জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংক্রান্ত যে একগুচ্ছ লক্ষ্যমাত্রা প্রণয়ন করেছে, তা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা, সংক্ষেপে এসডিজি নামে পরিচিত। এর মেয়াদ ২০১৬ থেকে ২০৩০ সাল। এতে মোট ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা ও ১৬৯টি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য রয়েছে। জাতিসংঘের ঘোষণায় বলা হয়েছে, এসডিজি অর্জনের মাধ্যমে দেশের অতি দরিদ্র্যের সংখ্যা ৩ শতাংশের নিচে নেমে আসবে। বাংলাদেশ ২০১৫ সালে এসডিজি অর্জনে কাজ শুরু করে। প্রথম মেয়াদের কাজ শেষে ২০১৮ থেকে শুরু হয়েছে মধ্য মেয়াদের কাজ। চলবে ২০২০ সাল পর্যন্ত। ২০২০ থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত চলবে দীর্ঘ মেয়াদের কাজ। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেম প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজি অর্জনে বড় বাধা হবে কর্মসংস্থান ও শ্রমবাজার। ওই প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জন করতে হলে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান করতে হবে। অগ্রাধিকার দিতে হবে নারী শ্রমিকদের কর্মসংস্থানে। একই সঙ্গে যুব কর্মসংস্থান ও শ্রম উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির বিষয়ে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। তবে তা অর্জন কঠিন নয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ যে ইশতেহার প্রকাশ করেছে, তা বাস্তবায়িত হলে এসডিজি অর্জন কঠিন হবে বলে মনে হয় না। আওয়ামী লীগের ইশতেহারে যুবকদের কর্মসংস্থানের বিষয়টি অগ্রাধিকার পেয়েছে। ইশতেহারে বলা হয়েছে, একটি সুচিন্তিত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে জাতীয় যুবনীতি পুরোপুরিভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। তরুণদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি পর্যায়ক্রমে দেশের প্রতিটি উপজেলায় প্রসারিত করা হবে। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর বিষয়ে মেধা ও দক্ষতা বিবেচনায় রেখে বাস্তবতার নিরিখে যুক্তিসংগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রতিটি উপজেলায় ‘যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ স্থাপন করা হবে। বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি এই কেন্দ্রগুলোকে পর্যায়ক্রমে ‘তরুণ কর্মসংস্থান কেন্দ্র’ হিসেবে গড়ে তোলা হবে। জাতীয় পর্যায়ে স্বল্প, মধ্যম ও উচ্চশিক্ষিত তরুণদের তথ্যসংবলিত একটি ইন্টিগ্রেটেড ডাটাবেইস তৈরি করা হবে। এর মাধ্যমে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের প্রয়োজন ও তরুণদের যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরির জন্য আবেদন করার আহ্বান জানাতে পারবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে ইশতেহারে। ২০২৩ সাল নাগাদ অতিরিক্ত এক কোটি ৫০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে বলেও উল্লেখ আছে ইশতেহারে। বলা হয়েছে, ওই সময়ে নতুনভাবে এক কোটি ১০ লাখ ৯০ হাজার মানুষ শ্রমশক্তিতে যুক্ত হবে। আগামী পাঁচ বছরে জিডিপি ১০ শতাংশে উন্নীত করা হবে—এমন স্বপ্ন দেখানো হচ্ছে।
নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন ও সঠিক কর্মপন্থা নির্ধারণ করতে পারলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সম্ভব। তরুণদের কর্মসংস্থান দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করবে, তাতে সন্দেহ নেই। কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা গেলে তার ফল ভোগ করবে দেশ ও জাতি।