ব্যাংকিং বিনিয়োগ বান্ধব হোক

52

দেশের অগ্রগতির ধারা টেকসই করতে প্রয়োজন প্রচুর বিনিয়োগ। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকিং খাতের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে ব্যাংকিং খাত সেখানে খুব বেশি অবদান রাখতে পারছে না। এর বড় কারণ ব্যাংকঋণের উচ্চ সুদহার। ১৫ শতাংশ বা এরও বেশি সুদে ঋণ নিয়ে লাভজনকভাবে ব্যবসা পরিচালনা প্রায় অসম্ভব। তাই ব্যবসায়ী-শিল্পোদ্যোক্তারা অনেক দিন ধরেই ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার দাবি করে আসছিলেন। কিন্তু কোনোভাবেই তা কমছিল না। অবশেষে ঋণের সুদ এক অঙ্কে নামিয়ে আনতে প্রধানমন্ত্রী কিছু নির্দেশনা দেন। সেই অনুযায়ী বাজেটে করপোরেট কর কমিয়ে আনা হয়। সরকারি প্রতিষ্ঠানের অর্থ বেসরকারি ব্যাংকে গচ্ছিত রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকে গচ্ছিত রাখা নগদ সংরক্ষণ অনুপাত কমিয়ে আনা হয়। এসবের ভিত্তিতে ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস বা বিএবি বলেছিল, ১ জুলাই থেকে সুদের হার এক অঙ্কে নামিয়ে আনা হবে। বাস্তবে তা হয়নি। কয়েকটি ব্যাংক সুদের হার এক অঙ্কে নামিয়ে আনলেও বেশির ভাগ বেসরকারি ব্যাংক তা করেনি। এ অবস্থায় অর্থমন্ত্রী বৃহস্পতিবার ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ বা এবিবির সঙ্গে বৈঠকে বসেন। বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের জানান, ৯ আগস্ট থেকে ঋণের সুদহার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশে নামিয়ে আনা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আমানতের সুদের হার হবে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ। অবশ্য ভোক্তাঋণ ও ক্রেডিট কার্ডের ঋণ এর বাইরে থাকবে।
ব্যাংকিং খাতে সুদের হার নিয়ে এক ধরনের নৈরাজ্য চলছিল। অনেক ব্যাংক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উপায়ে ঋণের ওপর ২৫ শতাংশ পর্যন্ত সুদ আদায় করত, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। ব্যাংকিং বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা মানসম্মত না হওয়ায় ব্যাংকগুলোর পরিচালন ব্যয় অনেক বেশি হয়ে যায়। সেই সঙ্গে মন্দ ঋণের ধাক্কা তো আছেই। তাই ব্যাংকগুলো আমানত ও ঋণের সুদের হারের পার্থক্য ক্রমাগতভাবে বাড়িয়েছে। কিন্তু এমন ব্যাংকঋণ দেশের বিনিয়োগকে উৎসাহিত করে না। তাঁদের মতে, সুদের হার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার এই উদ্যোগ অত্যন্ত সময়োপযোগী। অবিলম্বে সব ব্যাংকে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। ভোক্তাঋণ ও ক্রেডিট কার্ডের ঋণের সুদের হারেও পরিবর্তন আনতে হবে। বর্তমানে এ ক্ষেত্রে বিদ্যমান সুদের হার শুধু অযৌক্তিক নয়, অনৈতিকও।
অর্থমন্ত্রী একই সঙ্গে জানিয়েছেন, সরকারের সঞ্চয়পত্রের সুদহারও ৮ আগস্ট পর্যালোচনা করা হবে। অর্থাৎ তা কিছুটা কমিয়ে আনা হতে পারে। আর তা নিয়ে আমানতকারীরা, বিশেষ করে অবসর জীবনযাপনকারীরা এক ধরনের শঙ্কায় রয়েছেন। এই দিকটি বিশেষ বিবেচনায় রাখা যেতে পারে।
আমরা চাই, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত বিনিয়োগবান্ধব হোক।