স্টাফ রিপোর্টার :
পাসপোর্ট অফিস ঘিরে ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে দালালরা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে সিন্ডিকেট তৈরি করেছে- দুদক অভিযোগ কেন্দ্রে আসা এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত বুধবার একযোগে সিলেটসহ দেশের ৭টি জেলার পাসপোর্ট অফিসে আকস্মিক অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের মহাপরিচালক মোহাম্মাদ মুনীর চৌধুরীর নির্দেশে ৭টি শক্তিশালী এনফোর্সমেন্ট টিম গঠন করে সিলেট, দিনাজপুর, বরিশাল, কুমিল্লা, টাঙ্গাইল, মেহেরপুর ও মুন্সিগঞ্জ জেলায় এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
সিলেট পাসপোর্ট অফিসে অভিযানে দেখা যায়, বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সি পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশ করে দালাল চক্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে। অভিযানকালে মেহেরপুর, মুন্সিগঞ্জ, কুমিল্লা এবং দিনাজপুরে মোট ৪ জন দালালকে হাতেনাতে গ্রেফতার করে দুদক টিম। দালালদের সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছে সোপর্দ করা হয়। পরে ভ্রাম্যমান আদালতে তাদের জরিমানা ও বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডাদেশ দেয়া হয়।
অভিযান চলাকালে বরিশাল পাসপোর্ট অফিসে অভিনব চিত্র দেখা যায়। দালালদের বিরুদ্ধে যাদের অভিযানে থাকার কথা, সেই পুলিশ সদস্যরাই দালালিতে সম্পৃক্ত। তারা নিজেরাই সেজে গ্রাহকদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করছে পাসপোর্ট করিয়ে দেওয়ার কথা বলে। আর পুলিশ নিজে এই কাজ করে বলে প্রতিকার পাওয়ার কোনো সুযোগই ছিল না ভুক্তভোগীদের।
অভিযান চলাকালে পাসপোর্ট করতে আসা লোকজন অভিযোগ করে, সাধারণ পাসপোর্টের মূল ফির অতিরিক্ত দেড় হাজার টাকা এবং এবং জরুরি পাসপোর্টের ক্ষেত্রে চার হাজার টাকা। কিন্তু ঘুষ না দিলে ইচ্ছা করে নানা ঝামেলা করে অফিস। আর দালাল ধরলে তার সমাধান হয়।
সিলেট পাসপোর্ট অফিসে দেখা যায়, বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সি পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তার সাথে যোগযোগ করে দালাল চক্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে।
মুন্সিগঞ্জে দেখা যায়, দপ্তরের সহকারী পরিচালক হালিমা খাতুন গত এক মাস যাবত হাজিরা খাতা যাচাই করছেন না। কুমিল্লা পাসপোর্ট অফিসের চার জন কর্মকর্তাকে অনুপস্থিত পায় দুদক দল। এ বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।
এ অভিযান প্রসঙ্গে দুদকের মহাপরিচালক (প্রশাসন) মুনীর চৌধুরী বলেন, ‘পাসপোর্ট অফিসের দুর্নীতি ও হয়রানি বন্ধে দুদকের এই অভিযান। দুর্নীতির প্রমাণের ভিত্তিতে দুদক সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।’
এদিকে মুন্সীগঞ্জে অভিযান পরিচালনাকালে পরিলক্ষিত হয়- ওই দফতরের সহকারী পরিচালক হালিমা খাতুন গত এক মাস যাবত হাজিরা খাতা যাচাই করছেন না। এ ছাড়াও তার অফিসে সাধারণ পাসপোর্টের ক্ষেত্রে মূল ফি’র অতিরিক্ত ১৫০০ টাকা এবং জরুরি পাসপোর্টের ক্ষেত্রে ৪০০০ টাকা অতিরিক্ত ফি প্রদান করতে হয়। এ ঘুষ প্রদান না করলে ইচ্ছাকৃতভাবে পাসপোর্টে বিভিন্ন ধরনের ত্রুটির সৃষ্টি করা হচ্ছে।
টাঙ্গাইল পাসপোর্ট অফিসে দালালরা বিভিন্ন শ্রেণির গ্রাহকদের কাছ থেকে বিভিন্ন মাত্রায় ঘুষ আদায় করছেন বলে দুদক টিম প্রমাণ পায়। এ অফিসে ৫০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হচ্ছে। এদিকে বরিশাল পাসপোর্ট অফিসে পুলিশ সদস্যরা দালাল সেজে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা আদায় করছে বলে প্রমাণ পায় দুদক টিম। এ ছাড়াও কুমিল্লা পাসপোর্ট অফিসের চার কর্মকর্তাকে অনুপস্থিত পাওয়া যায়।
এ অভিযান প্রসঙ্গে দুদক এনফোর্সমেন্ট ইউনিটের প্রধান ও সংস্থাটির মহাপরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মাদ মুনীর চৌধুরী বলেন, পাসপোর্ট অফিসের দুর্নীতি ও হয়রানি বন্ধে দুদক এ অভিযান পরিচালনা করেছে। দুর্নীতির প্রমাণের ভিত্তিতে দুদক সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।