রাশিয়া-ইউক্রেন থেকে বাংলাদেশে আসে যেসব খাদ্যশস্য

6

কাজিরবাজার ডেস্ক :
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে খাদ্যশস্য আমদানি করে বাংলাদেশ। এর মধ্যে অন্যতম দুটি দেশ রাশিয়া ও ইউক্রেন। খাদ্যশস্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমদানি হয় গম। আরও আছে সরিষা, মসুর ডাল, মটরের ডাল ও তিসি দানা। দেশের বাজারে এসব পণ্যের কোনোটিরই সংকট এখনো তৈরি হয়নি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যদি কোনো সংকট তৈরি হয় সেটাও একমাস পর হতে পারে। আর বাংলাদেশ এসব পণ্য আমদানিতে শুধু এই দুটি দেশের ওপর নির্ভরশীল না। সহসাই তাই সংকট হওয়ার সুযোগ নেই। তবু আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার অজুহাত দেখিয়ে ব্যবসায়ীরা বেশি দামে বিক্রি করছেন পণ্য।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর চট্টগ্রামের বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে আমদানি করা মণপ্রতি গমের দাম বেড়েছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা। এছাড়া সরিষার দাম বেড়েছে মণপ্রতি ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা, মসুর ডাল ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, মটর ডাল মণপ্রতি ২০০ টাকা পর্যন্ত।
আমদানি-রপ্তানি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশ দুটি থেকে প্রায় একই রকম খাদ্যশস্য আমদানি করে বাংলাদেশ। খাদ্যশস্যের মধ্যে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে সবচেয়ে বেশি আমদানি করা হয় গম। এছাড়া আমদানির তালিকায় রয়েছে- সরিষা, রাইসরিষা, মসুর ডাল, তিসি দানা এবং মটরের ডাল। তবে এসব খাদ্যশস্য আমদানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ শুধু রাশিয়া ও ইউক্রেনের ওপর নির্ভরশীল না।
তবে দাম ও যোগানে যাতে প্রভাব না পড়ে, সেজন্য এখন থেকে বিকল্প দেশ থেকে আমদানির জন্য উদ্যোগী হতে আহ্বান জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।
সংশ্লিষ্ট দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর হয়ে রাশিয়া থেকে গম আমদানি করা হয় ১৪ লাখ ৯৮ হাজার ৩১৬ টন। এছাড়া দেশটি থেকে ৬৬ হাজার ৪৫৫ টন মটরের ডাল, ১৫ হাজার ৯১২ টন সরিষা, ৪৬২ টন তিসি দানা এবং ১২০ টন মসুর ডাল আসে। ২০২১ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রাশিয়া থেকে গম আসে তিন লাখ দুই হাজার ৮৩৩ টন, মটরের ডাল এক লাখ ৪৮ হাজার ৮৪৯ টন এবং সরিষা ৩২ হাজার ২২৫ টন।
অন্যদিকে ইউক্রেন থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর হয়ে গম আমদানি করা হয় ১১ লাখ ১২ হাজার ৬৫৬ টন, মটরের ডাল সাত হাজার ৪৬৩ টন, রাইসরিষা ৪৬ হাজার ৬৭৩ টন ও মসুর ডাল ৭৬৬ টন। ২০২১ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশটি থেকে গম আসে ছয় লাখ ৪৪ হাজার ৫৮৭ টন, মটরের ডাল এক হাজার ৪২৭ টন এবং রাইসরিষা ৯০৮ টন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে সংঘাতময় পরিস্থিতির স্থায়িত্ব সম্পর্কে এখনো স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাচ্ছে না। ইউক্রেনে আক্রমণের আগে থেকে জাহাজীকরণ হওয়া পণ্য বাংলাদেশের পথে রয়েছে।
বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের তথ্যমতে, রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে পণ্যবাহী জাহাজ বাংলাদেশে আসতে ২৫-৩০ দিন সময় লাগে। সেই হিসেবে অন্তত একমাস পরে এসব পণ্যের ক্ষেত্রে প্রথম ধাক্কাটা আসতে পারে। তাই বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য এখনই বিকল্প দেশ থেকে চাহিদা অনুযায়ী খাদ্যশস্য আমদানির চিন্তা করতে হবে। তবে রাশিয়া-ইউক্রেনের সংঘাত দীর্ঘমেয়াদি না হলে এসব খাদ্যশস্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে মত তাদের।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের ডেপুটি কমিশনার আবদুল হান্নান বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেনসহ অন্যান্য দেশ থেকে খাদ্যশস্য আমদানি এখনো স্বাভাবিক রয়েছে। তাছাড়া এখন পর্যন্ত চলতি বছর যথেষ্ট পরিমাণ খাদ্যশস্য আমদানি হয়েছে। দ্রুত খাদ্যশস্য সংকট তৈরি হবে বলে মনে করি না।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল হোসাইন বলেন, ‘খাদ্যশস্যের ক্ষেত্রে আমরা একেবারে রাশিয়া-ইউক্রেনের ওপর নির্ভরশীল, বিষয়টি তেমন নয়। এ দুটি দেশ থেকে যেসব খাদ্যশস্য আসে, সেগুলো বিকল্প দেশ থেকে আমদানি করা সম্ভব। আমার মনে হয় না কোনো সংকট তৈরি হবে। তবে ব্যবসায়ীদের আতঙ্কের কারণে সংকট তৈরি হতে পারে। সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও ব্যবসায়ীরা সচেতন হলে এসব পণ্যের দাম এবং যোগান কোনোটির সংকট তৈরি হবে না।’
এদিকে, বুধবার (২ মার্চ) দেশের বৃহত্তম পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে মণপ্রতি গম বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ২৮০ থেকে এক হাজার ৩০০ টাকা, সরিষা প্রকারভেদে তিন হাজার ৩০০ থেকে তিন হাজার ৭০০, মসুর ডাল এক হাজার ৮০০ থেকে এক হাজার ৮৪০, মটর ডাল এক হাজার ৮৮০ থেকে এক হাজার ৯২০ টাকা।
এক সপ্তাহ আগে একই বাজারে গমের দাম ছিল মণপ্রতি এক হাজার ১২০ থেকে এক হাজার ১৩০ টাকা, সরিষা প্রকারভেদে দুই হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার ৬০০, মসুর ডাল এক হাজার ৬০০ থেকে এক হাজার ৬৪০, মটর ডাল এক হাজার ৬৮০ থেকে এক হাজার ৭২০ টাকা।
সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ ব্যবসায়ী আড়তদার কল্যাণ সমিতির সাবেক সভাপতি সোলায়মান বাদশা বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়েছে। তাছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সরবরাহ কমতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সবমিলিয়ে দাম বেড়ে গেছে। তবে আমরা চেষ্টা করছি, রমজানের আগে যেন দাম আর না বাড়ে। এটা ব্যবসায়ীদেরও বলছি।’
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়া। টানা কয়েকদিন ধরেই দুই পক্ষের মধ্যে চলছে লড়াই। এরই মধ্যে বেলারুশে শান্তি সংলাপে বসেছিল রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধি দল। তাদের প্রথম দফা আলোচনা শেষ হয়েছে। তবে কোনো সমাধান না আসায় দ্বিতীয় দফা বৈঠকে সম্মত হয়েছে দুপক্ষই।
অন্যদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও পশ্চিমাদের একের পর এক নিষেধাজ্ঞার ধাক্কা আঁচ করতে পারছে রাশিয়াও। বৈশ্বিক ব্যাংকিং পেমেন্ট সিস্টেম সুইফট থেকে বাদ পড়ার পরপরই দেশটির মুদ্রা রুবলের রেকর্ড দরপতন হয়েছে।