সুনশান নীরবতা নগরীতে ॥ পথে পথে টহল আর তল্লাশি

87
নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে যানবাহন ও যাত্রীদের র‌্যাব এর তল্লাশি। ছবি- রেজা রুবেল

স্টাফ রিপোর্টার :
সব দলের অংশগ্রহণে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন-২০১৮ আগামীকাল রবিবার অনুষ্ঠিত হবে। ইতিমধ্যে ভোটগ্রহণের সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে নির্বাচন কমিশন। সিলেট বিভাগের ৪ জেলার ১৯টি আসনের মোট ভোটার সংখ্যা ৬৬ লাখ ২০ হাজার ৬০৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৩৩ লাখ ৩৬ হাজার ৪০৫ জন এবং নারী ভোটার ৩২ লাখ ৮৪ হাজার ২০১ জন।
১৯টি আসনে ২ হাজার ৮০২টি মোট কেন্দ্রে ভোট কক্ষ নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩ হাজার ৫৯৬টি। এর মধ্যে শুধুমাত্র মহানগরীতে ২৯৩টি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। আজ শনিবার ভোট কেন্দ্রগুলোতে ভোটের সরঞ্জামীদি পৌছে যাবে বলে জানান নির্বাচন কমিশন।
এদিকে নির্বাচন ঘিরে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে শুক্রবার সকাল ৮টায়। টানা ১৯ দিন বিরামহীনভাবে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে চষে বেরিয়েছেন প্রার্থীরা। এখন অপেক্ষা ভোটের। প্রার্থী ও ভোটারদের এই অপেক্ষা করতে হবে কয়েক ঘন্টা। কাল রবিবার সকাল ৮টা থেকে শুরু হবে ভোটগ্রহণ। কোনও বিরতি ছাড়া চলবে ওইদিন ৪টা পর্যন্ত। ওইদিন জনরায়ের ফলে গঠিত হবে আগামী ৫ বছরের জন্য নতুন সরকার। যদিও শুরু থেকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা প্রচারণা চালাতে পারছেন না বলে অভিযোগ করে আসছিলেন। মহা ধুম-ধামে ঢাক, ঢোল পিটিয়ে প্রচারণা করেন মহাজোটের প্রার্থীরা।
তফসিল ঘোষণার পর থেকেই নির্বাচনের মাঠে পুরোদমে সক্রিয় ছিলেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তার নেতৃত্বাধীন ১৪ দল ও মহাজোটের প্রার্থীরা। তবে নির্বাচনী প্রচারে বাধা সৃষ্টি, হামলা-ভাঙচুর, প্রার্থী ও সমর্থকদের পুলিশি হয়রানির অভিযোগ শুরু থেকেই ছিল বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দল ও ঐক্যফ্রন্টের।
নির্বাচন কমিশন থেকে জানানো হয়েছে, এরই মধ্যে ব্যালট পেপারসহ নির্বাচন সামগ্রী জেলায় জেলায় রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। আজ শনিবার ৪০ হাজারেরও বেশি ভোটকেন্দ্রে পৌঁছে যাবে সব সামগ্রী। শেষ মুহূর্তে ব্যালট পেপারে কোনো পরিবর্তন এলে তা ছাপিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে দেওয়ার জন্য হেলিকপ্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য, নির্বাহী ও বিচারিক হাকিম রয়েছেন নির্বাচনী এলাকায়।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলই অংশ নিচ্ছে। এক দশক পর ভোটের মাঠে মুখোমুখি হতে যাচ্ছে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। নির্বাচন কমিশন সূত্রে আরো জানা গেছে, ৪০টি উপজেলা, ১টি সিটি করপোরেশন, ১৯ পৌরসভা ও ৩৩৮টি ইউনিয়ন নিয়ে সিলেট বিভাগের ১৯টি সংসদীয় আসনের কেন্দ্রেগুলোতে ভোটগ্রহণের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন ৪৩ হাজার ২৪২ জন কর্মকর্তা। এরমধ্যে ২ হাজার ৮০৫ জন প্রিজাইডিং অফিসার, ১৩ হাজার ৪৭৯ সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও ২৬ হাজার ৯৫৮ জন পুলিং অফিসার।
শুক্রবারম নগরীর বিভিন্ন স্থান বিশেষ করে কোর্ট পয়েন্ট, জিন্দাবাজার ও চৌহাট্টা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শেষে নগরীজুড়ে বিরাজ করছে স্থবিরতা। অন্যদিনের তুলনায় যানবাহন চলাচল এবং মানুষের আনাগোনা কম। তফসিল ঘোষণার পর থেকেই নগরীর ছিলো দারুণ ব্যস্ত। নির্বাচনের প্রচার প্রচারণায় সরগরম ছিলো পুরো নগরী। মাইকিং আর মিছিল-পথসভায় মুখর ছিলো প্রতিটি অলিগলি। টানা বন্ধের কারণে উপজেলাগুলো থেকেও শহরে লোকজনের আনাগোনা বেড়ে ছিলো। শুক্রবার সকাল থেকেই হঠাৎ করেই নগরীতে নেমে আসে সুনশান নীরবতা। এদিকে গতকাল শুক্রবার সকাল থেকেই অন্যান্য দিনের তুলনায় নিরাপত্তা বাহিনীর টহল জোড়দার করা হয়েছে। র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবির পাশাপাশি রয়েছে সেনাবাহিনী। এর বাইরেও সাদা পোশাকে রয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। অপরদিকে নির্বাচন কমিশনের আইনানুযায়ী ভোটের আগের রাত থেকে টানা ২৪ ঘন্টা যানচলাচল বন্ধ থাকবে।
মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (গণমাধ্যম) জেদান আল মুসা বলেন, নিরাপত্তায় শুক্রবার থেকে প্রতিটি কেন্দ্রের বাইরে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ওয়ার্ডে ভ্রাম্যমাণ ও পুলিশি টহলের পাশাপাশি ৪/৫টি ওয়ার্ডে একটি করে স্ট্রাইকিং ফোর্স রয়েছে।
উল্লেখ্য, রিটার্নিং অফিসারের অনুমতি সাপেক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী, তাদের নির্বাচনী এজেন্ট, পরিচয় পত্রধারী দেশী, বিদেশী পর্যবেক্ষকদের ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা শিথিলযোগ্য। নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত পরিচয় পত্রধারী দেশী, বিদেশী সাংবাদিক, নির্বাচন কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য, নির্বাচনের বৈধ পরিদর্শক , এ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ডাক ও টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না।