প্রচার-প্রচারণা শেষ হচ্ছে আজ ॥ ১০ বছর পর মুখোমুখি আ’লীগ-বিএনপি, নতুন ভোটার প্রায় ১ কোটি ২৩ লাখ

34

কাজিরবাজার ডেস্ক :
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব ধরনের প্রচার ও সভা-সমাবেশ শেষ হচ্ছে আজ শুক্রবার। এদিন সকাল ৮টার পর থেকে কোনো প্রার্থী ও রাজনৈতিক দল প্রচার চালাতে পারবেন না। নির্বাচনী আইন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ (আরপিও) অনুযায়ী, ভোট গ্রহণের ৪৮ ঘণ্টা আগ থেকে প্রচার বন্ধ থাকার বিধান রয়েছে। আগামী ৩০ ডিসেম্বর সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ২৯৯ আসনে টানা ভোট গ্রহণ চলবে। এরপরই ফল প্রকাশ করা হবে। এ নির্বাচনে নতুন প্রায় ১ কোটি ২৩ লাখ ভোটার ভোট দেবেন। এদিকে ১০ বছর পর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মুখোমুখি হয়েছে।
এ ছাড়া নিবন্ধিত সব কটি (৩৯টি) রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছে। সব মিলিয়ে ১ হাজার ৮০০ বেশি প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে রাজনৈতিক দলের প্রার্থী প্রায় ১ হাজার ৭৫০ জন। বাকিরা স্বতন্ত্র প্রার্থী। নির্বাচনে বিপুলসংখ্যক রাজনৈতিক দল ও প্রার্থী অংশ নেওয়ায় এবার একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হতে যাচ্ছে। সর্বশেষ ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয়েছিল। তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বিএনপিসহ বেশির ভাগ দল বর্জন করেছিল। এবারের নির্বাচনে সব দল অংশ নেওয়ায় সারা দেশে নির্বাচনী আবহ বিরাজ করছে।
ইসির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে ১ জানুয়ারি বিকেল ৪টা পর্যন্ত যেকোনো ধরনের সভা, সমাবেশ ও মিছিল এবং শোভাযাত্রা করা যাবে না। এ সময় কোনো জোর প্রদর্শনও করা যাবে না। ওই কর্মকর্তা জানান, প্রচার শেষ হওয়ার সময়সীমা সম্পর্কে প্রচার করা হবে। যাতে রাজনৈতিক দল, প্রার্থী ও ভোটাররা সচেতন হতে পারেন। একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এ সময়সীমা-সংক্রান্ত বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। যাতে কেউ এ বিধান লঙ্ঘন করলে তার বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ম্যাজিস্ট্রেট ব্যবস্থা নিতে পারেন।
নির্বাচনে মাঠে সেনা, বিজিবি ও অন্য বাহিনী : ইসি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সারা দেশে সামরিক ও আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। গত ২৪ ডিসেম্বর থেকে দেশের ৩৮৯ উপজেলায় সেনা ও ১৮ জেলায় নৌবাহিনীর সদস্য মাঠে নেমেছেন। তারা ভোটের পর ২ জানুয়ারি পর্যন্ত মাঠে থাকবেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র অনুযায়ী, গত ২০ ডিসেম্বর থেকে বিজিবি ও কোস্টগার্ড মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন। গতকাল বুধবার সারা দেশে র‌্যাব ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন সদস্যরাও মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে নেমেছেন। তারা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের তত্ত্বাবধানে কাজ করছেন।
ইসি সূত্র জানিয়েছে, এবারের নির্বাচনে মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরের সাধারণ কেন্দ্রগুলোয় ১৪ থেকে ১৫ এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ১৫ থেকে ১৬ জন সদস্য মোতায়েন থাকবেন। মেট্রোপলিটন এলাকার কেন্দ্রগুলোয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ওই সংখ্যা থেকে একজন করে বেশি রাখা হবে। পার্বত্য এলাকা, দ্বীপাঞ্চল, হাওর এলাকার কেন্দ্রগুলোয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সংখ্যা আরো বেশি থাকবে। কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হবে ভোটের দুই দিন আগে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের চাহিদা ১৯৩৭, পেয়েছে ৬৭৬ জন : ইসি সূত্রে জানা গেছে, এবার নির্বাচনী আচরণবিধি প্রতিপালনে মাঠপর্যায়ে ১ হাজার ২০০ ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছেন। তবে সেনাবাহিনী, বিজিবি, কোস্টগার্ড, র‌্যাব ও পুলিশের মোবাইল ও স্ট্রাইকিং টিমের সঙ্গে একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট দেওয়ার জন্য অতিরিক্ত ১ হাজার ৯৩৭ জনের চাহিদা দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছিল ইসি। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৬৭৬ ম্যাজিস্ট্রেট দিয়েছে মন্ত্রণালয়।
ইসির কর্মকর্তারা জানান, চাহিদা অনুযায়ী ম্যাজিস্ট্রেট না থাকায় মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের একাধিক টিম একসঙ্গে টহল দেবে। একসঙ্গে তারা অ্যাকশনে যাবে। তিনি জানান, চাহিদা অনুযায়ী ম্যাজিস্ট্রেট পাওয়া গেলে প্রতিটি দল আলাদাভাবে অ্যাকশনে যেতে পারত।