চিত্রকরের শাস্তি বিষয়ক রসূলুল্লাহর (স.) বাণী শুনিয়ে দেন। মারওয়ান ইবন আল-হাকাম মুসলিম শাসক ছিলেন। তার বাড়ীর সিলিং Ñএ তিনি নিশ্চয় দেবÑদেবীর ছবি অঙ্কন করেননি, তবুও আবু হুরায়রা তা প্রত্যাখ্যান করেন। এতে প্রমাণিত হয় সৃষ্টিকর্মে আল্লাহর সাথে পাল্লা দেয়ার উদ্দেশ্য না থাকলে কিংবা পূজাÑঅর্চনার নিয়ত না থাকলেও প্রাণীর ছবি অঙ্কন বা ভাস্কর্য নির্মাণ হারাম। (অসমাপ্ত)